সৈয়দ মনির আহমদ>>>
স্থানীয় ভাবে জেলাকে ব্র্যান্ডিং করার উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। তার অংশ হিসাবে ‘ফেনিউরিজম’নামে নামে অভ্যন্তরীন পর্যটন বিকাশে এক নতুন মডেল হাতে নেয়া হয়েছে। অভ্যস্থরীণ পর্যটনের উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, ফেনীর এক অনন্য উদ্ভাবনী উদ্যোগ। জেলা প্রশাসক আমিন আহসান জানান, ফেনী জেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য ঐশ্বর্য ভিন্নভাবে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরার জন্য এই অনন্য উদ্ভাবনী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফেনী এবং ট্যুরিজম কে যুক্ত করে ‘ফেনিউরিজম’ ফেনী জেলার অভ্যস্থরীণ পর্যটন বিকাশের এক নতুন ধারনা। অভ্যন্তরীণ পর্যটন বিকাশ ও সৃজনশীল উপায়ে একটি জেলার তরুণ সমাজকে জেলার ইতিহাস -ঐতিহ্য অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শেখানোর এক নতুন উদ্ভাবনী উদ্যোগ। এই ধারণাটির প্রবর্তন ও ফেনিউরিজম নামকরণ দুটোই জেলা প্রশাসন ফেনীর করা। জেলার তরুণ প্রজন্মকে ঘিরেই এই কার্যক্রমের মূল পরিকল্পনা। মহান মুক্তিযুদ্ধে ফেনীর বিলোনিয়া সীমান্তে সোলিয়ার সম্মুখসমর এর জীবন্ত ইতিহাস বা শর্শদির শাহী মসজিদ এর শত বছরের গল্পগুলো আমরা এই জেলার তরুন প্রজন্মের কাছে সেভাবে তুলে ধরতে পারি নি। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ জেলার কৃতি সন্তানদের বীরত্বগাঁথা অনেকেরই অজানা।
ফেনিউরিজমের মাধ্যমে পর্যটনের জন্য সম্ভাব্য স্থানগুলোকে আকর্ষনীয় করে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেই সেই স্থানগুলোতে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ট্যুর এর আয়োজন করা হবে। প্রতিটি ট্যুরেই জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে একাধিক স্পটে ঘুরিয়ে নিয়ে আসা হবে শিক্ষার্থীদের। একটি পর্যটন স্পটে ঐ স্থানের বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থেকে পর্যটকদের কাছে স্থানটির গুরুত্ব বর্ণনা করবেন। জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পৃক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোর মুক্তিযুদ্ধের গল্প শিক্ষার্থীদের শোনানো হবে। বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ডকুমেন্টারি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা ও কুইজের মাধ্যমে ট্যুরটিকে আনন্দময় ও আকর্ষনীয় করে তোলা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা প্রশাসন খুব সামান্য রেজিস্ট্রেসন ফি গ্রহণ করে আয়োজনটিকে পরিচিত করে তুলবে। পরবর্তীতে বেসরকারি ট্যুর আয়োজকগনকে উদ্যোগটিকে সম্পৃক্ত করা হবে। প্রতি সপ্তাহে ৩০ জনের একটি ব্যাচকে ট্যুরের জন্য বাছাই করা হবে। এভাবে জেলা প্রশাসন বছরে প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থীকে এই জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির সাথে মাঠে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দিবে। শিক্ষার্থীরা ওয়েবসাইটে সম্ভাব্য ভ্রমণকারী হিসেবে রেজিস্ট্রেসন করবেন। ইতোমধ্যেই অনেক শিক্ষার্থী ট্যুরে অংশ নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেছেন। প্রথম ট্যুরটি আয়োজিত হতে যাচ্ছে ১লা মার্চ, ২০১৭। ট্যুর আয়োজনের বাইরেও ফেনিউরিজমের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হল পর্যটন স্পটগুলোর উন্নয়ন এবং নতুন সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট খুজে বের করা । নির্মাণ করা হবে বিলবোর্ড, ফ্রেসকো, ডকুমেন্টারি ইত্যাদি।
এক কথায় ,জেলা প্রশাসন অথবা কোন উদ্যোক্তা যদি ফেনী জেলার অভ্যন্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য পর্যটন স্পটকে আকর্ষনীয় করে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে পারে তাহলে মানুষের মনযোগ নিজ মাটিকে জানার এই অনন্য সুযোগের দিকে ঘুরবেই। এখানে জেলা প্রশাসন অভ্যস্থরীণ পর্যটন বিকাশে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবে। উদ্যোগটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এর মাধ্যমে তরুণ সমাজ সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে নিজ মাটি, মানুষ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারবে। ফেনিউরিজম দেশপ্রেমে উজ্জীবিত শক্তিশালী একটি ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ে তুলতে সাহায্য করবে যারা মাদক ও জংগিবাদ থেকে নিজেদের দূরে রাখবে। জেলা প্রশাসনের ট্যুর টীমগুলো প্রতিনিয়ত এসব পর্যটন স্পটে ভ্রমণ করলে স্থানীয় জনগণ এতে সম্পৃক্ত হবে এবং সংশ্লিষ্ট পর্যটন স্পট এর অবকাঠামো, রাস্তা-ঘাট, যোগাযোগ ব্যবহারও উন্নয়ন ঘটবে- যা সঠিকভাবে অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে এগিয়ে নিবে।
ফেনিউরিজমের উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্যসমূহ:
অভ্যন্তরীন পর্যটনের বিকাশ, ইতিহাস-ঐতিহ্য শেখা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলা, আপাতত: সাধারণ দর্শনীয় স্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব জনসাধারণের মধ্যে তুলে ধরার মাধ্যমে একে স্থায়ী পর্যটন সাইটে রূপ দেয়া, নতুন নতুন দর্শনীয় স্থান খুঁজে বের করা ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন কর্মসূচি, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্যাকেজ ট্যুর প্রোগ্রামের আয়োজন, বিলবোর্ড, ফ্রেসকো ইত্যাদি দ্বারা স্পটগুলোকে নতুন ও আকর্ষণীয় করে সাজানো, স্পটগুলোর উপর ডকুমেন্টারি তৈরী ও প্রদর্শন করা, উদ্যোগটিকে ব্যাপক আকারে জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া।