সাংবাদিক ইহসান ইবনে রেজার খুনি কারা, খুনের কারন কি ?

জামালপুর প্রতিনিধি :

জামালপুরে ট্রেন লাইনের পাশে নির্জন স্থানে সাংবাদিক ইহসান ইবনে রেজা ফাগুনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। কারা, কী উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করেছে এ নিয়ে পুলিশের একাধিক ইউনিট মাঠে নেমেছে। ফাগুনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন এবং গলা ফোলা থাকায় পুলিশের ধারণা, তাকে গলা টিপে হত্যা করে লাশ ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া হতে পারে। মাথায় আঘাতের কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে ধারণা করা হলেও গলা টিপে হত্যা করা হতে পারে এমন ধারণাও করছে পুলিশ।

 

তবে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে তার মৃত্যু হতে পারে এমন বিষয়ও উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার হবে। নিহতের পরিবারের দাবি, ঢাকার শান্তা কনস্ট্রাকশন নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে করা রিপোর্টের জের ধরে এর আগে ফাগুনকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল।

 


অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রিয় ডটকমের সহসম্পাদক ফাগুনের ঈদের পর জাগো নিউজে যোগদানের কথা ছিল। গত ২১ মে সকালে ঢাকায় জাগো নিউজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে চাকরি চ‚ড়ান্ত করেন তিনি।

 

ওই দিনই ট্রেনে করে গ্রামের বাড়ি শেরপুরে যাওয়ার পথে জামালপুরে মেলে তার লাশ। এ ঘটনায় ২৪ মে শুক্রবার জামালপুর থানায় নিহতের বাবা কাকন রেজা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। কাকন রেজা এনটিভির শেরপুর জেলা প্রতিনিধি। ফাগুনের বাড়ি শেরপুরে। রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন তিনি। কাকন রেজার দুই ছেলের মধ্যে ফাগুন ছিলেন বড়।


কাকন রেজা গতকাল রবিবার  জানান, প্রিয় ডটকমের ইংরেজি বিভাগে কাজ করতেন ফাগুন। মাঝে মধ্যে বাংলায়ও রিপোর্ট লিখতেন। তার দাবি, যে কোনো ঘটনার সূত্র ধরে ফাগুনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি জানান, জাগো নিউজে মঙ্গলবার সকালে সাক্ষাৎকার দিয়ে বিকেলে শেরপুরে ফিরছিলেন ফাগুন। বেলা ৪টার দিকে শেরপুরগামী একটি ট্রেনে ওঠেন তিনি। তখনো বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। রাত ৮টায় সর্বশেষ কথা হয়েছে। তখন তিনি বাবাকে জানান, ময়মনসিংহের কাছাকাছি আছেন। এরপরই ফাগুনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কোনোভাবেই ছেলের সন্ধান পাচ্ছিলেন না কাকন রেজা। পরদিন বুধবার সকালে তিনি ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন।

 

পুলিশ ফাগুনের মোবাইল ফোনের অবস্থান শনাক্ত করে দেখে সর্বশেষ তার অবস্থান ছিল ময়মনসিংহের একটি গ্রামে। বুধবার সন্ধ্যায় জামালপুরে অজ্ঞাত পরিচয় লাশের সন্ধান পাওয়ার কথা তিনি জানেন। কাকন রেজা জানান, প্রায় এক বছর আগে একটি প্রতিবেদনের জের ধরে ঢাকার শান্তা কনস্ট্রাকশন নামে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ফাগুনকে ‘ম্যানেজ’ করতে ব্যর্থ হয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। তারা ফাগুনকে নেপাল ভ্রমণের খরচ ও একটি আইফোন টেন কিনে দিতে চায়। কিন্তু ফাগুন সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি।


মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জামালপুর জিআরপি থানার এসআই রকিবুল হক গত রাতে জানান, ধারণা করা হচ্ছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে ঘটনাস্থলের আগেই অচেতন করে সর্বস্ব লুটেছে। পরে অচেতন ফাগুন ট্রেন থেকে নিচে পড়ে গেছে। তার দেহ জামালপুরের রানাগাছা মধ্যপাড়ায় ট্রেন লাইনের পাশে আড়াই থেকে তিন ফুট দূরে পড়েছিল। এ ঘটনায় রবিউল ইসলাম চান খাঁ (৩৫) নামে অজ্ঞান পার্টির এক সদস্যকে শনিবার আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। চান খাঁর মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে তদন্তে সহায়ক তথ্য মিলেনি। এসআই রকিবুল হক জানান, ফাগুনের মোবাইল ফোন উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে হত্যার কারণ স্পষ্ট হবে। পুলিশের একাধিক ইউনিট তদন্তে সহায়তা করছে।


জামালপুর রেলওয়ে পুলিশ জানায়, ২১ মে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে রেললাইনের পাশে ফাঁকা জায়গায় একটি ছেলেকে পড়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসেন গ্রামবাসী। তখনো দেহে প্রাণ ছিল। গ্রামবাসী তাকে উদ্ধার করে মাথায় পানি দিলেও কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগে কিছু বলে যেতে পারেনি ফাগুন।


জামালপুর রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাপস চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, লাশ দেখে মনে হচ্ছে, কয়েকভাবে তার মৃত্যু হতে পারে। প্রথমত ট্রেন থেকে কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে। আবার অন্য জায়গায় হত্যার পর লাশ নুরুন্দি এলাকায় রেখে যেতে পারে। কারণ ওই এলাকাটি অনেকটাই ফাঁকা।

 


বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। অপমৃত্যু বলে ঘটনা ধামাচাপা দেয়া যাবে না। ডেভেলপার কোম্পানির হুমকিরও তদন্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ফাগুন অনেক প্রতিভাবান সাংবাদিক ছিলেন। ইংরেজিতে খুবই ভালো ছিলেন। তার এমন মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক, কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *