সাতক্ষীরায় ৫৭৭টি দুর্গাপূজার মন্ডপ প্রস্তুত

শেখ আমিনুর হোসেন,সাতক্ষীরা: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলায় শারদোৎসবের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। এ বছর জেলায় ৫৭৭টি সার্বজনীন ও পারিবারিক দুর্গাপূজা হচ্ছে। আগামি ৮ অক্টোবর সোমবার পূণ্য মহালায়ার মধ্য দিয়ে মর্ত্যধামে দেবীপক্ষের শুরু। আর ১৫ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর শুরু। ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’ ঢাক ও কাসির বাজনা ছাড়াও মায়েদের কপাল সিন্দুরে রাঙানোর মধ্য দিয়ে ১৯ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয়া দুর্গাপুজা।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৫৭৭টি সার্বজনীন ও পারিবারিক দুর্গাপূজা হচ্ছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ১০৬টি, তালায় ১০৬টি, পাটকেলঘাটায় ৭৮টি, আশাশুনিতে ১০৭টি, শ্যামনগরে ৬৬টি, কালিগঞ্জে ৪২টি ও দেবহাটায় ২১টি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার দিনব্যাপি পুরাতন সাতক্ষীরা মায়ের বাড়ি, কাটিয়া মায়ের বাড়ি, পলাশপোল, রথতলা, ঝুটিতলা, বাবুলিয়া, ঘোনা ও ঝাউডাঙা হয়ে শ্যামনগরের রড়কুপট ক্লাব সংলগ্ন দুর্গা মন্দির, আড়পাঙাশিয়া শাপলা যুবসংঘ, হরিনগর সার্বজনীন দুর্গামন্দির, কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর জমিদারবাড়ি, গোবিন্দকাটি, কালিবাড়ি, চম্পাফুল, নলতা কালিবাড়ি, দেবহাটার পারুলিয়া, সেকেন্দ্রা চারা বটতলা, নোড়ারচক, আশাশুনি সদর, ধান্যহাটি, কল্যানপুর, কচুয়া, কলারোয়ার সরসকাটি, ধানদিয়া, মুরারীকাটি, পাটকেলঘাটা কালিমন্দির, কুমিরা বাসস্ট্যান্ড, তালা সদর, গোপালপুর সার্বজনীন দুর্গামন্দির ঘরে দেখা গেছে শিল্পীরা মাটির কাজ শেষে প্রতিমা রং করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কয়েকচি মন্ডপে মাটির কাজ শেষে রং দেওয়ার আগে প্রতিমা শুকিয়ে নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন শিল্পীরা।

স্থানীয়রা জানালেন, শরৎকাল মাঝামাঝির দিকে হলেও শিশিরের কোন দেখা নেই। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে শীতের দেখা নেই। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে গরম। এবার মা আসছেন দোলায় ও যাবেন গজে। ফলে মহালয়া শেষ না হতেই ঝড়ের দেখা মিলতে পারে। তবে বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে এবারের দুর্গাপূজা মিলন মেলায় পরিণত হবে। তবে দেবহাটা সীমান্তের ইছামতী নদীতে দু’বাংলার মিলন মেলা না হওয়ায় উভয় পারের বাঙালিরা খানিকটা হতাশার মধ্যে রয়েছেন।

পুরাতন সাতক্ষীরা মায়ের বাড়ি সার্বজনীন দুর্গাপুজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব ব্যানার্জী জানান, এবার মায়ের বাড়িতে মূল প্রতিমার সঙ্গে ২২৫টি অতিরিক্ত মুর্তি তৈরির কাজ চলছে। মাটির কাজ শেষে মঙ্গলবার রঙ টানার প্রাথমিক স্তরের কাজ শেষ হয়েছে। এবার প্রতিমা তৈরির খরচ ধরা হয়েছে ছয় লাখ টাকা। অতিরিক্ত আকর্ষণ থাকায় এবার তাদের মন্ডপের দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাবে বলে তিনি আশাবাদি। দর্শনার্থীরা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা দর্শণ করতে পারে সেজন্য স্বেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে।

ভাস্কর অনিল সরকার জানান, দু’মাস আগে থেকে মায়ের বাড়িতে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছেন তারা। ছয়জন সহযোগিকে নিয়ে তিনে মঙ্গলবার প্রতিমার গায়ে প্রথম পর্বের রং টানার কাজ শেষ করেছেন। অতিরিক্ত ২২৫টি মূর্তি মায়ের বাড়ির দুর্গাপূজার বিশেষ আকর্ষণ। যথাসময়ে প্রতিমা নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সহ-সভাপতি গোষ্ঠ বিহারী মন্ডল জানান, অশুভ শক্তিকে পরাজিত করার মনবাসনা নিয়ে এবার মা দুর্গা দোলায় চেপে মর্তে আসছেন। যাথাযোগ্য উৎসাহ ও উদ্দীপনা ও আড়ম্বরের সঙ্গে এবার শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামি ৮ অক্টোবর সোমবার মহালায়ার মধ্য দিয়ে মহামায়ার আগমনী বার্তা নিয়ে পুজা আনন্দে মেতে উঠবে সাতক্ষীরাবাসী। মহামায়ার আগমনে বিনাশ হবে অশুভ শক্তি। তবে গত বছরে আশাশুনির কচুয়া ও কল্যানপুরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা যাতে এবার না ঘটে সেজন্য তারা প্রশাসনকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন। পূজার আগে সদরের ওয়ারিয়ায় রাধা গোবিন্দ মন্দিরের মুর্তিতে যেভাবে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে তাতে তারা উদ্বিগ্ন। তবে পূজাম-পগুলি যথাসময়ে জেলা প্রশাসন ও হিন্দু কল্যান ট্রাস্টের সহায়তা পাবে বলে তিনি আশাবাদি।

সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এ পূজাকে ঘিরে যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হতে পারে সেজন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *