বাংলারদর্পন || নেতাকর্মীদের কাছে চট্টলবীর খ্যাত বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। রোববার (১২ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে মহিউদ্দিনকে।
বিকেল ৩টার দিকে স্কয়ার হাসপাতালের হেলিকপ্টার মহিউদ্দিনকে নিয়ে রওনা দেওয়ার সময় চট্টগ্রামের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় নেতাকর্মীদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিনকে বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ার পর শনিবার রাত ১১টার দিকে তাকে নগরীর মেহেদিবাগে ম্যাক্স হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
মহিউদ্দিনের চিকিৎসকদের একজন প্রফেসর ডা.নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, মৃদু হার্ট অ্যাটাক এবং কিডনির সমস্যার কারণে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। হাসপাতালে ভর্তির পর রাত ৩টার দিকে তার অবস্থার অবনতি হয়। তবে সকালে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। বর্তমানে তার শারিরীক অবস্থা স্থিতিশীল আছে।
চিকিৎসকদের পরামর্শে রোববার সকালে মহিউদ্দিনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেখান থেকে তাকে ভারতের চেন্নাই অথবা সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন।
এদিকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্সে করে মহিউদ্দিনকে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়। বিকেল ৩টায় তাকে নিয়ে হেলিকপ্টার ঢাকার উদ্দেশ্যে স্টেডিয়াম ছেড়ে যায়। হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম থেকে মহিউদ্দিনের সঙ্গে যান ছোট ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন।
মহিউদ্দিনের বড় ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী ঢাকায় অবস্থান করছেন।
অসুস্থ মহিউদ্দিনকে বিদায় জানাতে চট্টগ্রামের মেয়রের সঙ্গে স্টেডিয়ামে ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নগর আওয়ামী লীগের শফিক আদনান, শফিকুল ইসলাম ফারুক, জামশেদুল আলম চৌধুরী, হাসান মনসুর, কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, গিয়াসউদ্দিন, হাসান মুরাদ বিপ্লব ও নীলু নাগসহ থানা-ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা।
নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ ও মাহবুবুল হক সুমন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, নগর যুবলীগের সদস্য শেখ নাছিরউদ্দিনও স্টেডিয়ামে ছিলেন।
নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন এবং চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হক মাহমুদও স্টেডিয়ামে ছিলেন।
এছাড়া স্টেডিয়ামের মূল ফটকের বাইরে অপেক্ষমান ছিলেন শত, শত নেতাকর্মী। তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। এরপরও নেতাকর্মীদের ভিড়ে অ্যাম্বুলেন্স থেকে মহিউদ্দিনকে নামিয়ে স্ট্রেচারে করে হেলিকপ্টারে নিতে বেগ পেতে হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে বাধ্য হন।
এরপর মহিউদ্দিনের জামাতা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.সেলিম আকতারসহ কয়েকজন চিকিৎসক এবং আওয়ামী লীগ নেতারা মিলে মহিউদ্দিনকে হেলিকপ্টারে তুলে দেন।
মহিউদ্দিনকে যখন অ্যাম্বুলেন্স থেকে স্ট্রেচারে শুইয়ে নামানো হয়, তখন আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন, মফিজুর রহমান, কাউন্সিলর নীলু নাগ, যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চুসহ কয়েকজন নেতা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও এসময় কাঁদতে থাকেন। এসময় সিনিয়র নেতারা তাদের সান্ত্বনা দেন।
টানা তিনবার নির্বাচিত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ২০১০ সালে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে পরাজিত হন। এরপরও চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বড় অংশের নিয়ন্ত্রক মহিউদ্দিনকেই ভাবা হয়। চট্টগ্রামের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে আন্দোলনে এখনো মহিউদ্দিনই নিয়ামক, এমনটাই মনে করেন বন্দরনগরীর মানুষ।