মৎস্য খাতে নীরব বিপ্লব

নিউজ ডেস্ক :

প্রাচীন কাল থেকে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে তা হলো ‘মাছে ভাতে বাঙালি। ‘ মাছ এদেশের মানুষের প্রধান আমিষ জাতীয় খাদ্য। সারাদেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদ-নদী, খাল –বিল, হাওড়-বাঁওড়। বর্ষাকালে প্রচুর মৌসুমী বৃষ্টিপাত এবং উপযোগী মাটি ও আবহাওয়া বাংলাদেশকে মৎস্য উৎপাদনের এক অপূর্ব লীলাভূমিতে পরিণত করেছে। স্বাধীনতার ৪৬ বছরে বাংলাদেশে মাছ চাষে এক নীবর বিপ্লব সাধিত হয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বর্তমানে মিঠা পানির মাছ উৎপাদন বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এ দেশের মানুষের আমিষের চাহিদার ৫৭ শতাংশ মাছ থেকে মিটানো হয়। দেশের মৎস্য বিজ্ঞানীদের আধুনিক প্রযুক্তি, নতুন জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ কর্মীদের মাধ্যমে এই বিপ্লব সাধিত হয়েছে। ২০১৬- ১৭ অর্থবছরে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। সে হিসেবে জনপ্রতি গড়ে বার্ষিক মাছের পরিভোগ দাঁড়িয়েছে ২৪.২৩ কেজি, যা ২০১০ সালেও ছিল মাত্র ১২ কেজি। অর্থাৎ গত ৮ বছরে বাংলাদেশে মৎস্য পরিভোগের পরিমাণ শতভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই মৎস্য চাষ দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মৎস্য সম্পদ ভূমিকা রাখছে। গত তিন দশকে বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫ গুণ। মাছ চাষীরা উৎপাদিত মাছের ৭৫ শতাংশ বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রি করছেন। মাছ চাষে ও উৎপাদনে এই বিপ্লবের ফলে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে আগামী ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বে যে চারটি দেশ মাছ চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করবে, তার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এরপরই আছে থাইল্যান্ড, ভারত ও চীনের নাম। মাছ উৎপাদনে শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় এগিয়ে আসছে মিয়ানমারও । শুধু দেশ নয়, বিদেশের চাহিদা মেটাতেও এখন মাছ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। গত ১০ মাসে মাছ রপ্তানি করে দেশের আয় হয়েছিল ৪৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে মাছ রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৪২ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

দেশে মৎস্য চাষের পরিমাণ আগের থেকে বৃদ্ধি পাওয়ায় মৎস্য খাতে এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, গাজীপুর, যশোর, বগুড়া ও কুমিল্লা জেলায় পুকুরে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ঘেরে মাছ চাষের ফলে এই অবস্থানে এসেছে বাংলাদেশের মৎস্য খাত। কিছু দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্তের পথে ছিল। এগুলো গবেষণার মাধ্যমে চাষ করার ফলে আবার দেশি প্রজাতির মাছ গুলো দেখা যাচ্ছে। দেশে বিপুল পরিমাণ পাঙাশ, তেলাপিয়া ও রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন বেড়েছে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চীনের উদ্ভাবিত মাছের জাত এখন বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র বলেন যে, দেশে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে চাষাবাদের ফলে মাছের এই বিপ্লব ঘটেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশ মৎস্য খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *