টেকনাফ বিএনপির সব নেতা-কর্মীই ইয়াবা ব্যবসায়ী ! বাংলারদর্পন 

নিউজ ডেস্ক: কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ হল মরণঘাতী নেশা ইয়াবা পাচারের মূল ট্রানজিট পয়েন্ট। এই পয়েন্ট দিয়ে কোটি কোটি পিস ইয়াবা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এখান থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়িয়ে মরণ নেশা।

অভিযোগ রয়েছে যে এই উপজেলায় বিএনপির পাতি নেতা থেকে শুরু করে পদপ্রাপ্ত নেতারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। উপজেলা বিএনপির সভাপতি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার করা ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকাভুক্ত। বিএনপির অধিকাংশ জনপ্রতিনিধির নামও রয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায়।

ইয়ার ব্যবসা করে বিগত পাঁচ বছরে টেকনাফের বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের অনেক নেতাই কোটিপতি বনে গেছেন।

ইয়াবা ব্যবসায়ীদের যে তালিকায় আওয়ামী লীগের এমপি আব্দুর রহমান বদিসহ বিভিন্ন নেতা ও জনপ্রতিনিধির নাম আসছে, একই তালিকায় বিএনপি ও তাদের দল থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নামও রয়েছে।

টেকনাফ বিএনপির সভাপতি জাফর আলম হলেন অস্ত্র অঞ্চলের মুকুটহীন ইয়াবা সম্রাট। তার বাড়ি টেকনাফের হ্নীলার পূর্ব লেদায়। সরকারি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, জাফর আলমের একটি ইয়াবা সিন্ডিকেট রয়েছে। নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে নাফ নদী দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে সারাদেশে পাচার করেন তিনি।

টেকনাফ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহও ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। ইয়াবা ব্যবসা করে তার পরিবারের সদস্যরা এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। আবদুল্লাহর বোন জামাই অন্যতম ইয়াবা ব্যবসায়ী টেকনাফের শীলবনিয়া পাড়ার ডা. হানিফের ছেলে হাজি সাইফুল করিম। টেকনাফ বিএনপির প্রভাবশালী এই নেতার দুই ভাই জিয়াউর রহমান ও আবদুর রহমান তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তাদের নামে একাধিক মাদক মামলাও রয়েছে।

টেকনাফ পৌর বিএনপির সভাপতি রাজ্জাক মেম্বারের পুরো পরিবার ইয়াবা ব্যবসা করেন। তার ছেলে কক্সবাজার জেলা ছাত্রদল নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ২১ লাখ টাকা ও ৭০ হাজার পিস ইয়াবা পাওয়া গিয়েছিল।

ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় আছেন টেকনাফ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল আমিন আবুল।

টেকনাফ সদর বিএনপির সভাপতি আলম মেম্বার। তার পরিবারের একাধিক সদস্য তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। আলম মেম্বারের ছোট ভাই শামসু আলম কালু ৭ লাখ ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ার পর এখন ১০ বছরের সাজা ভোগ করছেন।

এছাড়াও টেকনাফ সদরের বিএনপি নেতা হামিদ হোসেন (হোটেল স্কাই ভিউর মালিক) তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত বিএনপি নেতা-কর্মীদের তালিকা দীর্ঘ। এই লম্বা তালিকায় আছেন, টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ও বিএনপি নেতা শাহপরীর দ্বীপের মো. ইসমাইলের নামও আছে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায়। টেকনাফ পৌরসভার মধ্যম জালিয়াপাড়া যুবদলের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ (৩৫) তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। টেকনাফ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আলীর ছেলে রাশেদুল করিম মার্কিন (৩৭) একজন তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী।

টেকনাফ বিএনপি নেতা ও হ্নীলা ইউপি সদস্য শামসুল আলম বাবুল (৩৮) এবং হ্নীলা ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা জিয়াউল বশির শাহীনও (২৫) তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। টেকনাফ উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পদক নুরুল হুদাও জড়িত এই ব্যবসায়। তার বাবার নাম মেীলভী রুস্তম আলী, বাড়ি পশ্চিম সিকদারপাড়া, হ্নীলা। সরকারি সংস্থার তথ্যে, নুরুল হুদা দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত।

সরকারি তালিকা অনুযায়ী দেশের অন্যতম শীর্ষ ইয়াবা পাচারকারী হলেন- হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও জেলা যুবদল নেতা মো. আলী(৩৩)। তিনি ইয়াবা ব্যবসা করে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বিএনপি নেতা রাকিব আহমদও (৪১) তালিকাভুক্ত ইয়াবা পাচারকারী।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজু হক টুটু জানান, টেকনাফে বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের এই শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও জানান, মাদকবিরোধী অভিযান টের পেয়ে অনেকেই আত্মগোপন করেছেন। তবে শিগগিরই তারা আইনের আওতায় আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *