নিউজ ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে গঠিত নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সূচনালগ্নে ঐক্যে আসা শরিক দলগুলোকে বিএনপির পক্ষ থেকে বড় ধরনের ছাড় দেয়ার কথা বলা হলেও নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সে অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে বিএনপি। জোট গঠনের শুরু থেকে আসন নিয়ে ঐক্যের শরিকদের সঙ্গে দর-কষাকষির কথা শোনা গেলেও এবার নির্বাচনী মাঠে জনপ্রিয়তা না থাকা সত্ত্বেও ঐক্যের নেতাদের বিপুল আসন প্রত্যাশায় ক্ষুব্ধ মনোভাব ব্যক্ত করছে দলটি।
সূত্র বলছে, ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হওয়ায় গণফোরাম এবারের নির্বাচনে ৭০ থেকে ৭৫টি আসন দাবি করেছে। অন্যদিকে জেএসডি আশা করছে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি আসন তাদেরকে দেয়া হবে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ অন্তত ২০টি আসন চায়। নাগরিক ঐক্য তার দলে ২০ থেকে ৩০ জন প্রার্থীকে আসন দেয়া নিয়ে ভেবে রেখেছে। এরইমধ্যে তাদের নেতাদের মনোনয়নের নিশ্চয়তাও দিয়েছে দলটি। এমন প্রেক্ষাপটে এলডিপিও চেয়েছে ২০টি আসন। তারা বলছে, প্রয়োজনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে ইস্তফা দেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের এমন আল্টিমেটামে বিএনপি নেতারা বলছেন, ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও বিপুল আসন প্রত্যাশা অমূলক।
এমন প্রেক্ষাপটে ক্ষুব্ধ মনোভাব ব্যক্ত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জাতীয় ঐক্যের শরিক দলগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র বিএনপির পক্ষে যে পরিমাণ জনসমর্থন রয়েছে তার তুলনায় জোটের অন্য শরিক দলগুলোর সমর্থন বিবেচনায় নগণ্য। জাতীয় ঐক্যের ছোট দলগুলো আসন নিয়ে যেভাবে দর-কষাকষি শুরু করেছে তা প্রত্যেকেরই জনসমর্থনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে ঐক্যের শরিক দলগুলোর নির্বাচনী মাঠে জনপ্রিয়তা নেই বললেই চলে। ফলে তাদের অধিক আসন প্রত্যাশা অযৌক্তিক। কেননা, বিএনপি যদি ঐক্যের শরিকদের দাবি মানতে যায় তবে ঐক্য করে কোন লাভ হবে না। নির্বাচনে পাশ করতে না পারলে ঐক্য করে লাভ কী? ভোটের মাঠে কার কতো জনসমর্থন আছে সে বিবেচনা করে যদি ঐক্যের শরিক দলগুলো আসন চায় তবে তা মেনে নেয়া যায়। তাদের অমূলক দাবি কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিকে এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, জনসমর্থনের দিক থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আসা শরিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা কম নয়। তা বিএনপির মতো ব্যাপক না হলেও একেবারে নগণ্য নয়। বিএনপির এক-তৃতীয়াংশ ভোট অন্তত ঐক্যে আসা দলগুলোর রয়েছে। কিন্তু বিএনপি জনপ্রিয়তা নিয়ে শরিকদের প্রতি যে সংশয় প্রকাশ করেছে তা যেকোন রাজনৈতিক দলের জন্য অস্বস্তিকর এবং অবমাননামূলক। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সূচনালগ্নে অন্তত ১৫০ আসন ছেড়ে দিতেও রাজি ছিলো বিএনপি। এখন নতুন করে বোল পাল্টিয়ে আবোল-তাবোল বলছে। তাদের বোঝা উচিৎ- এখনো যদি ঐক্যফ্রন্ট থেকে শরিক দলগুলো বেরিয়ে যায় তাহলে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে পৌঁছাবে।
অন্যদিকে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ঐক্যের শুরুতে বিএনপি শরিকদের যে সংখ্যক আসনের লোভ দেখিয়েছিল তার বেশি চায়নি তারা। ১৫০ আসনের কম আসনই চেয়েছে তারা। তো সেগুলো ছাড়তে তাদের সমস্যা হবার কথা নয়। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই, ঐক্যের শরিক দলগুলো যদি কোনভাবে নারাজ হয়, তবে বিএনপির অবস্থা শোচনীয় হতে পারে। সুতরাং জাতীয় ঐক্যের বিষয়গুলো একটু সুনজরে দেখা উচিৎ।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনে আসার আগে আসন নিয়ে জোটের শরিক দলগুলোর মতপার্থক্য বৃহৎ সংকট তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতি সচেতন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।