শেখ আমিনুর হোসেন, সাতক্ষীরা ব্যুরো চীফ:
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলার সদর হাসপাতাল জেলার ২৪ লাখ মানুষের একমাত্র আশা-ভরসার জায়গা। এখানে অব্যবস্থাপনার যেনো কোন শেষ নেই। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালের করুন চিত্র দেখে মনে হয় এ জেলায় দেখার মতো কেউ নেই। এখানে যেনো ভুতের বসবাস।
শুক্রবার রাত ৯ টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেলো সেই ভুতুড়ে দৃশ্য। চারিদিকে ঘুট-ঘুটে অন্ধকার। মোবাইলে আলো জ্বেলেই জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার আর নার্সারা রোগির সেবা করছেন। মনে হচ্ছে কোন আজব জায়গা এসে পড়লাম। আর চোখের আলো জ্বালিয়ে হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করতে হলো। পায়ের জায়গায় পা পড়ছে কি-না অন্ধকারে বুঝে উঠারও কোন উপায় নেই। আর বিদ্যুৎ আসলো রাত ৯টা ৪০মিনিটে। শুধু একবার নয়, রাতে-দিনে একাধিক বার এভাবে বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেলো বিদ্যুৎ চলে গেলেই এ ধরনের ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। এটি শুধু আজ নয়, চলছে প্রায় ৭-৮ মাস ধরে। বিদ্যুৎ চলে গেলে জরুরী বিভাগ , অপারেশন থিয়েটারসহ মুহুর্তেই হাসপাতালের সবকিছু যেনো অকেজো হয়ে পড়ে, নীভে যায়। বিশেষ করে অপারেশন করার সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ে সবকিছু। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে মোবাইলের আলো জ্বেলেই তখন ডাক্তারদের জরুরী অপারেশ শেষ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তারদের হিমশিম খেতে হয় রোগির জীবন বাঁচাতে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার। কিন্তু আজ শুক্রবার এই হাসপাতালে রোগি ভর্তি ছিলো ১৯৫ জন। বিদ্যুৎ চলে গেলে এখানে বিকল্প ব্যবস্থা রাখার কথা। কিন্তু গত ৭-৮ মাস ধরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে বিকল্প কোন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই। আর এ জন্য সাতক্ষীরা বিদ্যুৎ অফিস দায়ী করছে হাসপাতাল কতৃপক্ষকে, আর হাসপাতাল কতৃপক্ষ দায়ী করছে বিদ্যুৎ অফিসকে। এভাবে রশি টানা-টানি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। আজও তার সমাধান হয়নি। আর ডাক্তার সংকটের কথা নাই-বা বললাম।অথচ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাতক্ষীরা সদর আসনের একাধিক বার নির্বাচিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। আর সদস্য সচিব সাতক্ষীরা সিভির সার্জন ডা: রফিকুল ইসলাম নিজেই। এছাড়া হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি, সম্পাদক পদাধিকার বলে এই কমিটির অন্যতম সদস্য।
জেলার গুরুত্বপূর্ণ এসব ক্ষমতাধর মানুষ গুলো যে হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সদস্য সেখানে যদি এ ধরনের অব্যবস্থাপনা দৃশ্যমান হয় তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায় ? কি জবাব দেবেন সরকারের বার বার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ? এ জিজ্ঞাসা সাতক্ষীরার ২৪ লাখ মানুষের।