বাংলারদর্পন,
ফরিদপুর।
একজন সরকারি রেজিস্ট্রারের বেতন কত? বছরে তার আয় কী করে কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়? ফজলার রহমান এমন অট্টালিকা কীভাবে গড়লেন? আলফাডাঙ্গার কুচিয়া গ্রামের মানুষের মুখে মুখে এখন এসব প্রশ্ন। উত্তর খুঁজে না পাওয়া গেলেও আলফাডাঙ্গায় ছড়িয়ে পড়েছে বাগেরহাটের রেজিস্ট্রার ফজলার রহমানের গ্রেফতারের বিষয়টি। দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় গত সোমবার দুপুরে বাগেরহাট শহরের জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় তাকে আদালতের মাধ্যমে বাগেরহাট জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ফজলার রহমান ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার
কুচিয়া গ্রামের আবদুল মান্নান মোল্লার ছেলে।
ময়মনসিংহের ভালুকা থানার পালগাঁও মৌজায় ২০১৩ সালে ছয়টি দলিলের মাধ্যমে বন বিভাগের ৯ দশমিক ৬৪ একর জমি জালিয়াতি করে বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলেন ফজলার রহমান। তখন তিনি ভালুকার সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন। পরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ঘুরে বাগেরহাটের জেলা রেজিস্ট্রার হন।
ফজলার রহমান নিজ জেলা ফরিদপুরে অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। গ্রামের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন বিশাল অট্টালিকা। আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের কুচিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ১৫ শতাংশ জায়গাজুড়ে আধুনিক সজ্জায় সজ্জিত বিলাসবহুল অট্টালিকা। দেখতে প্রাসাদোপম। এলাকাবাসী ওই বাড়িটিকে রাজপ্রাসাদ বলে ডাকে।
বাড়ির কাজে নিয়োজিত শ্রমিক হাবিবুর রহমান জানান, বাড়িটির সব নির্মাণ উপকরণ আনা হয়েছে বিদেশ থেকে। টাইলস, লাইটসহ অন্য জিনিসপত্র ইতালি ও ভারত থেকে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি বাড়িটিকে রাজপ্রাসাদের আদলে সাজাতে।’
বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আনিসুর রহমান জানান, দেড় বছর ধরে বাড়িটির কাজ চলছে। আর দেড় মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলার এক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, আলফাডাঙ্গা বাজারের দক্ষিণ পাশে বাকাইল রোডে ম্যাকজিম গ্রুপের ৫০ লাখ টাকার জমি কিনেছেন ফজলার রহমান। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আকরাম হোসেনের বাড়ির পাশে আসাদ ডাক্তারের তিন শতাংশ জমিও কিনেছেন তিনি। উপজেলা রেজিস্ট্রি অফিসের পাশে তার ভাই কুতুবুদ্দিনের নামে একতলা বাড়িসহ জায়গা কেনা হয়েছে। বুড়াইচ ইউনিয়নের কোটরাকান্দি মৌজায় ফসলি জমি কেনা হয়েছে ছেলে ফয়সাল রহমান, পিয়াস রহমান, মিজানুর রহমান এবং বোন মিনার নামে। ওই এলাকায় সাড়ে সাত একর জমি কিনেছেন তিনি।
গোপালপুর ইউনিয়নের টেগরডাঙ্গা, কাতলাসুর, পবনবেগ ও কুচিয়া গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ৩০ একর ফসলি জমি কিনেছেন তিনি। এ ছাড়া প্রয়াত স্ত্রী পাপিয়া আক্তারের নামেও রয়েছে অঢেল সম্পদ।
এর বাইরে ফরিদপুর শহর ও শহরের আশপাশে জায়গা কিনেছেন ফজলার রহমান। এর মধ্যে শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় থেকে একটু ভেতরে ৪০ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি।
ফরিদপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি প্রফেসর শাহজাহান বলেন, ‘দেশের চলমান উন্নয়নের ধারাকে ব্যাহত করছে দুর্নীতি। একজন সরকারি কর্মকর্তার পক্ষে এভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া কী করে সম্ভব? তাদের কারণেই সরকারের দুর্নাম হচ্ছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হলে সরকারের দুর্নাম ঘুচবে।