প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণার পরও উত্তাল ইরাক : ৮২ জন নিহত

নিউজ ডেস্কঃ

জ্বলছে ইরানের কনসুলেট। ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। সে দিকে তাকিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতার উল্লাস— ‘‘বেরোও, এখান থেকে বেরোও ইরান!’’

ঘটনাস্থল ইরাকের দক্ষিণের শহর নজাফ।ইরাকে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবর্ষণে ৮২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় শুক্রবার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদেল মাহদি। তার এই ঘোষণার পর বাগদাদের তাহরির স্কয়ারে সমবেত বিক্ষোভকারীরা আনন্দে ফেটে পড়েন। তবে এরপরেও তারা বিক্ষোভ থেকে সরে আসবে না বলে জানিয়েছেন।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী মাহদি পদত্যাগের ঘোষণার পর বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে বাগদাদের তাহরির স্কয়ারে সমাবেত বিক্ষোভকারীরা। এসময় অনেককে নেচে গেয়ে নিজেদের সাফল্য উদযাপন করতে দেখা যায়।

তবে বিক্ষোভকারীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তাদের মাত্র একটি দাবি পূরন হতে চলেছে। তারা দেশের গোটা রাজনৈতিক পদ্ধতির পরিবর্তন চান। ফলে সকল দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত সরকার বিরোধী আন্দোলন চালয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিক্ষোভকারীদের একাংশ।

এর আগে গত বুধবার রাতে রানের কন্স্যুলেট ভবন প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে অগ্নিসংযোগ করে দেশটির সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের হঠাতে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এতে এক বিক্ষোভকারী নিহত এবং আরো ৩৫ বিক্ষাভকারী নিহত হন। এ ঘটনার পর ওই শহরে কারফিউ জারি করা হয়।

এই ঘটনার প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার ইরাকের বাগদাদ, নাজাফ ও নাসারিয়াসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এতে কমপক্ষে ৮২ জন নিহত এবং আরো শত শত মানুষ আহত হয়। কেবল নাসারিয়া শহরেই আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৩৩ জন বিক্ষোভকারী।

< align: baseline;">এ ঘটনার জের ধরে তীব্র নিন্দার মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী মাহদি। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি পার্লামেন্টর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার অঙ্গীকার করেন, যাতে করে দেশের জন্য একটি নতুন সরকার গঠন করা সম্ভব হয়।তবে তিনি কবে নাগাদ পদত্যাগপত্র জমা দেবেন তার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ জানাননি। মাত্র এক বছরের কিছু সময় আগে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন মাহদি।

দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার কিছুদিন পরই তার পদত্যাগ দাবি করে বিবৃতি দিয়েছিলেন দেশটির শিয়া নেতা আয়াতুল্লাহ আলি আল সিস্তানি।

ইরাকে ২০০৩ সালে মার্কিন অভিযানের মুখে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর তিনিই হলেন প্রথম ইরাকি প্রধানমন্ত্রী যিনি মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করতে চলেছেন।

প্রসঙ্গত, ইরাকে গত পহেলা অক্টোবর থেকে সরকারের দুর্নীতি, অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব ও নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে বাগদাদসহ বিভিন্ন শহরের সড়কগুলোতে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভে এ পর্যন্ত কমপক্ষে সাড়ে ৪০০ জন নিহত এবং আরো হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে বলে জানা যায়। এসব হতাহতদের অধিকাংশই বিক্ষোভকারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *