ফেনী প্রতিনিধি :
সোনাগাজীর শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারের খুঁটির জোর কোথায় ? সোনাগাজী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ শিক্ষকদের। শিক্ষকেরা তাকে দুর্নীতির বরপুত্র হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন, একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় স্বদেশপত্র ও শমসের নগর পত্রিকায়,ও আরো ভিবিন্ন গণমাধ্যমে তাঁর অনিয়ম ও দুর্নীতির বহু সংবাদ প্রকাশিত হলেও এখনো বহাল তবিয়তে আছেন হিটলার। অভিযোগ গুলোর সত্যতাও পেয়েছে তাঁর দুর্নীতি তদন্তে গঠিত কমিটি। তাঁকে অন্যত্র বদলিসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত কমটির প্রতিবেদনে। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তাঁর দুর্নীতির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো পদক্ষেপই চোখে পড়ছে না। অন্যদিকে সোনাগাজী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামান নির্বিঘ্নে করে যাচ্ছেন একের পর এক অপকর্ম।
তাঁর চাঁদাবাজিতে এখন অতিষ্ঠ সোনাগাজীর প্রাথমিক শিক্ষকরা। সোনাগাজীর বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও জেলা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে আছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণের তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ, প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য উপকরণ ক্রয়ের ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ, ছোটদের শেখ হাসিনা’ বইটি ৮০০ টাকার স্থলে এক হাজার টাকা দরে তাঁর অধীন স্কুল সমূহে বিক্রি করে বই প্রতি ২০০ টাকা হারে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ, চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত কর্মস্থলে অননুমোদিত অনুপস্থিতি, হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে চলে যাওয়া,
দাগনপাড়া মোশাররফ হোসেন ও বাংলাবাজার জয়নাল আবেদীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষকের কাছ থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা উৎকাচ গ্রহণ, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ৪৬ জন শিক্ষকের কাছ থেকে সার্ভিস বহি খোলার নামে দুই হাজার টাকা হারে ৯২ হাজার টাকা গ্রহণ, উন্নয়ন মেলার নামে উপজেলার ১০৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি থেকে ৫০০-১০০০ টাকা করে আদায়, চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে আদায়, উপজেলা পরিষদ থেকে পাওয়া চেয়ার, টেবিল, ফাইল কেবিনেট নিজের বাসায় ব্যবহার করা, অভ্যন্তরীণ মডেল টেস্ট গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা হারে প্রায় দুই লাখ টাকা আদায়, শিক্ষক বদলির নামে বাণিজ্য, ১০৯টি বিদ্যালয় থেকে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত স্লিপের অর্থ আদায় ইত্যাদি।
সূত্র জানায়, জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজ আহাম্মদ ও একই অফিসের সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলমের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি উপজেলার প্রায় অর্ধশত ভুক্তভোগী প্রাথমিক শিক্ষকের লিখিত বয়ান সংগ্রহ করে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উপকরণ ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ অর্থও গিলে ফেলেছেন হিটলারুজ্জামান। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উপজেলার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য হুইলচেয়ারসহ নানা উপকরণ ক্রয়ের ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হলেও হিটলারুজ্জামান আজ পর্যন্ত কোনো উপকরণ ক্রয় বা সরবরাহ করেননি বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গত ২১ মে উপপরিচালকের কার্যালয়, চট্টগ্রাম ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করা হয়। এরপর গত ১৯ জুন চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উপপরিচালক সুলতান মিয়া ফেনী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে দেওয়া পত্রে বলেন, ‘সম্প্রতি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রতীয়মান হয়, হিটলারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বেশির ভাগই সঠিক।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফেনী-৩ আসনের এমপি মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও ফেনী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজ আহাম্মদ চৌধুরী হিটলারুজ্জামানকে অন্যত্র বদলি করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী বরাবর ডিও লেটার পাঠিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, তাঁর অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে সাধারণ শিক্ষকরা অতিষ্ঠ। তাঁর খুঁটির জোর কোথায় বুঝতে পারছি না। তদন্ত কমিটির সদস্য, জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন,আমরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে হিটলারুজ্জামানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের তদন্ত করি ও সত্যতা পাই।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল ইসলামও হিটলারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তদন্তে সত্যতা মিলেছে বলে স্বীকার করেন। তিনি জানান, এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লেখালেখি চলছে। বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুলতান মিয়া বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রচুর। এ সবের তদন্তে সত্যতাও পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ওপরে লেখা হয়েছে। আশা করি কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হিটলারুজ্জামান বলেন,স্থানীয় শিক্ষকদের একটি অংশ আরো আগে থেকে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। একজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের ইন্ধনে তাঁরা এসব করছেন। এসব সত্য নয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আপনার অনিয়ম, দুর্নীতি বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলেও প্রতিবাদ করেননি কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে কয়েক দিন অসুস্থ ছিলাম। তাই প্রতিবাদ দিতে পারিনি। এখন আপনাদের মাধ্যমে প্রতিবাদ করব।