সোনাগাছির নারীরা ৭ কারণে আইনি স্বীকৃতি চান না 

 

বাংলার দর্পন ডটকম  : ভারতে যৌনপেশা সম্পর্কিত এখন যে আইন চালু রয়েছে (ইমমরাল ট্র্যাফিক প্রিভেনশন অ্যাক্ট ১৯৫৬) তাতে এই পেশা বৈধ নয়। যৌনতা নাকি বিক্রয়যোগ্য সম্পদ নয়। ‘নিষিদ্ধ’ শব্দটার প্রতি সবারই টান থাকে। নারী-পুরুষ সকলের। এ শুধু যৌবনের ধর্ম নয়, গোটা জীবন ধরেই মানুষকে টানে ‘নিষিদ্ধ’। কিন্তু নিষিদ্ধ পাড়ার নারীরা কী চান? নারী দিবসে ‘নারী’ হতে না পারা নারীরা কী বললেন? ওই পাড়াটা যদি নিষিদ্ধই হয় তবে সেখানে কেন যায় পুরুষরা? নীতির কথা বলতে গিয়ে সবাই দেহব্যবসাকে খারাপ চোখে দেখে। কিন্তু কেন যায় পুরুষ?

গোটা পৃথিবীতেই যৌনপল্লীতে পুরুষ খদ্দেরদেরই তো রমরমা। অনেকে বলেন, পারিবারিক জীবনে সুখশান্তির অভাবে কিংবা যৌন অতৃপ্তি থেকে রঙিন আলোর খোঁজেই নাকি পুরুষেরা যৌনপল্লীতে উঁকি দেন। পা রাখেন। কিন্তু সবার গল্প কখনও এক হতে পারে না। অনেকে তো বছরের পর বছর একই নারীর কাছে যান। সেখানে কি শুধুই যৌনতা? আশ্রয়ও তো পান তারা! এমন আশ্রয় যে নারী দেন, তিনিও পতিতা হন কী করে? নারী নামক স্বীকৃতি জোটে না বারবনিতাদের। তার পরোয়াও অবশ্য করেন না ওরা। কারণ, তারা জানেন শরীরের গঠনেই তারা নারী। সেই শরীরের টানেই তো পুরুষ আসে। পতিতার ঘরের চৌকাঠ পার হওয়ার আগে লজ্জাকে রেখে আসে পথের ধুলোয়। তবু ওদের মনে হয়, ওরা নারী নন, ওরা যোনি যুক্ত এক যন্ত্র।

নিজেদের পেশা নিয়ে বেশ্যারা কেমন মস্তি করেন? ওদের কাছে যৌনতা কতটা উপভোগ্য? কেমন লাগে নিত্য-নতুন পুরুষ সঙ্গ? হর রাত নয়া খিলাড়ি ব্যাপারটা কেমন? কেমন লাগে প্রেমহীন, সোহাগহীন শরীর যাপন? এ নিয়ে অনেক কৌতূহল। আর তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে মিলল এক ঝাঁক প্রশ্ন। প্রশ্নের জবাবেও প্রশ্ন। তাহলে কি উত্তরটা অজানা! এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যৌনকর্মীরা যেটা করেন সেটাকে যৌন-সেবা নাকি যৌন-পরিষেবা বলা হবে? সেবার মূল্য নিতে নেই। পরিষেবা তো মূল্যের দাবি করে। তবে কেন এত অত্যাচার, কেন এত বঞ্চনা সহ্য করতে হবে? অনেকে বলেন, এই পেশা আইনি স্বীকৃতি পেলে সমস্যা কমবে। কিন্তু সোনাগাছি কী বলছে? ‘গতর খাটিয়ে খাই, শ্রমিকের অধিকার চাই’ স্লোগানে কেন সায় নেই কলকাতার এই লাল পৃথিবীর বাসিন্দাদের?

আবার অনেক দেশে এমন আইনও রয়েছে যেখানে বলা রয়েছে- যৌনতা বিক্রয় অপরাধ নয়, কিন্তু ক্রয় অপরাধ। সেখানে নারীকে বিক্রয়ের অধিকার দিয়েও সম্ভাব্য ক্রেতাকে আটকে দেওয়া হয়েছে। এমন আইনি স্বীকৃতিও আবার হাস্যকর। এবার দেখে নেওয়া যাক কেন আইনি স্বীকৃতি চান না সোনাগাছির বারবনিতারা। কারণ :

১. বেশ্যাবৃত্তি আইনি স্বীকৃতি পেলে আড়কাঠি, দালালদের প্রতিপত্তি বেড়ে যাবে।

২. পতিতালয়ের সঙ্গে সঙ্গে সেক্স ক্লাব, ম্যাসাজ পার্লার, মধুচক্র সবই বৈধতা পেয়ে যাবে।

৩. দেশে নারী-পাচার বাড়বে। সেটা হয়ে যাবে বৈধ ব্যবসার জন্য কাঁচামাল সরবরাহ।

৪. প্রকাশ্য বেশ্যাবৃত্তি বেড়ে যাবে। ফুটপাথেও তখন যৌন-হকার পাওয়া যাবে।

৫. বৈধতা পেলে পুরুষের নারীদেহ ক্রয়ের মানসিক প্রবণতা বাড়বে। নারীর নিরাপত্তা আরও কমবে।

৬. যৌনপেশা আইনি স্বীকৃতি পেলে পেশায় যুক্ত নারীর চাহিদা, ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য আরও কমে যাবে।

৭. বৈধ পেশায় অনেক অনেক মেয়ে যোগ দিতে চাইবে। নতুনরা পুরনোদের আরও পেছনে ফেলে দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *