প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছাত্রলীগ নেতা রনি চৌধুরীর খোলা চিঠি | বাংলারদর্পন

শ্রদ্বেয়,

প্রিয় আপা,

(আসসালামু আলাইকুম)

আপা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি বৃহৎ পরিবার। যে পরিবারের প্রত্যকটি সদস্য একে অন্যের বিপদের সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে, যে কোনো প্রয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। অতীতের ইতিহাস তাই হয়েছে। অতীতের ইতিহাস তাই সাক্ষী দেয়। না-হলে কতবার যে আমাদের পরাজয় হত! আমরা আহত ভাইটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাজপথে চিৎকার করতে দেখেছি, দূরে দুরত্বে সকলেই প্রতিবাদ করেছি কিন্ত ফেলে যাইনি। আমরা ভাইদের লাশ কাঁধে নিয়ে মিছিল করতে দেখেছি, তবুও রক্ত চক্ষু ভয় পায় নাই। আমার ভাই আমার রক্ত আমার বোন আমার সাহস।

 

কিন্তু- আপা পরিতাপের বিষয় আজ সেই পরিবারের সদস্য প্রতিহিংসার পরিবেশে দলে দলে বিভক্ত। আজ সেই পরিবারের সদস্য একে অন্যের রক্ত ঝরাতে ব্যস্ত। অনেক ঘটনা ওপেন সিক্রেট। কারো মধ্যে সহমর্মিতার ছোঁয়া নয় বরং প্রতিহিংসার খড়গ। সবার মেলবন্ধনে যে পরিবার গড়ে উঠেছিল সেই পরিবার আজ দুই একজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। আজ বোনের রক্ত ভাইয়ের হাতে। আজ ভাই ভাইয়ের শত্রু। এমনটা তো চাইনি, এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না।

 

 

আপা, আপনি জানেন একটা কমিটি ২১/৪১/৭১/১২১/৩০১ বা বিভিন্ন সংখ্যায় সীমাবদ্ধতা পায়। অনেক লক্ষ কোটি ত্যাগী কর্মীরা সেখানে স্থান পায় না। ছাত্রলীগের নেতারা অংকের সীমাবদ্ধতা করা গেলেও কর্মীদের সংখ্যা আজও কোন অংকে গুণা যাবে না। যারা স্থান পায়নি তারা প্রতিবাদ করে, অনেকেই বিদ্রোহ বিক্ষোভ করে, অনেকেই নিরবে নিভৃতে কেঁদে মরেন। কিন্তু তাই বলে তারা বখে যায়নি। তারাও রক্তাক্ত হয়েছিল রাজপথে । দলকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে ও রাখতে যার যার অবস্থান হতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন আমরা দূর থেকে নিরবে নিভৃতে কেঁদেছি আর দেখেছি। সে কি ভয়ংকর দৃশ্য। ঘুমাতে পারি নাই আপা অনেকেই, কয়েক রাত নয় অনেকেই সারা জীবনও ঘুমাতে পারেন নাই। আপা জানেন, পরিশ্রমের সংগঠনে মূলহীন ভেসে আসা মানুষের স্থান হয় কিন্তু সংগঠন করা ছেলেটা ব্যক্তি স্বার্থে ছিটকে পড়ে! কিন্তু কেন ?

 

আমাদের দাবি তেমন কিছু ছিলনা এবং নেই শুধু ত্যাগীদের দাবি তুলতে চাই। কিন্তু না, উল্টো তাদেরই তার প্রতিদান দিতে হয়। সমগ্র মানুষ যখন ঘুমে অচেতন তখন আবারও আমাদের বোনগুলোকে ওরা বেধড়ক মেরেছিলো ভাইয়েরা রক্তাক্ত হয়েছিল। আমরা ভূলিনি; সবার সামনে অপমান লাঞ্চিত করেছে অনেকেই!

 

আপা কষ্ট হচ্ছে। অনেক কষ্ট হচ্ছে। আপা আপনিই তো আমাদের সব। আপনিই তো আমাদের অভিভাবক, আমাদের পিতা-মাতা। আপনার কাছে আশ্রয় চাওয়া ছাড়া আর কোথায় যাবো ? আপনাকে ছাড়া কার কাছে গেলে তারা পাবে তাদের ন্যায্য অধিকার?

 

আপা, ছোট ছোট বাচ্চারা আপনাকে আনন্দ নিয়ে চিঠি লেখে। গণমাধ্যমে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখি, আপনি সেইসব চিঠির উত্তরও দেন। একজন প্রধানমন্ত্রী কত সাদাসিধে এসব দেখে কি-যে আনন্দ লাগে চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করে। আপা আপনাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। আমাদেরও ইচ্ছে জাগে একদিন আপনাকে চিঠি দিব। যে চিঠিতে আপনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাব। এই যে, সব কিছু তুচ্ছ করে দিন রাত পরিশ্রম করে দেশটাক গড়ে তুলছেন তার জন্য ধন্যবাদ জানাব। কিন্তু আর লেখা হয়ে ওঠে না। আরও আনন্দময় দিনে চিঠি লেখার জন্য অপেক্ষায় আছি। তবে কি আপা জানেন আজ আপনাকে চিঠি লিখছি ঠিকই, আনন্দ নিয়ে নয়। বুকের মধ্যে চাপা কষ্ট নিয়ে। বিশ্বাস করেন আপা, যখন লিখছি তখন টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। যখন লিখছি তখন অঝোরে কান্না পাচ্ছে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আপা, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।

 

আজ কর্মীরা নেতাদের কাছে অনেক অসহায় হয়ে গেল। অনলাইন বিভিন্ন ত্যাগীদের ফেইসবুকে আবেগের কষ্টের লিখা গুলো পড়ে মনের বোবা কান্না থেমে রাখতে পারেন না অনেকেই। আমরা বুঝেও অনেক সময় কিছু করার থাকে না; থাকে না সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা। ২০১৯ সাল নিয়ে আসছে ঈদুল ফিতরের ঈদ আনন্দ। কিন্তু তাও উপভোগ করতে পারে না অনেক ত্যাগী ছাত্রলীগের কর্মীরা। তারপরও ঐসকল ছাত্রলীগের ত্যাগী কর্মীদের পক্ষ থেকে অগ্রিম ঈদুল ফিতরের অগ্রিম শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও মুজিবিয় শুভেচ্ছা রইলো।

 

আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কোন অপশক্তি কিছুই করতে পারবেন না ইনশাআল্লাহ। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। জয় জয় ছাত্রলীগ।।

 

লেখক : জয়নুল আবেদীন চৌধুরী রনি, সাহিত্য সম্পাদক, ফেনী জেলা ছাত্রলীগ, ফেনী।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *