২৩ জানুয়ারী  সন্ত্রাসী হামলার ৩য় বার্ষিকী

 

 

সৈয়দ মনির অাহমদ> ৫ জানুয়ারী ২০১৪ জাতীয় নির্বাচনে সোনাগাজী উপজেলার উত্তর চর ছান্দিয়া ২ নং ভোট কেন্দ্রে বিএনপি জামাতের বাধা ডিঙ্গিয়ে নির্বাচন কেন্দ্রে এজেন্টের দায়ীত্ব পালন করেছি।  সাহসি কোন অা’লীগ নেতা কর্মী খুজে না পেয়ে ৫ এজেন্টের মধ্যে অাপন তিন ভাই একই কেন্দ্রের এজেন্ট হলাম। সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন চলে। সাড়ে ১০টায় বিএনপি জামায়াতের চতুর্মূখি হামলায় ভোট গ্রহন স্থগিত হয় এবং ঘটনাস্থলে ২ জন নিহত ও ৬ পুলিশসহ শতাধিক অাহত হয়।

সন্ধায় সন্ত্রাসীরা অামাদের বাড়ী ঘর জ্বালীয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশি বাধায় ও জেলা নেতাদের হুমকির পর সাহস করেনি। সোনাগাজীর পশ্চিম বাজারে মা ম্যানশনে নিজের কম্পিউটার প্রশিক্ষন কেন্দ্র ছিল। ১২ জানুয়ারী শেখ হাসিনা শপথ নেয়ার পরও ভোটের দিন থেকে ১৭ জানুয়ারী  পর্যন্ত ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারিনি। ১৭ তারিখ জুম্মার দিন হালিমিয়া মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে দোকানে খুলে কিছু সময় বসলাম।  ঠিক ১২ টায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দুয়ারে এসে হাজির। জনতা ও পুলিশের সহযোগীতায় কোন রকম রক্ষা পেলাম।  আবার ১ সাপ্তাহ গৃহবন্দি। ২৩ জানুয়ারী সন্ধায় ইজতেমায় যাওয়ার জন্য বন্দুরা অাতর বানু মসজিদে একত্রিত হচ্ছে খবর পেয়ে গেলাম।   মসজিদে এশার নামাজ পড়ে ইজতেমা গামীদের বিদায় দিলাম। পিছনে ফিরে দেখি চতুর্দিকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ঘিরে ফেলেছে। কিছুই করার নেই ডানে বামে সামনে পিছনে সবাই অস্ত্রধারী। খবর দিলাম ওসি সুভাস পালকে। পুলিশ অাসার অাগেই মাথায় ৫টি, মুখে ১টি ও চোখের উপর ১ টি ধারালো অস্ত্রের কোপ। অামাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে খালাতো ভাই মোশারফ ও একটি দামার কোপ খেয়েছিল। দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছিল সিএনজি চালক কামাল। সোনাগাজী হাসপাতালে সেলাই শেষে ফেনী কনসেপ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হল। রাতেই দুই সাংসদ সহ অনেক জনপ্রতিনিধি ও শুভাকাঙ্খী দেখতে গেলেন। শেষ রাতে কনসেপ্ট হাসপাতালে দুই প্রভাবশালী অা’লীগ নেতা গিয়েছিলেন অামাকে শাস্বরোধ করে হত্যা করার জন্য। বিনিময়ে তারা হত্যা মামলা পাবে,  লাশের বানিজ্য হবে।  সে রাতে ওসি সুভাসের বদলি হয়েছিল।  সকালে অায়নার সামনে দাড়িয়ে দেখি একটি দাঁত হারিয়েছি। ২ দিন পর নার্স বলেছে অামার মাথায় ২১ টা সেলাই। ৫ দিন পরে হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেয়ে বাড়ীতে অাসলেও তিনমাস সময় লেগেছে সুস্থ হতে।তবে রক্ত দেশ ও দলের জন্য গেছে।  কিন্তু লক্ষাধিক টাকা নষ্ট হয়েছে পরিবারের।   জানামতে ২ হাসপাতাল মিলে অর্ধ শতাধিক সংবাদ কর্মী অামাকে দেখতে গিয়েছেন। তবে কোন পত্রিকায় খবর অাসেনি।  যারা স্বচক্ষে দেখেছে তাদের ভাষ্যমতে, অামার সব জামা কাপড় বেয়ে বৃষ্টির মত রক্ত ঝরেছে। ভৈরব মোড়ে পুরো রাস্তা, সিএনজি, ও হাসপাতালের বিছানা রক্তাক্ত হয়েছে।

পরদিন ছোট ভাই বাদী হয়ে মডেল থানায় অভিযোগ দেয়। ওই মামলায় কয়েকজন কারাবরন করে জামিনে অাছে।  মামলাটি এখনো ফেনী অাদালতে বিচারাধীন।

এর অাগে, ২০০১ সালে ১অক্টোবর এর নির্বাচন পরবর্তিতে এলাকা থেকে ১ম বার ও সোনাগাজী বাস স্ট্যান্ড থেকে ২য় বার অপহরনের শিকার হয়েছি। ছাত্রলীগ করতাম বলে বড় অপরাধী ছিলাম তাই দুঃখ ছিলনা।

২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে প্রায় ৫০ জন যুবদল ছাত্রদল ক্যাডার বৃদ্ধ পিতা মাতা সহ অামাদের পরিবারের সবাইকে ব্যাপক নির্যাতন করে সব লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। সোনাগাজী সরকারী কলেজে অধ্যায়নরত ছিলাম।তৎকালীন উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি কে অামার মা অনুরোধ করেছিল, অামাকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য কিন্তু দেয়নি। এর পর চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ৭টি বছর অবস্থান শেষে ২০০৮ সালের শেষ দিকে গ্রামে এসেছিলাম।

দুঃখ একটাই সোনাগাজী উপজেলায় বর্তমানে ১৩৭ জন জনপ্রতিনিধি অা’লীগ সমর্থীত, কেউ নিজের অস্তিত্ব, দলের অস্তিত্ব নিয়ে ভাবেনা।  সবাই দুধ কলা দিয়ে বিষধর সাপ লালন করছেন। সাবধান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *