নোয়াখালীতে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের রমরমা বাণিজ্য

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী : নিষিদ্ধ থাকলেও নোয়াখালীর প্রত্যেক উপজেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোটা অংকের ডোনেশন নিয়ে প্রকাশ্যে পাঠ্যপুস্তকের গাইড বই পাঠে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন শিক্ষকরা। গাইডের পাশাপাশি নিন্মমানের নোট বই পাঠেও শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে এ গাইড বই ও নিন্মমানের নোট বই বাণিজ্য চললেও রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছেন প্রশাসন।

বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, নোয়াখালীর সর্বত্রই সরকারের বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ গাইড বই। সরকার সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চালু করে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে অগ্রণী ভূমিকা অব্যাহত রেখেছেন তা ভেস্তে যাওয়ার জন্য অসাধু পুস্তক প্রকাশনী গাইড বইয়ের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে।

জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ডোনেশন নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীতে একাধিক প্রকাশনীর গাইড বই ও নিন্মমানের নোট পাঠ্য করার অভিযোগ উঠেছে। পুস্তক প্রকাশনী গ্লোবাল, গ্লাক্সি, জুপিটার, দিগন্ত, দোয়েল, ইমেইল, ফুলকুঁড়ি, ইন্টারনেট, পাঞ্জেরী, অনুপম, পূথিনিলয়, পপি, মেঘদূত, মালঞ্চ সহ বিপুল সংখ্যক গাইড ও নোট বই প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মোটা অংকের ডোনেশন দিয়ে গাইড বই পাঠ্য করিয়ে প্রকাশনা সংস্থার যোগসাজশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসাধু শিক্ষকরা স্থানীয় লাইব্রেরীর মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে বর্তমানে সব শ্রেণীর গাইড বইয়ের মূল্যবাবদ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

শুধু অর্থ নয়, প্রকাশনীগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের প্রকাশনীর গাইড ও নোট বই পাঠ্য করানোর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দামি ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোবাইল সেট, টেবিল সহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র উপহার দিচ্ছেন। ঘন্টার পর ঘন্টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে আড্ডা জমিয়ে গাইড ও নোট বই পাঠ্য করাতে বন্ধুত্ব স্থাপন করছেন বিক্রয় প্রতিনিধিরা। বিদ্যালয়ে আড্ডা জমানোর সুযোগ নিয়ে ইতিমধ্যে এসব বিক্রয় প্রতিনিধিররা একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ও শিক্ষিকা’কে উত্তাক্ত করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর অভিবাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, শিক্ষকরা জাতির বিবেক। অথচ কিছু অসাধু শিক্ষকই বই কোম্পানীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের পকেট ভারি করতে নিষিদ্ধ গাইড বই পাঠ্য তালিকাভুক্ত করেন। আমরা অভিবাবকরা আমাদের বাচ্চাদের জন্য চড়া দামে সে সব বই কিনতে বাধ্য হচ্ছি।

নীতিমালা অনুমোদন হওয়ার পর প্রকাশনী বিক্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে গাইড ও নোট বই উদ্ধারপূর্বক জরিমানা আদায় করেন। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতেই আবারও নিষিদ্ধ গাইড ও নোট বইয়ে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। জেলার সর্বত্রই প্রকাশ্য খোলামেলাভাবে গাইড ও নোট বই বিক্রি হলেও সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃংখলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কাজী মোহাম্মদ রফিক উল্যাহ বলেন, গাইড বই অনেক আগ থেকেই আমাদের অপচন্দ। তিনি বলেন, গাইড বইয়ের প্রভাবে শিক্ষার্থীরা মূল পাঠ্য বই পড়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায়। গাইড বই নিষিদ্ধ হলেও যতদিন সরকার অথবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুনিদিষ্ট শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না করবেন ততদিন যাবৎ গোপনে গোপনে হলেও এ গাউড বই বিক্রি হবে। তাই গাইড বইয়ের বিকল্প ব্যবহার সরকার নিশ্চিত করবেন বলে আশাবাদী প্রবীণ এ অধ্যক্ষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *