সৈয়দ মনির আহমদ :
স্বৈরশাসকের (১৯৯০) আদেশে স্থগিত হওয়া ডাকসু উচ্চ আদালতের নির্দেশে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে চালু হয়েছে। দীর্ঘ ২৮বছর পর আজ (১১মার্চ) সোমবার নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষি হয়েছে ঢাবি’র ৪৩হাজার শিক্ষার্থী।
ডাকসুসহ একযোগে ১৮টি আবাসিক হলে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ (শোভন-রাব্বানি), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল(মুস্তাফিজ-আনিস), প্রগতিশীল বাম ছাত্রজোট(লিটন-বেনজির) ও সাধারন ছাত্র পরিষদ (শিবির সমর্থীত) প্যানেলে অংশ নেয়। এছাড়া একাধিক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীও ছিল।
বিরোধি রাজনৈতিক দলগুলো যখন সকল নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দিয়েছে ঠিক সে সময়ে সকল দলীয় সমর্থীত ছাত্র সংগঠনের নির্বাচনে অংশ গ্রহন করাও ডাকসু নির্বাচনের ইতিবাচক দিক। পুর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকাল ৮টায় ভোট গ্রহন শুরু হয়ে ২টা পর্যন্ত চলে। সকাল সাড়ে ৮টায় রোকেয়া হলে বস্তাবন্ধী কিছু ব্যালট উদ্ধার করে ভোটাররা। এরপর এক ঘন্টা ওই হলের ভোট গ্রহন স্থগিত ছিল।
তিন প্যানেলের দাবি ছাত্রলীগ রাতেই সিল মেরে ব্যালট গুলো লুকিয়ে রেখেছে। ছাত্রলীগ বলেছে নকল ব্যালট ছাপিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নাটক করেছে ছাত্রলীগ বিরোধী সব সংগঠন। উদ্ধারকৃত ব্যালটের নমুনা কোন হলের ব্যালটের সাথে মিল নেই বলে জানায় ছাত্রলীগ।
কারচুপি-অনিয়ম, ভোটদানে বাধা, চলাচলে বাধা, হুমকি সহ বহু অভিযোগ এনে একযোগে সংবাদ সম্মেলন করে দুপুর ১টায় নির্বাচন বর্জন করেছে তিনটি প্যানেল। বর্জনের পর বিক্ষোভ মিছিল ও টিএসসি চত্বরে প্রতিবাদ সভা করে ১২মার্চ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তারা। ছাত্রলীগ বলেছে নির্বাচনে পরাজয় জেনে তারা শেষ মুহুর্তে বর্জন করে পুরো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পায়তারা করছে সরকার ও ছাত্রলীগ বিরোধি সংগঠনগুলো।
ঢাবির ভিসি মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ন ভোট হয়েছে। ডাকসুর সাবেক নির্বাচিত ভিপিদের মধ্যে অনেকে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন। খেলাঘর চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানম বলেছেন কলঙ্কিত করার প্রয়োজন নেই ,সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, এ নির্বাচন আইয়ুব আমলের চেয়েও কলঙ্কিত হয়েছে। সুলতান মনসুর এমপি বলেছেন, নেতৃত্ব সৃষ্টির অচলাবস্থার অবসান হয়েছে। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, সুষ্টু নির্বাচনের পরিবেশ ছিলোনা।
ডাকসু এবং সবকটি হলে ছাত্রলীগ প্যানেল নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছে, ব্যাতিক্রম শুধু ভিপি পদে সাধারন ছাত্র পরিষদের নুরুল হক নুরু নির্বাচিত হয়েছেন এবং ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ভিপি নির্বাচিত হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী রিকি হায়দার। সব মিলিয়ে রক্তপাত ছাড়াই ডাকসুর এ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি বন্ধ দ্বার উম্মোচন করায় সরকার সুনাম কুড়িয়েছে। তবে দায়ীত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশন ও ঢাবি কর্তৃপক্ষ আরও সুষ্টু এবং অবাধ নির্বাচন উপহার দিতে পারতেন।
লেখক- সভাপতি,সোনাগাজী প্রেসক্লাব। সম্পাদক -বাংলারদর্পন।