জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল: ফেসবুক সমালোচকগণ এবং একজন শেখ হাসিনা

নিউজ ডেস্ক :

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। আমাদের দেশে যারা নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করেন তারা অনেক দাবির পসরা নিয়ে বসে থাকেন। বিশেষ করে সেই দাবিটা তাদের শেখ হাসিনার কাছে। সমালোচনার খোলা তরবারী হাতে অংশ নিতে সদা সোচ্চার তারা। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে একেকজন যেন একেকটি আদালতের মালিক। আর তারা সেখানকার বিচারপতি। তাদের রায়ই শেষকথা, অন্য কারো মত তাতে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু তারাই আবার বাকস্বাধীনতা আর সহনশীলতার প্রশ্নে কিবোর্ডে ঝড় তোলেন। কিন্তু নিজেরা কোনও ভিন্নমত গ্রহণ করতে পারেননা। ফেসবুকে তাদের পোস্টে অনেকে কমেন্টস অপশন রাখেননা। কথায় কথায় তারা আনফ্রেন্ড ব্লকের খেলা খেলেন। যারা নিজেরা সামাজিক মাধ্যম কিংবা সামাজিক জীবনে সহনশীলতা বা পরমতসহিষ্ণুতার ধার ধারেননা তারাই হয়ে ওঠেন গণতন্ত্রের বক্তা, জুড়ে দেন মায়াকান্না।

তারাই শহীদুল আলমের রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য সত্ত্বেও বিনা বিচারে মুক্তির সমর্থক। তারা প্রতিবাদ করেননা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নির্জলা মিথ্যার। কিন্তু মাছ চুরির মামলা নিয়ে কান্না করেন। অথচ, তারা এটা বলেনা, তারও আগে কাপ-প্লেট চুরির মামলা হয়েছে সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তাহলে কি, মাছ চুরির মামলা যৌক্তিক? তা নয়। কিন্তু যখন আপনি তুলনা করবেন তখন সব বিষয় নিয়ে বলা উচিত, যাতে অন্য সাধারণেরা তুলনামূলক তত্ত্বে যেতে পারে।

তারা সব সময়ই অভিযোগ করে এসেছে, সরকার জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করছে। তাদের নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে। তাদের কথা ছিলো জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হচ্ছেনা কেন? সবকিছুরই যে একটা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রয়েছে সেটা তারা মানতে চায়নি। তথাকথিত সামাজিক বিবেক হওয়ার চেষ্টা থাকলেও তাদের প্রয়াসগুলো নিছকই বিদ্বেষ, অসূয়া, ঈর্ষার বহিঃপ্রকাশ। তাদের প্রায় প্রতিটি মন্তব্যে থাকে মিথ্যা বা খন্ডসত্য অথবা দ্বিচারিতার ছায়া।

তারা কখনো বলেনা, এই জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধী সকল দলকে নিষিদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই স্বাধীনতাবিরোধী হিংস্র রাজাকারের দল জামায়াতকে সিদ্ধ করেছিলো একজন নামেমাত্র মুক্তিযোদ্ধা, একটি যুদ্ধেও অংশগ্রহণ না করা সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান। দেশীয় রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র, নৃশংসতা, শঠতার অনন্য নজির তৈরী করা জিয়াউর রহমান। যিনি হ্যা-না ভোটের মাধ্যমে কিংবা একজন প্রধান বিচারপতিকে (বঙ্গভবনের শেষ দিনগুলি/বিচারপতি আবু সায়েম) অস্ত্রের মুখে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতা দখল করা সেনা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ১৯৭৮ সালে অসুস্থ মাকে দেখানোর নাম করে জামায়াতের আমির রাজাকার শিরোমণি গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে আনার কারিগর ছিলেন জিয়াউর রহমান। যখন ‘গো.আ.’কে দেশে নিয়ে আসেন জিয়াউর রহমান আইএসআইয়ের পরামর্শে তখনও সেই ‘গো.আ’ পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলো।

তারপর ৭৭-৮১ এবং ৮১-৯৬ টানা ২৫ বছরে হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে জামায়াত। এই প্রগতিশীল কিংবা সুশীলরা সেই পর্ব নিয়ে টু শব্দটি করেননা। দুর্বৃত্তের কৌশলের বিরুদ্ধে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে তার পর্যায়ের কৌশল নিয়ে এগুতে হয় এটি তারা বুঝেও বুঝতে চাননা। কারণ একটাই, অন্ধ শেখ হাসিনা বিদ্বেষ। একজন নারী হাজার বাঁধা ঠেলে ঘরের এবং বাইরের শত্রুতা পেরিয়ে সাংবাধিানিক বাধ্যবাধকতা ঠিক রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন এটি তাদের সহ্য হয় না। কারণ তাদের ভাবনা এই যে, তারা শেখ হাসিনার চাইতে অনেক বেশি উপযুক্ত। বিশ্বের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবাক উত্থানকে তারা সরকারের গৃহীত নীতির ফলাফল হিসেবে মানবার মানসিকতা রাখেনা।

যাহোক, জামায়াত বিষয়ে এখন কিন্তু তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। তাদের ভাবখানা এমন, এতে আবার সরকারের কৃতিত্ব কি? কাজটাতো এমনি এমনিই হয়ে গেছে। হবার কথা ছিলো।

নাহে। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে ওঠা বিষধর সাপ যাদের ইতিহাসে শুধু বিশ্বাঘাতকতা- বেঈমানির ধারাবাহিকতা তাদের সঙ্গে লড়তে গেলে অনেক ভেবেচিন্তে এগুতে হয়। সরকার সেই কাজটিই করেছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদেরকে নিষিদ্ধ হওয়ার পথ তৈরী করেছে। যাতে বৈশ্বিকভাবে কোন কথা বলার সুযোগ না থাকে।

এটাই শেখ হাসিনা। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ইস্পাতদৃঢ় প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাজিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বে দৃঢ় অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য লড়ছেন। কাজ করতে গিয়ে ভুল হতে পারে কিন্তু তাতে আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই। বিদ্বেষ আর সমালোচনা যে এক জিনিস নয় তা বুঝতে হবে সামাজিক মাধ্যমের তথাকথিত আদালতের বিচারকদের। আর না বুঝলে তারা তাদের মানসিক বৈকল্যের আবর্তেই ঘুরপাক খেতে থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের এগিয়ে চলা থামবেনা। শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রা থামবেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *