আদর্শ বাবার আদর্শ সন্তানঃ বাবা মনোনয়ন না পাওয়ায় ফেসবুকে ছেলের প্রতিক্রিয়া

জেড. এ. মাসুদ, (নিঃসঃ) চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, আলহাজ্ব জনাব, খোরশেদ আলম সুজন দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় বাবাকে নিয়ে ফেসবুকে মর্মস্পর্শী স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার পুত্র মহিউল আলম হাজী। তার বাবার সমালোচকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন কিভাবে দলের দুঃসময়েও দলের জন্য পরিবার-সন্তান ভুলে কাজ করে গেছেন।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে মহিউল লিখেছেন, আমাদেরকে নানারকম টিটকারি মারার আগে কিছু কথা বলতে চাই: ৪৮বছরের রাজনীতির হয়তো মূল্যায়ন হয়নি। সততা, নিষ্ঠারও হয়তো দুনিয়াতে জায়গা নেই। গত ৪৮ বছরে আমার আব্বা শুধু রাজনীতিই করেছেন। উনার বয়সে অন্যান্যরা ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়েছেন। যদি উনি অর্থ উপার্জনে মনোনিবেশ করতেন তবে আজ আমাকে আর আমার ভাইকে ডেইলি ৪নং বাসে চলাফেরা করতে হতো না। টংয়ের দোকানে বসে ৫টাকার চা দিয়ে বনরুটি খেতে হতো না। আজও দিনের হাতখরচ দেন আমাদের ১০০ টাকা। অনেক নেতার ছেলের মত আমারও একটা গাড়ি, গাড়ি নাহোক পারতপক্ষে একটা মোটরসাইকেলের মালিক তো আমি বা আমার ভাই যেকোন একজন হতে পারতামই। আমার আপু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটলে চলাচল করে। ষোলশহর স্টেশন পর্যন্তও যায় লোকাল বাসে। হয়তো আজকে টাকা পয়সার পেছনে আমার আব্বা দৌঁড়ালে আমার আপা আর আম্মার পিছেই আলাদা একটা গাড়ি লেগে থাকতো। আমাদের গাড়ি আছে একটা ঠিকই। তাতে আমি হাতেগোনা বিশ বারও উঠিনি গত দুই-আড়াই বছরে। গাড়ি চাইলে আমার আব্বা বলে যেদিন তোমরা কিনতে পারবা আমাকে সহ চড়াইও। নিজের নৈতিক শিক্ষাটা আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সবসময়।নিজে তো রাজনীতিকে নিজের জীবনটা উৎসর্গ করে দিয়েছেন,পারিবারিক জীবনটাকেও রাজনীতির জন্য জলাঞ্জলি দিয়েছেন। শালার আমার সব ব্যাচমেটরা যেখানে নামিদামি ঢাকার প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ছে সেখানে আমাকে এখনও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে।যদি কল না দেয় কি করবো আমার জানা নেই।প্রাইভেটে পড়ানোর সামর্থ্য নেই আমাকে। একটা লোক এত এত ছেলেকে মেইনটেইন করে, কিন্তু নিজের পরিবারকে তিনি জলাঞ্জলি দিয়েছেন তাঁর রাজনীতির জন্য। পরিবার, ব্যক্তিগত সুখ-সান্নিধ্য সবটুকু বিসর্জন দিয়েছেন রাজনীতির জন্য। ২০০১-২০০৬ বিএনপি আমলে প্রত্যেকটি রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসতো উনাকে ধরতে। আমরা তখন অনেক ছোট। আমার মা কিভাবে তাঁদেরকে ট্যাকেল দিত আমরা দেখেছি। ১/১১ এর কথা আমি বাদই দিলাম। ওই দুই বছর আব্বাকে বাসায় খুবই কম দেখতাম। খুব ছোট ছিলাম বুঝতাম না। এগুলা তো বললাম আমার জন্মের পর দেখা ঘটনাগুলো। আমার না দেখা সংগ্রামের কথাগুলা নাই বললাম আমি। ওসব কথা মনে আসলে চোখের কোনায় অশ্রুতে টলমল করে। ২০০৮ সালের হার্টব্রেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত নানা মহল নানাভাবে উনাকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছেন। পদে না থেকেও কেমনে রাজনীতি করতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছেন। খোরশেদ আলম সুজনের মত নেতার জন্মই হতো হয়েছে ত্যাগ স্বীকারের জন্য। আগেও করেছেন। এখনো করবেন। সমস্যা নেই। উনার এতে কোন দুঃখ নেই। দলটাকে উনি উনার পরিবার, স্ত্রী, সন্তান থেকেও বেশি ভালোবেসেছেন। নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসেছেন বলেই উনি নিজের জন্য জীবনে কিছু করেন নাই। তবে বলি কি, উনাকে কি কেউ ইকুয়েশন থেকে বাদ দিতে পেরেছেন? খোরশেদ আলম সুজন হয়তো দল হতে মূল্যায়িত হননি। হবেন হয়তো মৃত্যুর পর। অজস্র শ্রদ্ধার বাণী তখন তেড়ে আসবে। কিন্তু আজ আপনাদের একটা কথা বলি। নো ওয়ান এলাইভ রাইট নাও ইন দিস সিটি হেস মোর ক্যালিবার অফ বিয়িং এ মেম্বার অফ পার্লামেন্ট দ্যান খোরশেদ আলম সুজন। আমার আব্বা আমার জন্য মহান ছিলেন, আছেন, থাকবেন। তিনি এমপি হোক না হোক আমার কিছু আসে যায় না। কিন্তু একটা কথা শির উঁচু রেখে বলতে পারবো,”মাই ফাদার ইস দ্যা বেস্ট হিউম্যান বিয়িং আই হেভ এভার সিন অ্যান্ড আই উইল এভার সি”। সো উনাকে নিয়ে কটূক্তি, উনার এসব নিয়ে টিটকারি মারার আগে নিজেদেরকে নিজেদের জীবনের অর্জন নিয়ে প্রশ্ন করবেন। যদি মনে হয় আপনি তাঁর থেকে বেশি জীবনে এচিভ করেছেন, দেন প্লিজ ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম টু ক্রিটিসাইজ আস। শেষ কথা, আদর্শের হার হয় না। সবকিছু হারে আদর্শ, নীতি হারে না। যেমনটা আব্বা সবসময় বলে,”বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। “আই বিলিভ ইন মাই ফাদার। আর কেউ করুক না করুক আমার আছে আমার প্রাণপ্রিয় পিতার প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং ভালোবাসা। এমন একজন নেতাকে হিসাবের বাইরে যারা ফেলে দিতে চাইছেন, গুডলাক টু দেম। একজন খোরশেদ আলম সুজনের মত রেয়ার এবং ক্রিয়েটিভ পলিটিশিয়ানকে এত সহজে মুছে দেওয়া যায় না।

উল্লেখ্য, আসন্ন সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পত্র নিয়েছিলেন খোরশেদ আলম সুজন। তবে তাকে বাদ দিয়ে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *