ইতিহাসের পাতায় মুক্তিযোদ্ধা ‘শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন’

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
১৯৬৯ সাল। আগরতলা মামলা, স্বৈরাচার আয়ুব বিরোধী আন্দোলন ইত্যাদি ইস্যুতে উত্তপ্ত রাজপথ রূপ নিচ্ছে রণাঙ্গনে। কোলে সন্তান নিয়ে সে সময় মিছিল জনসভায় নিয়মিত যোগ দিতেন এক নারী। নাম সেলিনা পারভীন। নিজ হাতে গড়ে তোলেন ‘শিলালিপি’ নামে একটি পত্রিকা যার একধারে সম্পাদক এবং প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করেন সেলিনা পারভীন। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে এবং পাকিস্তানী দমন-পীড়নের বিপক্ষে অবিরত সোচ্চার ছিল এই পত্রিকার কণ্ঠস্বর।
—————-
এরই মাঝে বছর গড়িয়ে এক সময় এলো আমাদের স্বাধীনতার সেই অন্তিম মুহূর্ত। বর্বর পাকবাহিনীর অত্যাচারে যখন ঢাকা ছেড়ে প্রাণভয়ে মানুষ পালাচ্ছে দিগ্বিদিক সেখান সেলিনা পারভীন ছিলেন সত্য প্রচারে অবিচল। জীবনের মায়া উপেক্ষা করে ছিলেন এই মৃত্যুপুরীতে এবং অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে চালু রাখেন ‘শিলালিপির’ প্রকাশনাও। কিন্তু জানতেন না নিজ হাতে গড়া সন্তান তুল্য এই পত্রিকায় হবে তার মৃত্যুর কারণ।
পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানী জেনারেল রাও ফরমান আলী যখন আমাদের এদেশীয় কিছু পশুর (গোলাম আজম,নিজামী,মুজাহিদ,চৌধুরী মঈনুদ্দীন,মওলানা মান্নান, আশ্রাফুজ্জামান) সাথে নীল নক্সা করছেন আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার তখনই শিলালিপির প্রকাশনীর জন্য সেলিনা পারভীনের নাম তোলা হয় কিলিং লিস্টে।
—————-
১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল ৷ দেশ স্বাধীন হতে আর মাত্র তিন দিন বাকি । বেশ কিছু অঞ্চল ইতিমধ্যে মুক্ত হয়ে গেছে ৷সাংবাদিক সেলিনা পারভীন তখন বাস করতেন সিদ্ধেশ্বরীতে। ১১৫নং নিউ সার্কুলার রোডে তার বাড়ীতে থাকতো তিনজন মানুষ- তার পুত্র সুমন, মা আর তার ভাই জনাব উজির ৷ সেদিন শীতের সকালে তারা সকলেই ছিলেন ছাদে। সেলিনা পারভীন সুমনের গায়ে তেল মাখিয়ে দিচ্ছিলেন। সুমন যখন ছাদে খেলাধুলা করছিল তখন সেলিনা পারভীন ছাদে একটা চেয়ার টেনে একটি লেখা লিখছিলেন।
শহরে তখন কারফিউ ৷ রাস্তায় মিলিটারি৷ পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য বিমান থেকে চিঠি ফেলা হচ্ছে৷ হঠাত দূরে একটা গাড়ির আওয়াজ হলো ৷ সুমনদের বাড়ীর উল্টো দিকে খান আতার বাসার সামনে E.P.R.TC-এর ফিয়াট মাইক্রোবাস ও লরি থামলো ৷ সেই বাসার প্রধান গেইট ভেঙে ভিতরে ঢুকে গেল কিছু আল বদর কর্মী৷ তাদের সবাই একই রঙের পোশাক পরা ও মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা৷ সুমনদের ফ্ল্যাটে এসে একসময় কড়া নাড়ে তারা ৷
সেলিনা পারভীন নিজে দরজা খুলে দেন৷ লোকগুলো তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এবং এ সময় সেলিনা পারভীনের সাথে লোকগুলোর বেশ কিছু কথা হয় ৷ তাঁরই হাতের গামছা দিয়ে চোখ ও হাত বেধে ফেলে, এরপর তারা সেলিনা পারভীনকে তাদের সাথে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্থানিদের এদেশিয় দালাল অালবদর বাহিনী৷ নেতৃত্বে ছিল তাদের কমান্ডার ইনচার্জ চৌধুরী মইনুদ্দীন৷
—————-
১৮ ডিসেম্বর সেলিনা পারভীনের গুলিতে-বেয়নেটে ক্ষত বিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। খুব শীতকাতুড়ে সেলিনার পায়ে তখনও পড়া ছিল সাদা মোজা। এটি দেখেই তাঁকে সনাক্ত করা হয় ।
১৪ ডিসেম্বর আরও অনেক বুদ্ধিজীবীর মতো পাকিস্তানের দালাল আলবদর বাহিনীর ঘৃণিত নরপশুরা সেখানেই সেলিনা পারভীনকে হত্যা করে ৷১৮ ডিসেম্বরেই তাঁকে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে সমাহিত করা হয়৷
——————-
২০০৫ সালে শহীদ সেলিনা পারভীনকে সম্মান জানানোর জন্য মগবাজার, মৌচাক এর রাস্তার নাম করণ করে ‘শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক’ করা হয় ৯ বছর সংগ্রম করে। কিন্তু এই নামকরণ শুধু কাগজে কলমে এবং নামফলের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ । প্রতিদিন হাজার হাজার তরুণ, যুবক এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায় এই সড়ক দিয়ে কিন্তু কজন জানে এই নারীর আত্মত্যাগের কথা?
—————-
সুমন জাহিদ৷
মুক্তিযোদ্ধা ‘শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন’ এর সন্তান৷
Related News

নোয়াখাালীতে মাদ্রাসাছাত্রীকে গণধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে আটক ২ | বাংলারদর্পণ
মোঃ ইমাম উদ্দিন সুমন, নোয়াখালী : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মাদ্রাসাছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলারRead More

ফেনীতে কিশোরীকে ধর্ষণের মামলায় পুলিশ সদস্য কারাগারে
ফেনী প্রতিনিধি : ফেনীর ফুলগাজীতে বিয়ের কথা বলে নবম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায়Read More