নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর যেখানেই বিএনপির কর্মসূচি হয়েছে প্রায় অধিকাংশ কর্মসূচিতেই দেখা মিলতো রিজভীর। কখনও কাফনের কাপড়ে শরীর মুড়ে, কখনও আবার বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার ব্যানারে নিজেকে মুড়িয়ে কর্মসূচিতে হাজির হয়ে যেতেন তিনি। ‘বিএনপি পাগল’ নামেই তাকে চিনতো সবাই। নেতাদের অবহেলায় দল অন্তপ্রাণ সেই কর্মীকেই লাশ হতে হলো।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাত ১০টা ২০ মিনিটে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মৃত্যু হয় রিজভী হাওলাদারের। কোনো পদ-পদবি না থাকলেও দলের জন্য নিস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন। অথচ কোনো চিকিৎসা ছাড়া তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেন বিএনপির নেতারা।
জানা গেছে, অভুক্ত অবস্থায় বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন রিজভী। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা সে সময় কার্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে যাননি। বাধ্য হয়ে রিজভী একাই চিকিৎসার জন্য কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে যান। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যেতে বলা হয়। এরপর ঢামেক হয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কার্যালয়ের সামনেই রিকশা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় তার। বিএনপির অনেক কর্মীই এই মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিএনপি কর্মী বলেন, নেতাদের জন্যই মরতে হলো রিজভীকে। সময় মতো তাকে চিকিৎসা দেওয়া হলে অবশ্যই সে বাঁচতো। কিন্তু নেতারা সেটা করেননি। বরং রিজভীকে সবসময় তাচ্ছিল্য করা হতো। এখন তার মৃত্যুর পর নেতারা মায়া কান্না শুরু করেছেন। এর পুরোটাই অভিনয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত দেড়টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে তড়িঘড়ি করে রিজভীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। অনাদরেই তার লাশটা ফেলে রাখা হয়েছিল কার্যালয়ের সামনে। এরপর জানাজা শেষে রাতেই তার মরদেহ পটুয়াখালিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এটা নিয়েও ক্ষুব্ধ কর্মীরা। দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে যে কর্মীরা কাজ করেন তাদের যদি এভাবে মরতে হয়, তাহলে বিএনপি খুব শিগগিরই বিলীন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কর্মীরা।
উল্লেখ্য, রিজভী হাওলাদারের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ছোট্টকান্দা গ্রামে। তার বাবার নাম আজহার হাওলাদার। নারায়ণগঞ্জের কুতুবপুরে থাকতেন তিনি। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রায় প্রতিদিন ভোরে বিএনপি কার্যালয় এলাকায় আসতেন রিজভী হাওলাদার। সন্ধ্যার পর আবার নারায়ণগঞ্জ ফিরে যেতেন।