মাদক নির্মূলে আইনি অভিযানের পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধ | বাংলারদর্পন 

নিউজ ডেস্ক :

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানকে সামনে রেখে সারা দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে নেমেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

মাদকবিরোধী অভিযানের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সমানতালে অভিযান চলবে। প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।’

এছাড়া র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে জাতিগত যুদ্ধ করতে হবে। ৭১ সালের পর বিভিন্ন ঐক্যবদ্ধ যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হয়েছি। এবারও আশা করি এর একটা ভালো ফল পাব, বিজয়ী হবো।’ তিনি বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। মাদকের খুচরা বিক্রেতা থেকে শুরু করে ডিলার পর্যন্ত, সে যেই হোক, তাকে এই কাজ ছাড়তে হবে। মাদকের শিকড়-বাকড়সহ তুলে নিয়ে আসব। কেউ আমাদের অপারেশনের বাইরে নয়।’

আমাদের সমাজে সাম্প্রতিক সময়ে মাদকের ভয়াবহতা উপলদ্ধি করেই প্রধানমন্ত্রী মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন। তবে মাদক যেহেতু একটি সামাজিক ব্যাধি, তাই আমাদের সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে মাদকের বিরূদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

একটা সমাজের মূল উপাদান হচ্ছে পরিবার। তাই মাদক নির্মূলে সামাজিক প্রতিরোধের শুরুটা নিজের পরিবার থেকেই করতে হবে। নিজের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের বিষয়ে খোঁজ খবর রাখতে হবে। বিশেষ করে পরিবারের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তারা কোথায় যাচ্ছে কাদের সাথে মিশছে, কিংবা তাদের আচার আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে কি না ইত্যাদি বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের পরিবারগুলোতে ছোটবেলায় বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়া হলেও অধিকাংশ পরিবারেই মাদকের ভয়াবহতার সম্বন্ধে কোন শিক্ষা দেওয়া হয়না। যার ফলে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা মাদক সম্পর্কে এক ধরণের অজ্ঞতা থেকে এবং মাদকসেবন করাকে এক ধরণের আধুনিকতা কিংবা তথাকথিত স্মার্টনেস মনে করে মাদকে জড়িয়ে পরে।

একটি পরিবারের কোনো সদস্য মাদকের অন্ধকার জগতে প্রবেশ করলে তার কুপ্রভাব মাদকসেবী সহ তার পরিবারের উপরও পরে। যে পরিবারে ন্যূনতম একজন মাদকসেবী আছে ঐ পরিবারের শান্তি বিনষ্ট হতে আর কোনো কিছুর দরকার হয়না।

মাদক নির্মূলে সামাজিক প্রতিরোধের অংশ হিসেবে সমাজে সরকার এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে সচেতনতামূলক সভা সেমিনার আয়োজন করে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষজনকে অবহিত করা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন মসজিদের সম্মানিত ইমামরা। ইসলামের দৃষ্টিতে মাদকসেবী এবং মাদকব্যবসায়ীদের কিভাবে বিবেচনা করা হয় এবং তাদের জন্য মৃত্যুর পরে কি ধরণের ভয়ঙ্কর শাস্তি অপেক্ষা করছে সে বিষয়ে মানুষকে অবহিত করতে হবে।

বর্তমানে আমাদের দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধমের ব্যাপক প্রসারের ফলে যেকোনো আন্দোলন কিংবা প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রে এই মাধ্যম গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাই মাদক নির্মূলে সামাজিক প্রতিরোধের অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মাদকের ভয়াবহতা কিংবা কুফল নিয়ে সচেতনতামূলক লেখা, ব্যানার ইত্যাদি প্রচার করে এই সামাজিক ব্যাধি নির্মূলে সুফল পাওয়া যাবে।

মাদক নির্মূলে সামাজিক সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে। যারা এরই মধ্যে মাদকাসক্ত হয়েছে, তাদেরও সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বাড়াতে হবে মাদক নিরাময়কেন্দ্রের সংখ্যাও। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমাজে মাদকের নীল ছোবলের কুপ্রভাব উপলদ্ধি করে এবং তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সর্বপ্রথম আইন করে মাদকদ্রব্য সেবন এবং বহন নিষিদ্ধ করেছিলেন। সর্বোপরি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে যার যার অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এ যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে। এই যুদ্ধে সফল হওয়ার মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *