বাংলাদেশ-ওমান রুটে বিমানের বড় উড়োজাহাজ চালুর আহ্বান | বাংলারদর্পন

নিউজ ডেস্কঃ  বাংলাদেশ থেকে ওমান-মাস্কাট রুটে বিমানের বড় উড়োজাহাজ চালুর আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রাম সমিতি ওমান। এ জন্য বিমান মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ওমানপ্রবাসীদের কল্যাণে নিয়োজিত সংগঠনটি।

 

মরদেহ ও অসুস্থ’ যাত্রী পরিহন এবং ব্যাগেজ জটিলতা নিরসনে এই উদ্যোগ অবিলম্বে প্রয়োজন বলে বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে জানিয়েছে সংগঠনটি। সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক তাপস বিশ্বাস যৌথভাবে এই বিবৃতি পাঠিয়েছেন।

 

গত ৬ মাস ধরে ওমান-মাস্কাট রুটে বাংলাদেশ বিমানের বড় উড়োজাহাজ বন্ধ আছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

 

৮ লাখ ওমানপ্রবাসীদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, হিমঘরে মরদেহের দীর্ঘ সারি আর হাসপাতালের বিছানায় অপেক্ষায় থাকা অসুস্থ প্রবাসীদের আর্তনাদেও টনক নড়ছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের। রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির চরম উদাসীনতা মানবেতর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে ওমানের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের।

 

বিবৃতিতে বলা হয়, চাহিদা পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-মাস্কাট রুটে সপ্তাহে তিনদিন ৪১৯ আসনের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এবং বাকি ৩ দিন ১৬২ আসনের বোয়িং ৭৩৭ চলাচল করে থাকে।

 

‘প্রতিবছর হজ মৌসুমে হাজিদের সুবিধার্থে বড় উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয় এবং হজ শেষে আবার আবার চালু করা হয়। কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় গত হজ মৌসুমে মধ্য জুলাই থেকে এই রুটে বোয়িং ৭৭৭ বন্ধ রাখা হয়। হজ শেষে ২৭ আগস্ট থেকে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর শেষ হয়।’

 

‘আশা করা হয়েছিল অক্টোবর প্রথম সপ্তাহ থেকে ওমান রুটে আবার বড় উড়োজাহাজ শুরু হবে। স্থানীয় বিমান কর্র্তৃপক্ষও তেমনটি আশ্বাস দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা আর চালু হয়নি। সপ্তাহে সাতদিনই চলছে বোয়িং ৭৩৭। ফলে গত প্রায় ৬ মাস ধরেই সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছেন ওমানপ্রবাসীরা।’

 

বিবৃতিতে আর বলা হয়েছে, সরকারি নিদের্শনা মোতাবেক বাংলাদেশ বিমান বিনামূল্যে প্রবাসীদের মরদেহ পরিবহন করে। এই সুবিধায় দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ বিমান করেই দেশে প্রবাসীদের মরদেহ পাঠানো হয়। এখন সপ্তাহে সাতদিনই বোয়িং ৭৩৭ চলাচল করায় সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

 

‘বোয়িং ৭৩৭ দিয়ে এই রুটে চলাচলকারী বাংলাদেশের বেসরকারি বিমানসংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের মরদেহ পরিবহনের সক্ষমতা নেই। তারপরও এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সমিতির অনুরোধে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ বেশ কয়েকটি মরদেহ বিনামূল্য দেশে পাঠিয়ে সহযোগিতা করেছে এবং করছে। কিন্তু সংস্থাটির ১৮৬ আসনের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে সব সময় মরদেহ সংকুলান করা সম্ভব হয় না ‘

 

‘ফলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বিদেশি বিমানসংস্থার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে ওমানপ্রবাসীদের। কিন্তু বিদেশি বিমানে ১৭০ ওমানী রিয়াল (বাংলাদেশি প্রায় ৩৭ হাজার টাকা) চার্জ গুনতে হয়। প্যাকেজিং ও প্রসেসিংয়ের জন্য ৩০০ ওমানি রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৬ হাজার টাকা) দিতেই যখন শ্রমিক শ্রেণি এবং অসহায় ও দুঃস্থ প্রবাসীদের সামর্থ্য কুলায় না সেখানে বাড়তি ৩৭ হাজার টাকা চার্জ কীভাবে দিতে পারেন?’

 

‘প্যাকেজিং ও প্রসেসিংয়ের অর্থ যোগানের ক্ষেত্রে দূতাবাস, চট্টগ্রাম সমিতিসহ বাংলাদেশি সংগঠনগুলো এবং কমিউনিটির বিত্তবানরা প্রতিনিয়ত সাহায্য করে যাচ্ছে। কিন্তু এখন বিদেশি বিমানের বাড়তি চার্জ যোগাতে সবারইতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাসে গড়ে ৬০-৭০টি মরদেহে দেশে আসছে।’

 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমিরাত, কাতার এয়ারওয়েজের মতো বিদেশি বিমানের ট্রানজিটের কারণে দীর্ঘযাত্রার ঝক্কি অসুস্থ রোগীর ক্ষেত্রে অনেক পীড়াদায়ক। সবচেয়ে বেশি দুর্গতি চট্টগ্রামগামী প্রবাসীদের। কারণ সব বিদেশী বিমান শুধু ঢাকায় অবতরণ করে। ফলে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে মরদেহ চট্টগ্রাম পর্যন্ত নিয়ে আসতে হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট পেরিয়ে দীর্ঘযাত্রার পর গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত মরদেহ পৌছানো পরিবারের জন্য কতটা কষ্টকর তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

 

‘বলা প্রয়োজন ওমানের ৮ লাখ প্রবাসীর ৬৫ ভাগই চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ। যার কারণে বিমানসহ দেশের সবকয়টি বিমানসংস্থা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়েই ওমান যাতায়াত করে। এভিয়েশন আইনুয়ায়ী বিদেশি বিমানগুলো সেই সুবিধা পায় না।’

 

‘বড় উড়োজাহাজ সংকটের কারণে অসুস্থ যাত্রী নেয়াও বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বোয়িং ৭৭৭-৩০০ সচরাচর বোডিং ব্রিজে যুক্ত করা হয় বলে অসুস্থ ও শারীরিক অক্ষম যাত্রীদের হুইল চেয়ার সহজে উঠানো যায়। আর বোয়িং ৭৩৭ সবসময়ই দূরবর্তী বে’তে পার্কিং করা হয় এবং সেখান থেকে বাসে করে টার্মিনালে যাত্রী আনা-নেওয়া করা হয়। ফলে সিঁড়ি দিয়ে বিমানে যাত্রী ওঠানো অনেক কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অনাগ্রহী বিমানের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রেও বিদেশি বিমানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সেখানে একজন এটেনডেন্টসহ আড়াই-তিনলাখ টাকা চলে যাচ্ছে প্রবাসীর।

 

‘এ খরচ বহনে অক্ষম অনেক রোগী ওমানের বিভিন্ন হাসপাতালের বিছানায় দেশে ফেরার প্রহর গুনছে দিনের পর দিন।’

 

বড় উড়োজাহাজ না থাকায় কারণে ব্যাগেজ নিয়ে ভোগান্তির বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, অন্যান্য সংস্থার মতো ওমান থেকে দেশগামী যাত্রী ৪৫ কেজি ব্যাগেজ সুবিধা দিয়ে থাকে বিমান বাংলাদেশ। যাত্রী প্রতি ৩০ কেজি সক্ষমতাসম্পন্ন বোয়িং ৭৩৭ যোগে এক সাথে সব ব্যাগেজ আনা সম্ভ নয়। তাই দেশে পৌছে সাথে সাথে ব্যাগেজও পায় না অনেক প্রবাসীরা। কারো একটা আবার কারো সব ব্যাগেজ থেকে যাচ্ছে ওমানেই। দিন, সপ্তাহ পরে সেই ব্যাগেজ পাচ্ছেন তারা। এর ফলে প্রবাসীদের গ্রামের বাড়ি থেকে বিমানবন্দর এসে ব্যাগেজ সংগ্রহ করার ভোগান্তিও যেমন সহ্য করতে হচ্ছে, দীর্ঘদিন তেমনি পর পরিবারের সানিধ্যের আনন্দটাই মাটি হচ্ছে।

 

‘এছাড়া বড় উড়োজাহাজ সংকটের কারণে বাংলাদেশ বিমান মাস্কাট রুটের যাত্রীও হারাচ্ছে বলে মনে করে চট্টগ্রাম সমিতি। কারণ ছোট উড়োজাহাজের জন্য বেসরকারি বিমানসংস্থা দুটির সব যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা নেই। তাই বিদেশী বিমানসংস্থাগুলো লুফে নিচ্ছে সেই সুযোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *