আবারো অালোচনায় সেই কনস্টেবল শের আলী

 

ঢাকা: আহত শিশু কুলসুমকে বুকে জড়িয়ে অশ্রুসজল পুলিশ কনস্টেবল শের আলীর উর্ধ্বশ্বাসে হাসপাতালের দিকে ছুটে চলার সেই দৃশ্য এখনো অনেকের চোখে জীবন্ত। মিডিয়ায় আলোড়ন তোলা তার সেই কর্মকান্ড দেশ-বিদেশে শুধু ব্যপকভাবে প্রশংসিতই হয়নি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মুখও করেছিল উজ্জ্বল। শের আলীকেও এনে দিয়েছিল মর্যাদাপূর্ণ “রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)”।

সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই আবারো দৃশ্যপটে শের আলী। কিন্তু কিভাবে? তা জানতে একটু পেছনে ফেরা যাক।

সেই ছোট্ট শিশু কুলসুম এখন সুস্থ। এখন সে কক্সবাজারের আনাস বিন মালেক নূরানী মাদ্রাসায় শিশু শ্রেণীতে পড়ে। শের আলী প্রতিনিয়ত তার খোঁজ-খবর রাখে। এবার তার ভাবনায় ছোট্ট শিশু তাহসিন। সিএমপি’তে কর্মরত শের আলী গত ৪ ফেব্রুয়ারী’১৭ খবর পান সি এমপি’র বন্দর বিভাগে কর্মরত ট্রাফিক কনস্টেবল এনামুল হক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ব্যাচমেটের মৃত্যুর খবর পেয়ে মুহুর্তেই ছুটে যায় শের আলী। নিহত এনামুলের রেখে যাওয়া ১১ মাসের ছোট শিশু তাহসিন এর অসহায় মুখ ভাবিয়ে তোলে শের আলীকে। পিতার মৃত্যুতে হঠাৎ করেই অনিশ্চয়তার মুখে পড়া শিশুটির ভবিষ্যতের কথা ভেবে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয় শের আলী। সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা শের আলীর ব্যাচমেটদের কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানায় সে। তার আহ্বানে সাড়া মিল ব্যাপক। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন অনেকেই যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যসহ সাধারণ মানুষ। সবার সহযোগিতায় জোগাড় হয় এক লক্ষ নব্বই হাজার টাকা। এই টাকা শের আলী তার নিহত ব্যাচমেটের রেখে যাওয়া শিশু তাহসিনের নামে সোনালী ব্যাংক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখায় একটি এফডিআর হিসাব খুলে জমা রাখে। উক্ত টাকার একমাত্র স্বত্ত্বাধিকারি শিশু তাহসিন। সে সাবালক না হওয়া পর্যন্ত উক্ত টাকা অন্য কেউ উত্তোলন করতে পারবে না।

নিহত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল এনামুলের স্ত্রী হুরে জান্নাত নির্মার সাথে যোগাযোগ করা হলে ডিএমপি নিউজকে তিনি জানান, প্রতিনিয়ত শের আলী তাদের খোঁজখবর রাখছেন। দুঃসময়ে তাদের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য শের আলীর প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।

শের আলীর ‘কাজ’ এখানেই যেন শেষ নয়।

মানবতার জন্য নিবেদিত যে ব্যক্তি সবসময় তার আশেপাশেই যেন ঘটে যায় হৃদয়বিদারক সব ঘটনা। এর পরের ঘটনা আরও কিছুদিন বাদে । গত ২৬ ফেব্রুয়ারী’১৭ সকাল অনুমান সাড়ে আটটায় সিএমপি’র লালখান বাজার চাঁনমারি রোডে সড়ক দূর্ঘটনায় সামছুন্নাহার নামে এক মহিলাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে। তৎক্ষনাৎ শের আলী তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে ভর্তি করে। সামছুন্নাহারের ছেলেকে ফোন করে খবর দেয় শের আলী। ঐ মা আটদিন হাসপাতালে অবস্থান করেন। এ সময় প্রতিদিন শের আলী ডিউটি শেষ করে ঐ মায়ের খোঁজ-খবর নিতে হাসপাতালে আসত।

এই নিরন্তর ছুটে চলার যুগে যখন মানুষ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত তখন কনস্টেবল শের আলীর মত কেউ কেউ মানবতার ব্যতিক্রমী উদাহরণ হিসেবে আবির্ভুত হয়। এভাবে বার বার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে ডিএমপি নিউজ জানতে চেয়েছিল তার ভাবনা। শের আলীর সাবলীল ও সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘আমার ভাল লাগে’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *