স্বাধীনতার ৪৯বছর পরও সোনাগাজীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে রঞ্জিত ক্যাম্পটি সংরক্ষণ করা হয়নি

সৈয়দ মনির আহমদ/গাজী মো. হানিফ, সোনাগাজী:
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ফেনী মহকুমার সোনাগাজীর থানার সকল শ্রেনীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম আশ্রয়স্থল ছিলো আমিরাবাদ ইউনিয়নের ডিবি রোড়স্থ আবদুর রশিদ মেম্বার বাড়ী। মুক্তিযোদ্ধারা এ বাড়ীতে বসেই হানাদার বাহিনীর উপর হামলার চক করতেন । ধীরে ধীরে এ বাড়ীর আশপাশের বাড়ী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি বাসভবনে অবস্থান নেয় মুক্তিযোদ্ধারা।

১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট সোনাগাজী হাসপাতাল এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক-হানাদার বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ওই দিনগত রাতে ফেনী থেকে অতিরিক্ত সশস্ত্র বাহিনী এনে স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগীতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই বাসভবন ও রশিদ মেম্বার বাড়ীসহ অন্তত ৫০টি বাড়ী জ্বালিয়ে দেয় পাক-হানাদার বাহিনী সদস্যরা । ওইরাতে ক্যাম্পের দায়ীত্বে থাকা মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, মো. বদিউজ্জামান ও দুই নারীসহ ২৮জনকে হত্যা করে পাক-হানাদার বাহিনী সদস্যরা।

আবদুর রশিদ মেম্বার’র ভাতিজা মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হুদা বাংলারদর্পনকে বলেন, তৎকালিন আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আবদুর রশিদ মিয়া তাঁর নিজ বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উম্মুক্ত রেখেছিলেন। বাড়ীর পাশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি বাসভবনে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করতেন। এ বাড়ীতে অবস্থান করেছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল আবছার, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল কাইয়ুম,মো. শাহজাহান কমান্ডার, বিএলএফ’র ডেপুটি কমান্ডার মোশারফ হোসেন, মাস্টার আবুল কালাম, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন ও মো. বদিউজ্জামানসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা।

খবর পেয়ে ২৯ আগস্ট রাতে স্থানীয় রাজাকার আবদুস সোবহান মেম্বার , আবদুস সোবহান মৌলভী, শহীদুল্লাহ ও আবদুল্লাহসহ পাক-হানাদার বাহিনী সদস্যরা এ গ্রামে হামলা চালায় । ওইরাতে বাদামতলি গ্রামের রশিদ মেম্বার বাড়ী, রশিদ সরকার বাড়ী, চৌকিদার বাড়ী, আবদুল মান্নানের বাড়ী, বলি বাড়ী, মাতব্বর বাড়ীসহ অন্তত ৫০টি বাড়ীতে তারা অগ্নি সংযোগ করেছিল। ওইসময় এসব বাড়ী থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সহযোগীদের হাত-পা বেঁধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই বাসভবনে নিয়ে যায় তারা ।

সারারাত নির্যাতন শেষে ভোরে গুলি করে মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, বদিউজ্জামান, জামিলা খাতুন, জোমিলা খাতুন, সৈয়দ আহম্মদ, মনির আহম্মদ, নুর ইসলাম, আবদুস শুক্কুরসহ ২৮জনকে হত্যা করা হয়। অনেকের লাশ ৩নং স্লুইজ গেইট দিয়ে নদীতে পেলে দেয় রাজাকাররা।

মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত বাদামতলি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাসভবন।

মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুল হকের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বাংলারদর্পনকে বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষন করা দরকার। এখানে স্মৃতিস্তম্ভ করা দরকার।

আমিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল আলম জহির বাংলারদর্পনকে বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই ক্যাম্পটি সংরক্ষণ করা উচিত। সরকারের সংশ্লিস্ট দপ্তর উদ্যোগ নিলে আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ সার্বিক সহযোগীতা করবে।

সোনাগাজী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম খুরশিদ আলম বাংলারদর্পনকে বলেন, স্বাধীনতার ৪৯বছর পরও সোনাগাজীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে রঞ্জিত এ ক্যাম্পটি সংরক্ষণ করা হয়নি। সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণ করছে সরকার। আমরা সোনাগাজীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই ২৮জন শহীদের স্মৃতি বিজড়িত এ ক্যাম্পের পরিত্যক্ত ভবনের স্থানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *