মো. নাইম তালুকদার সুনামগঞ্জ থেকে;
হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় চলতি মৌসুনে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার কৃষকরা আগের লোকসান কাটিয়ে এ বছর লাভের আশা করছেন। তাইতো কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে।
তবে কার্তিক মাস শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। গ্রামাঞ্চলের মেঠোপথে এখন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে। হেমন্তের শীতের পরশটা উপভোগ্য হয়ে উঠে নবান্নে। তাই দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র এখন আমন ধান কাটার ধুম পরেছে।
মাঠে-ময়দানে শীত কিংবা রোদ্র উপেক্ষা করে চাষিরা ক্ষেত থেকে পাকা ধান সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নতুন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কিষাণ-কিষাণিরা। নতুন ধানে হবে নবান্ন উৎসব। নতুন ধান দিয়ে পিঠা পুলি, পায়েস, মুড়িমুড়কি ও মোয়াসহ নানা খাবার তৈরি হয় এ নবান্নের দিনে।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মাঠের পর মাঠ সোনালী রঙের পাকা ধান ঝলমল করছে। আর সে পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কাটা ও সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত এখানকার কৃষকরা। ধান কাটা শুরু হয়েছে প্রায় তিন/চার দিন ধরে। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে এ এলাকার কৃষকদের। শ্রমিক পাওয়া গেলেও তাদের মজুরি দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ। একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৩-৪শ টাকা।
উপজেলার পশ্চিম বীরগাও ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের কৃষক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, এ বছর আমি ৭ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। এতে প্রায় ২৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও পোকার আক্রমণ কম হওয়ায় ধানের ফলন ভাল হয়েছে। আশা করছি প্রায় ১৬০-১৭০ মন ধান পাবো। ফলন ভালো হওয়ায় আমি খুব খুশি।
ঠাকুরভোগ গ্রামের কৃষক আনোয়ার মিয়া বলেন, ৪ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। ফসলও বেশ ভালো হয়েছে। কয়েক বছর ধরে বন্যার কারণে ধান আবাদ করে চরম লোকসান হচ্ছিল। আশা করছি এবার ফলন ভাল হওয়ায় ঘরে অতিরিক্ত মুনাফা আসবে।
পূর্ব বীরগাও ইউনিয়নের হাসকুঢ়ী গ্রামের চাষী আবুল কাশেম বলেন, শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। দৈনিক ৩-৪শ টাকা মজুরিতেও মিলছেনা ধান কাটার শ্রমিক। যারা আগে ধান কাটার জন্য দিন মজুরের কাজ করত তারা অনেকে এখন ঢাকায় গার্মেন্স কাজ ও রাজমিস্ত্রির কাজ করছে। ফলে বাধ্য হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় , চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবহাওয়া ভাল থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। গত ২-৩ বছরের তুলনায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে উপজেলায় শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষককে ধান ঘরে তুলতে একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে।