ভারতের সঙ্গে লেনদেনের সম্পর্ক চায় বিএনপি, প্রয়োজনে জামায়াত বাদ | বাংলারদর্পন

নিউজ ডেস্ক :

প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মতো মাঠের বিরোধী দল বিএনপিও জোরালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।

এ জন্য বিএনপির নেতৃত্বের একটি অংশ বিগত কয়েক মাস ধরে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্তত একটি দেশে ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন।

এ ছাড়া চলতি মাসেই বিএনপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ভারতের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও থিংকট্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে অতীতের ভারতবিরোধী মনোভাব থেকে বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছে।

আর ভারতের সঙ্গে লেনদেনের সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে বিএনপিকে ভারতীয় কর্মকর্তারা দলটির সঙ্গে তীব্র ভারতবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাও ছিন্ন করার ইঙ্গিত দিয়েছে দলটি। সেক্ষেত্রে জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোটও রাখবে না বিএনপি।

সেক্ষেত্রে ভারতনীতির পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে বিএনপিকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়ার সংবাদ পর্যবেক্ষক সংস্থা সাউথ এশিয়ান মনিটরের (এসএএম) সাংবাদিক চন্দন নন্দীর এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি নিচে তুলে ধরা হল-

জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে এক বিকালে অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে আমার মোবাইলে। কলকারী ইংরেজিতে জানালেন তার নাম আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী।

কুশলবিনিময়ের পর আমীর খসরু খোলামেলা জানালেন যে তিনি তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ভারত এসেছেন। দলটি ভারতে মূলত ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। রাজনীতিকদের বাইরে তারা ভারতীয় থিংকট্যাংকের কিছু ব্যক্তির সঙ্গেও দেখা করেছেন।

বিএনপি স্পষ্টতই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় রয়েছে। দলের প্রধান খালেদা জিয়া ঢাকা কারাগারে আটক। আটক রয়েছেন দলের আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতা।

এ অবস্থায় বিএনপি ভেবেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীনদের সখ্যতা থাকলেও তারাও আগামী নির্বাচনের আগে নয়াদিল্লির কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

২০১৮ সালের শেষের দিকে কোনো একসময় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। অবশ্য ‘যদি নির্বাচন হয়’–আমীর খসরু যেমনটি বলেছেন। বিএনপি খুব একটা আশাবাদী নয় যে নির্বাচন আহ্বানের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার কথা ভাববেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখানে অনিশ্চয়তার একটা দিক রয়ে গেছে এমনকি বিস্ময়ও হয়তো অপেক্ষা করছে।

‘অবাধ ও মুক্ত নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ প্রচারের সময়েই হেরে যাবে’, মনে করেন আমীর খসরু। যে দলের শীর্ষ নেতারা কারাগারে, যে দলের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন, বিশৃঙ্খলার মধ্যে, সে দলের প্রতিনিধির কাছ থেকে আসা এ বক্তব্যটি যথেষ্ট ভারী। এ বিষয়ে পরে কথা হবে।

আমীর খসরুর টিমের সঙ্গে আরও ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদল আউয়াল মিন্টু এবং দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন কবির। তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব ছিল বিএনপিকে এমনভাব তুলে ধরা যে দলটি বাংলাদেশের রাজনীতির অনাকাঙ্ক্ষিত ইসলামপন্থী ও মৌলবাদী উপাদানগুলোর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। অন্যভাবে বললে এটি ছিল ভারতবিরোধী জামায়াতে ইসলামী (জেইআই) এবং তাদের জঙ্গি সহযোগী দল খেলাফত আন্দোলনের প্রতি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত। হাসিনার আমলে এ দুদলই কঠিন আঘাত পেয়েছে।

এই বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনার আগ্রহ দেখাননি আমীর খসরু। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে ধারণা পাওয়া গেছে যে, খালেদার ছেলে তারেক রহমানের অনুমোদিত বিএনপির এ প্রতিনিধিরা ভারতীয় ক্ষমতাসীনদের মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি যখনই বাংলাদেশে নির্বাচন হোক না কেন, সেটি যেন অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে পারে, সে ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদি প্রশাসনের সমর্থন আশা করেছেন তারা।

স্বাভাবিক যুক্তিতে মনে হবে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেনদরবারই বিজেপির জন্য বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের হবে। কারণ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের তেমন রেকর্ড নেই বিএনপি ও জামায়াতের, তা নয়াদিল্লির ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক আদর্শ যা-ই হোক না কেন। তবে সেখানে একটা কিন্তু রয়ে গেছে।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যুরোক্র্যাসির সূত্রগুলো সাউথ এশিয়ান মনিটরকে (এসএএম) জানিয়েছে, শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় বা সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গ সফরের সময় ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও শেখ হাসিনার মধ্যে প্রকাশ্যে যত সুসম্পর্কই দেখা যাক না কেন, ‘সমস্ত পথই খোলা রাখা হবে। সূত্র এসএএমকে জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ খুব ভালো করেই জানেন যে বাংলাদেশে তাদের অভ্যন্তরীণ নীতির কারণে নির্বাচনে স্বাচ্ছন্দ্যে পার হয়ে যাওয়াটা অত সহজ হবে না এবং তাদের অবশ্যই ভারতের সাহায্য লাগবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *