আজ শেখ রাসেলের ৫৪তম জন্মদিন

নিউজ ডেস্ক :

১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের একটি বাড়িতে জন্ম নিয়েছে এক দেবশিশু। যেন ছোট্ট একটা পুতুল। পরিবারের কর্তা রাজনীতির কারণে প্রায় সময়ই কারাবন্দী থাকেন, সে কারণে এই পরিবারে আনন্দের উপলক্ষ খুব একটা আসে না। তাই সদ্যোজাত শিশুটিকে দেখে বড় ভাইবোন হাসু, জামাল-কামালদের আনন্দ যেন আর ধরে না। শিশুটি আর কেউ নয়, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল। আজ তাঁর ৫৪ তম জন্মদিন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসার কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল যদি আজ বেঁচে থাকতেন নিশ্চয়ই পরিবারের সবার ভালোবাসায় তাঁর জন্মদিন উদযাপিত হত। ধুমধাম কি হত? সম্ভবত না। কারণ বঙ্গবন্ধু পরিবারের রক্তে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি মমত্ববোধ আছে কিন্তু বিলাসিতার ব্যাপারটি নেই। তাই আমরা ধারণা করি, আজ শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে নিজের জন্মদিনটি কাটাতেন কোনো বৃদ্ধাশ্রমে বা এতিমখানায়। কিন্তু মাত্র ১০ বছর বয়সে ঘাতকের নির্মম বুলেট প্রাণ কেড়ে নেওয়ায় আজকের দিনে তাঁর কিছুই করা হবে না। শুধু হতভাগ্য বাঙালি জাতি তাঁকে স্মরণ করবে পরম মমতায়।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট এক কালরাতে বাংলাদেশকে ছায়া পাকিস্তানকে বানানোর স্বপ্নে বিভোর একদল বিপথগামী সেনাসদস্য সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় শিশু রাসেলকেও। সেদিন যদি শেখ রাসেলের মৃত্যু না হত তাহলে আজ কী হতেন তিনি? বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে জানা যায়, শৈশবেই সাহস, দৃঢ়তা ও মমত্ববোধের দারুণ দৃষ্টান্ত লক্ষ্য করা গিয়েছিল শেখ রাসেলের মধ্যে। তাই পূর্ণাঙ্গ জীবন পেলে নিশ্চিতভাবেই দেশ ও দশের অবদানে অবদান রেখে বড় কিছু হতেন শেখ রাসেল।

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবমাতা দুজনেই ছিলেন দার্শনিক বার্টান্ড রাসেলের ভক্ত। তাঁর নামেই নামকরণ করা হয়েছিল ছোট্ট শেখ রাসেলের। হয়তো শেখ রাসেল নিজের নামকরণের স্বার্থকতা প্রমাণ করে আজ একজন দার্শনিক হতেন। যার চিন্তা, কর্ম, দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের জ্ঞানের রাজ্য সমৃদ্ধ করতো, ছড়িয়ে পড়তো বিশ্বজুড়ে শেখ রাসেলের খ্যাতি।

অথবা শেখ রাসেল হয়তো হয়ে উঠতেন কোনো প্রযুক্তিবিদ। আজ যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় প্রযুক্তিবিদ হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে মাকে সাহায্য করছেন, শেখ রাসেলের হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন হয়তো অনেক আগেই পূরণ করা সম্ভব হতো।

তবে শেখ রাসেল খুব সম্ভবত বাবার মতো দুদে রাজনীতিবিদই হতেন। যার শরীরে বঙ্গবন্ধুর মতো এক অনন্য এক দেশপ্রেমিকের রক্ত তিনি দেশসেবার সর্বশ্রেষ্ঠ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইতেন না বলেই মনে হয়। তাছাড়া শেখ রাসেল যে দেশপ্রেমিক তার প্রমাণ সেই শৈশবেই পাওয়া যায়। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে মাত্র সাত বছর বয়সেই পুলিশের গাড়ি দেখলেই সে ‘হরতাল’, ‘হরতাল’ বলে চিৎকার জুড়ে দিত। স্লোগান দিত ‘জয় বাংলা’। নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করলে পরের দিন সকালে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সঙ্গে শেখ রাসেলও ঘরের ভেতর থেকে বের হয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয় বলে জানা যায়। ওই বয়সেই রাজনীতির প্রতি আকর্ষণ আর দেশের প্রতি মমত্ববোধ তাঁকে পিতার মতো রাজনীতির দিকে ধাবিত করতো বলে ধারণা করলে ভুল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আসলে শেখ রাসেল হতে পারতেন অনেক কিছুই। পিতার মতো তেজস্বী ও মেধাবী ছিলেন তিনি। আর সবচেয়ে বড় কথা তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক। তাই যে পেশাতেই তিনি নিজেকে নিযুক্ত করতেন তার মাধ্যমে বাঙালি ও বাংলাদেশ উপকৃত হতো নিঃসন্দেহে।

কিন্তু এসব কিছুই আর সম্ভব হয়নি। পঁচাত্তরের এক কালরাতে ঘাতকের বুলেটের নির্মম আঘাতে থেমে যায় শেখ রাসেলের জীবন। শেখ রাসেলের জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাপ্তি ঘটে বিপুল সম্ভাবনার, আমাদের হাত গলে পড়ে যায় মুঠো মুঠো স্বপ্ন।

অকালে প্রাণ হারানো অমিত সম্ভাবনাময় শেখ রাসেলের জন্মদিনে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *