রোহিঙ্গাদের বিরোধিতা করায় আমাকে মানবতার দুশমন বলা হয়েছিল | বাংলারদর্পন

নান্টু লাল দাস :
অতীতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবৈধভাবে দফায় -দফায় এসেছে বলে শুনেছি । অবৈধভাবে এসে তারা বাংলাদেশে এখনো আছে। ওই সময় হয়তো আমার জম্ম হয়নি বা জম্ম হলেও শিশু ছিলাম। যা হোক, অতিতের রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলতে চাই না।

এরপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় ১২ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হওয়ার পর মায়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে “ক্লিয়ারেন্স অপারেশন” শুরু করে। ওই অপারেশনে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা নিহত হন, অনেকেই আহত, নির্যাতন এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক আইন তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসে।

কিন্তু ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা ইস্যুর বিষয়টি আমাকে দারুন ভাবে নাড়া দিয়েছে। দল ভেধে রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে আসতে শুরু করলো তখন পুরো দেশের মানুষ রোহিঙ্গাদেরকে “জাতি ভাই” দাবী করে তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং কি দেশের কুটনীতিক, বুদ্ধিজীবি, মিডিয়া, সরকারও রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এক কথায় পুরো বাংলাদেশটা রোহিঙ্গাদের পক্ষে দাড়িয়েছে ।

বিজ্ঞাপন > সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক- পদপ্রার্থী সৈয়দ দীন মোহাম্মদ।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে কক্সবাজারের উখিয়া -টেকনাফে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। সরকারি হিসেবে প্রায় ১১ লক্ষ নিবন্ধিত ধরা হলেও বাস্তবে ১৫ লক্ষের কম নই। ২০১৭ সালে আসা রোহিঙ্গারা ৩৪টি আশ্রয় শিবির স্থাপন করতে দখল করেছে কক্সবাজারে উখিয়া -টেকনাফের কুতুপালং, বালুখালী, বালুখালী ঢাল, ময়নারঘোনা, থাইংখালী তাজনিমার খোলা, হাকিমপাড়া, জামতলি বাঘঘোনা, শফিউল্লাাহ কাটা এবং টেকনাফের চাকমারকুল, উনচিপ্রাং, লেদা, মৌচনি, জাদিমুরা ও কেরানতলী এলাকাসহ বন বিভাগের গেজেটভুক্ত প্রায় ৬ হাজার ১৬০ একর বন ভূমি।
ওই সকল এলাকার স্থানিয়রা ৫ শতাংশ ছাড়া বাকী মানুষগুলো রোহিঙ্গাদের পক্ষে ছিল। তবে, দুই বছর পর ২০১৯ সালে কক্সবাজারের উখিয়া -টেকনাফসহ যে সব এলাকা রোহিঙ্গারা দখল করেছে সেসব এলাকার জনগণের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার স্থানিয়রাই রোহিঙ্গা (ভাসমান), আর রোহিঙ্গারা স্থানিয় জমিদার।

অন্যদিকে মনে হচ্ছে পুরোদেশের মধ্যে একমাত্র নাগরিক বা সাংবাদকর্মী হিসেবে আমি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ছিলাম। দেশের বড় -বড় মিডিয়া, জনগণ, সরকারসহ সবাই রোহিঙ্গাদের পক্ষে আর আমি ছিলাম রোহিঙ্গাদের বিপক্ষে । আসলেই আমি পাগল– ছাগল ! না কি মানবতাবিরোধী, নয়তোবা দেশদ্রোহী !

আমি জনগণ- সরকার বা বড় -বড় মিডিয়ার বিপরীতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এনএনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমে ( nanews24. com ) ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি পর্ব সংবাদ লিখেছিলাম। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ লিখে আমি নিজেই মহাবিপদে পড়েছি।

যা হোক, যখন আমি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে সংবাদ লিখেছি তখন মানবতার ফেরিওয়ালাখ্যাত জনগণ আমার উপর চরমভাবে ক্ষেপে গেল। জনগণ আমাকে মানবতাবিরোধী বলেই আখ্যায়িত করে হাজার -হাজার ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে । আমাকে -আমার জাত গোষ্ঠি ধরে গালমন্দ করেছিল ।ফেইসবুকের মাধ্যমে আমার গলায় দড়ি লাগিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। অপরিচিত লোকজনকে বাদই দিলাম। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমার ঘনিষ্ঠ লোকজনও আমাকে গালমন্দ করেছে এবং আমাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েছে।

আমি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংবাদ লিখার অপরাধে জনগণ আমার বিচার চেয়েছে, আমাকে গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছে এবং আমার ফাঁসিও চেয়েছে।

জনগণের” জাতি ভাই” রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার লাগিয়ে সাহায্য বা অনুদান তুলছে। জনগণের ঘুম হারাম, খাওয়া দাওয়া বন্ধ। অন্যদিকে মায়ানমারে রোহিঙ্গাদেরকে হত্যা করছে, ধর্ষণ করছে, জ্যান্ত পুড়িয়ে হত্যা করছে। এমন চিত্র দেখলে এমনিতে” জাতি ভাইদের” জন্য মায়া কান্না লাগার কথা। সে সময় উল্টো আমি রোহিঙ্গা বিরোধী। জনগণ আমার উপর ক্ষেপারও কথা, আমাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলানোর কথা!

এখন কি হল? মাত্র ২ বছরে দেশের জনগণ “জাতি ভাই” রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গেল কেন ? রোহিঙ্গারা তো এ দেশের জনগণের “জাতি ভাই”। জাতি ভাইদের জন্য মায়া কান্না বন্ধ হল কেন? জাতি ভাইদের কে তাড়াতে চাচ্ছে কেন ? এখন দেশের মানুষের মানবতা কোথায় গেল?

আমি রোহিঙ্গাদের নিয়ে ব্যাখা করতে চাই না। তাদের চরিত্র সম্পর্কে দেশের জনগণ -সরকার বুঝতে ফেরেছে। আমি হয়তো ২০১৭ সালে বুঝতে পারলেও দেশের জনগণ -সরকার ২০১৯ সালে বুঝেছে। অর্থাৎ দুই বছর পরে বুঝতে ফেরেছে “জাতি ভাই” রোহিঙ্গারা খুব খারাপ।

আমি আসলেই একজন সাধারণ নাগরিক বা সাংবাদকর্মী। আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি আমার খুবই সম্মান রয়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক আইন যতটুকু বুঝি রোহিঙ্গাদেরকে জায়গা দেয়া মানেই হলো আন্তর্জাতিক আইন বা দেশকে অশ্রদ্ধা করা। কারন, আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে অবৈধভাবে এক দেশের মানুষ অন্যদেশে যেতে পারবে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে মায়ানমার থেকে আমাদের দেশে প্রায় ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গা মানুষ এসেছে। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন কে বাংলাদেশের জনগণ -সরকার বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়েছে।

যদি, রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে বাংলাদেশে আসত তাহলে মানবতা দেখানো যেত। কিন্তু তারা আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে বাংলাদেশে আসার পর তাদের প্রতি কিসের মানবতা ?

যা হোক, বাংলাদেশ বর্তমানে মানবতার ফেরিওয়ালা। প্রায় ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গাকে পালন -পালন করছে। বিশ্বের কাছে অভিনন্দন পাচ্ছে। বাংলাদেশ মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে বিশ্বের কাছে বাহবা পাচ্ছে। সমস্যা কোথায় ? রোহিঙ্গাদেরকে তাড়াতে চাচ্ছে কেন সরকার ? জনগণ চুপ কেন ? রোহিঙ্গাদের পক্ষে প্রতিবাদ -সমাবেশ, দান -অনুদান তুলছে না কেন? মাইক লাগিয়ে সভা সমাবেশ করছে না কেন?

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের ইস্যুতে মিডিয়া প্রধান দায়ী। কারন, রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে তখন মিডিয়াগুলো নিরপেক্ষ বা রোহিঙ্গাদের বাস্তব চরিত্র তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করেনি। যার ফলে জনগণ – সরকার বুঝতে পারেনি যে, রোহিঙ্গাদের কি করতে হবে। জনগণ বা সরকার তখন যদি বুঝতে পারতো তা হলে রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে হয়তো প্রবেশ করতে দেয়া হত না।

এখন কেন মিডিয়াতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংবাদ লিখা হচ্ছে ? এখন লিখে কি লাভ ? বড়ই দুঃখের বিষয় হলো মিডিয়া একটি রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ। মেরুদণ্ড ও বলা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের মিডিয়া ব্যর্থ বলে আমি মনে করি। কারন, মিডিয়াতে যদি রোহিঙ্গাদের বাস্তব চরিত্র নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হত তা হলে দেশের জনগণ – সরকার রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান করতো না বলে আমি মনে করি।

যা হোক, আমি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ওই সময় (২০১৭ সালে) সংবাদ প্রকাশ করে অপরাধ করিনি। আমার মত সবাই সংবাদ করলে রোহিঙ্গারা এখন আমাদের গলার কাটাঁ হতোনা।

আমি মানবতা বিরোধী না, আমি দেশ প্রেমিক। আমি দেশদ্রোহী না, আমি দেশ প্রেমিক। যারা রোহিঙ্গাদের পক্ষে ছিল তারাই দেশদ্রোহী, তারাই আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়।

আমার এখন ২০১৭ সালের কথা পরিষ্কার ভাবে মনে আছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আমার দেশের জনগণ আমার বিরুদ্ধে লেগে ছিল। আমার দেশের জনগণের কাছে রোহিঙ্গারা ছিল আপন, আমি ছিলাম পর। মনে হয় দেশের জনগণের কাছে আমি রোহিঙ্গা।

লেখক :
নান্টু লাল দাস
স্টাফ রিপোর্টার
Daily Industry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *