ফেনীর দাগনভূঁঞায় বিষ মুক্ত বিটি বেগুন চাষ

কাজী ইফতেখারুল আলম:

ফেনীর দাগনভূঞাঁ উপজেলায় ১৬-১৭ রবি মৌসুমে রাজস্ব খাতের অর্থায়নে প্রতাপপুর ও লালপুর গ্রামে পরীক্ষামূলক ভাবে পরিবেশ বান্ধব নতুন জাতের বেগুন (বিটি) এর কীটনাশক বিহিন চাষ শুরু হয়েছে ।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বেগুনের এ জাত উদ্ভাবন করেছে বলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ হুজ্জাতুল ইসলাম জানান।

তিনি বলেন এই বেগুন ব্যাসিলাস থুরিনজিয়ানসিস নামক এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার জিন ইনোকুলেট করে উদ্ভাবন করা যা এক ধরনের প্রোটিন তৈরী করে যেটা বেগুনের ডগা এবং ফল ছিদ্রকারী পোকার জন্য বিষাক্ত। বেগুনে পূর্ব থেকে পোকার আক্রমন থাকলেও এই প্রোটিনের কারনে মরে যায় বলে তিনি জানান।

বেগুনের মধ্যে এই ব্যাক্টেরিয়ার জিন পূর্ব থেকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রবেশ করানোর ফলে বেগুনের গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা কোনভাবেই আক্রমন করতে পারেনা বলে তিনি জানান। তিনি বলেন এই বেগুন চাষে কোন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। তবে বেগুন গাছ বাড়ন্ত সময়ে পাতার নিচে একধরনের সাদা মাছির আক্রমন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাছি আক্রমন করলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক এক থেকে দুইবার স্প্রে করলে শেষ পর্যন্ত এর আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলে তিনি জানান।

 

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন,এক বিঘা জমিতে একশ ত্রিশ থেকে একশ চল্লিশ মন বেগুন উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য গড়ে ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অথচ বিঘাপতি বীজ, সার, লেবার ও পানি সেচসহ মাত্র খরচ হয় দশ থেকে বার হাজার টাকা।

একজন চাষী অনায়াসে এক বিঘা জমি থেকে দেড় লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন বিঘাপতি চল্লিশ কেজি ইউরিয়া সার তিনবার প্রদান করতে হয়। সেইসাথে চাষের সাথে টিএসপি সার পনের কেজি, এমওপি সার ত্রিশ কেজি দুইবার, গোবর সার দেড় টন চাষের সাথে, বরোন এক কেজি একবার ও জমিতে সাত থেকে আটবার সেচ প্রদান করতে হবে বলে জানান।

তিনি বলেন এই বছর রাজস্ব খাতে সহায়তায় প্রতাপপুর ও লালপুর এলাকায় দুই জন চাষী দুই বিঘা জমিতে এই বেগুনের চাষ করছেন।

 

প্রতাপপুর গ্রামে বিটি বেগুন চাষী সমীর চন্দ্র দাস বলেন, এই বেগুন চাষে অনেক লাভ। অন্য জাতের বেগুন চাষ করতে হলে ব্যাপকভাবে কীটনাশক ব্যবহার করেও গাছ ও বেগুনের পোকা রোধ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, গাছ মরে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কমপক্ষে ত্রিশ বারের ও বেশী কীটনাশক এক বিঘা জমিতে স্প্রে করতে হয়। এতে ব্যয়ের চেয়ে আয় কম হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ হুজ্জাতুল ইসলাম বলেন, দাগনভূঁঞাতে পরীক্ষামুলকভাবে মোট দুই বিঘা জমিতে বিটি বেগুনের চাষ হচ্ছে। এই বেগুন চাষে খরচ কম, লাভ বেশী হওয়ায় কৃষকদের অন্যান্য জাতের বেগুনের চাষ কমিয়ে দিয়ে বিটি বেগুন চাষ করার পরামর্শ প্রদান করেন তিনি।

তিনি বলেন কীটনাশক ব্যবহার না হওয়ায় এই বেগুন খেলে মানব দেহের কোন ক্ষতি হয় না বলে তিনি জানান এবং মাঠ পর্যায় পরিদর্শনে আসেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অন্ঞ্জলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম, ফেনী জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড, মোঃ খালেদ কামাল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম ভূঞাঁ প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *