বাদীকে হত্যার হুমকি : বোমা ও চিঠি উদ্ধার করেছে পুলিশ – বাংলারদর্পন

বাংলারদর্পন : তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নুর হোসেন সবুজকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছিল এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। ২০১৬ সালেন   ১৭ এপ্রিল রাত আনুমানিক ৮ ঘটিকার সময় ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার চর সাহাভিকারী গ্রামে কারামতিয়া বাজারস্থ তিন রাস্তার মোড়ে নিহত সবুজের চায়ের দোকানে ঘটনাটি ঘটে। মর্মান্তিক এই ঘটনায় ২০১৬ সালের  ১৯ এপ্রিল সবুজের পিতা সাহাব উদ্দিন বাদী হয়ে সাইফুল ইসলাম জুয়েলকে প্রধান আসামী করে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৭-৮ জনকে আসামী করে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

উল্লেখিত আসামীরা হল, সাইফুল ইসলাম জুয়েল (২০) পিতা-নুর আলাম মেম্বার, সালাউদ্দিন খোকন (৩০) পিতা- মোরশেদ আলম, নুর আলাম মেম্বার (৫৫), পিতা- মৃত সফিউল্যাহ, মোরশেদ আলম (৬০) পিতা- মৃত সফিউল্যাহ, সর্ব সাং- উত্তর চর সাহাভিকারী (নাদের বলি বাড়ী) মাসুদ (৩০) পিতা- মৃত নুরনবী, সাং- উত্তর চর সাহাভিকারী (নুর নবীর বাড়ি), সর্ব থানা- সোনাগাজী। জনি (২৫), পিতা- শাহজাহান, সাং- চর হাজারী, শোভন (২০) পিতা- মফিজ, সাং- রংমালা, সর্ব থানা- কোম্পানীগঞ্জ। সোহাগ (১৮)পিতা- মহিব উল্যাহ, সাইফুল ইসলাম (২০) পিতা-মানিক, সর্ব সাং-দক্ষিণ চর সাহাভিকারী, থানা- সোনাগাজী।

দীর্ঘ তদন্তের পর সোনাগাজী মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মেজবাহ উদ্দিন ২০১৬ সালের  ৭ ডিসেম্বর মামলার চার্জসিট আদালতে প্রেরণ করেন। চার্জসিট অনুয়ায়ী উল্লেখিত ৯ আসামীর মধ্যে এজাহার নামীয় আসামী সাইফুল ইসলামকে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে কোন সাক্ষপ্রমাণ না পাওয়ায় তাহাকে অত্র মামলার আসামী থেকে অব্যাহতির জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রার্থনা করিলেন। অন্যদিকে অজ্ঞাতনামায় ৭-৮জন আসামীর মধ্যে কাউকে চার্জসিটে অর্ন্তভুক্ত না করায় হতাশায় ভুগছেন নিহতের পরিবার।

মামলার বাদী সাহাব উদ্দিন জানান, আমি হতদরিদ্র হওয়ার কারণে আমার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছি না। দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও অপশক্তির কারণে প্রশাসন আসামীদেরকে আইনের আওতায় নিচ্ছেন না এবং মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করা হয়নি। নিহত সবুজের পিতা আরো অভিযোগ করে বলেন, সবুজ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী । কিন্তু তারা ক্ষমতাশালী হওয়ার কারণে বিভিন্ন মহলের চাপে আমরা তাদেরকে এজাহারভুক্ত আসামী করতে ব্যার্থ হয়েছি। ইতিমধ্যে তারা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমাকে ও আমার পুত্র বধু (সবুজের স্ত্রী), সবুজের শিশু সন্তান ইমরান, আমার ছোট ছেলে আরিফ কে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।

সবুজকে হত্যার পর এ পর্যন্ত ৮/১০ বার আমাদের বড়িতে বোমা মেরেছে সন্ত্রাসীরা ।  হত্যা করবে বলে বার বার চিঠি দিয়েছে এবং মামলা তুলে নিতে হুমকি -ধমকি দিচ্ছে। আমি ফেনী পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করে ও কোন সুফল পাইনি। অভিযোগ করার পর, অভিযোগ পত্রের কোন হদিস মেলেনি।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি হুমায়ুন কবির  কে মৌখিক ভাবে একাদিক বার অভিযোগ করেছি এবং লিখিত অভিযোগ করেছি।

সর্বশেষ গত ৬ ডিসেম্বর  বুধবার রাতে সন্ত্রাসীরা আমার বসত ঘর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে  ২ টি চিঠির সাথে দুইটি বোমা রেখে গেছে সন্ত্রাসীরা। আমরা পুলিশ কে খবর দিলে, পুলিশ এসে চিঠি ও বোমা উদ্ধার করে নিয়ে যান। বর্তমানে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। সবুজের বাবা আরো বলেন,  মামলার ১ নং ও ২ নং আসামী বিদেশে পালিয়ে গেছে। ৩ নং ও ৪ নং আসামীরা বিদেশ যেতে চেষ্টা চালাচ্ছে। আসামীরা সবাই বিদেশ চলে গেলে আমি ছেলে হত্যার বিচার পাবোনা। আসামীরা বিদেশ যেতে না পারে, সে বিষয়ে আমি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি এবং বিজ্ঞ আদালতেও আবেদন জানিয়েছি।

সবুজের স্ত্রী রজিনা আক্তার বলেন, আমি ঘর থেকে বাহির হইলে পথে-ঘাটে আমাকে ইভটিজিং করে এবং কুপ্রস্তাব দেয়। রোজিনা আক্তার আরো অভিযোগ করে বলেন, মামলা প্রত্যাহার করে না নিলে আমার শিশু সন্তানকে তারা হত্যা করবে।

মামলা সূত্রে জানাযায়, এজাহার নামীয় ৮নং আসামী সোহাগ, ৩নং আসামী নুর আলম মেম্বার, ৪ নং আসামী খুরশিদ আলম কে পুলিশ  গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বর্তমানে সবাই জামিনে আছেন।  এবিষয়ে জানতে চাইলে সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির জানান, আসামীদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আশা করি দ্রুত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *