সৈয়দ মনির অাহমদ, উখিয়া ও টেকনাফ থেকে ফিরে >>> মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের করুন ইতিহাস সকলের জানা অাছে। রাখাইনে অাগস্টের শেষ সপ্তাহে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা ও নিরাপত্তা কর্মীদের হত্যার অযুহাত দেখিয়ে অব্যহত হত্যা, ধর্ষন, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিতাড়িত করছে সে দেশের নিরাপত্তা কর্মীরা। বর্বর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাড়ী ঘর পরিবার পরিজন ও সম্পদের মোহ ত্যাগ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর নদী, পাহাড়, পর্বত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী শাহপরীর দ্বীপে অাসছে। গত ৪ সপ্তাহের অব্যহত জনস্রোতে যুবক যুবতীর সংখ্যা খুবই কম ছিল, তবে অধিকাংশই নারী ও শিশু। সেখানে কিছু কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিজেদের খরচে নৌকার মাধ্যমে টেকনাফ উপকুলে নিয়ে অাসছে, সেখানে কিছু দালাল চক্র যুবতীদের প্রলোভন দেখিয়ে অন্ধকার জগতে ঠেলে দিচ্ছে। পায়ে হেটে টেকনাফ সীমান্তে এসে ওই সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলোর সহযোগীতা ও ব্যাক্তিগত খরচে গাড়ী যোগে এবং পায়ে হেটে উখিয়ার কুতুবপালং এবং থ্যাংকখালী শরনার্থী তাবুতে অাসছে। অনেকে তাবুতে স্থান না পেয়ে রাস্তায় ও পাহাড়ের ঢালে দিনাতিপাত করছে। দেশী, বিদেশী (মালয়েশিয়া, অারব অামিরাত, ভারত, তুরস্ক) সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি ব্যাক্তিগত উদ্যোগে ত্রান বিতরণ হচ্ছে। ত্রান বিতরনে সঠিক কোন পন্থা চোখে পড়েনি, অাগে অাসলে অাগে পাবে এ নীতিতে বিতরণের কারনে কেউ কেউ বার বার পাচ্ছে অাবার অনেকে বঞ্ছিত হচ্ছে। থ্যাংকখালী টিলার পাশে দাড়ীয়ে থাকা রোহিঙ্গা নারী জোহরা জানান, সে রাখাইনের তুলাতুলি গ্রামের বাসিন্দা, তাঁর স্বামী অাবদুল কাদের নিরাপত্তা বাহীনির হাতে বন্ধী। তিনি তিন ছেলেকে নিয়ে ৬দিন অাগে এসেছেন, এখনো কোন ত্রান এবং তাবু পাননি । ত্রান বিতরণ কালে স্থানীয় গরীব, অসহায়, দুস্থ্যরা রোহিঙ্গাদের সাথে সমান তালে ত্রান গ্রহন করছে। রাস্তার দু-পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোকদের পানির সংকট বেশি। নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অাহতদের মধ্যে খাবার এবং পোশাকের সংকটও রয়েছে। ত্রান দাতারা অসহায়দের নগদ অর্থও দিতে দেখা গেছে। টাকা চিনেন না অধিকাংশ নারীরা। স্থানীয় দোকানে পন্য কিনতে গেলে দোকানীরা রোহিঙ্গাদের সরলতার সুযোগে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ অর্থ গুলো। ত্রান না পেয়ে চুরি করার দায়ে শনিবার এক বৃদ্ধ কে হত্যা করেছে রোহিঙ্গারা।
থ্যাংকখালী ও কুতুবপালং এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার পলিথিন অাব্রিত তাবু রয়েছে। এসব তাবুতে রোহিঙ্গা, দালালচক্র ও স্থানীয় বখাটেদের মাদকের অাড্ডা দেখা গেছে। তারা কৌশলে যুবতীদের অাকৃষ্ট করছে, অনেকে তাদের ডাকে সাড়া দিতেও দেখা গেছে। নির্জন তাবু গুলোতে যৌন ব্যাবসার অভিযোগ করেছে মিনারা নামের এক অাহত রোহিঙ্গা যুবতী। ফাতেমা নামের ষাটোর্ধ এক রোহিঙ্গা নারী জানান, তার স্বামী নেই, দুই ছেলে ও তাদের স্ত্রী সন্তানেরা ১৬ দিন অাগে পৃথক পৃথক ভাবে এপারে এসেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কারো সাথে দেখা হয়নি। থ্যাংকখালী টিলায় অবস্থানরত মাদ্রাসা পড়ুয়া রোহিঙ্গা যুবতী মিরা জানান, তার মা বাবা হত্যা করে বসতঘর জ্বালীয়ে দিয়েছে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তার ২ ভাইসহ ৯ দিন অাগে এসেছে। কথিত অাছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ৬০% বাসিন্দা রোহিঙ্গা বংশোদুত কিন্তু অজ্ঞাত কারনে নবাগত রোহিঙ্গাদের কোন সহযোগীতা করছেনা তারা । স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, অাইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর না হলে অসহায় রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মাদক বিক্রি করবে মাদক সম্রাটেরা। দিলারা নামের এক রোহিঙ্গা নারী জানান, বাংলাদেশ সরকারের গৃহিত সকল পদক্ষেপে তারা সন্তুষ্ট। তিনি অারো জানান, প্রতিটি তাবুতে সৌর বিদ্যুত দেয়া হয়েছে, প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ঔষধ বিনামুল্যে পাওয়া যাচ্ছে। ১০টি তাবুর জন্য একটি করে টিউবওয়েল দেয়া হয়েছে তবে বিশুদ্ধ এবং বোতল জাতীয় পানি সরবরাহ অারো বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের এক চিকিৎসক জানান, তাবুতে থাকা প্রায় ৫০ হাজার নারী গর্ভবতী।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাঈন উদ্দিন জানান, নবাগতদের স্রোত বন্ধ হলে সব কিছুতে শৃঙ্খলা অাসবে। রোববার থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরাসরি ত্রান ও শরনার্থী তাবু তদারকি করছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার শরনার্থী তাবু পরিদর্শন ও ত্রান বিতরনের পর থেকে দৃশ্যপট অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অান্তর্জাতিক ও দেশীয় মিডিয়ায় সাক্ষাতকালে বলেছে ১৭ কোটি বাংলাদেশী খাবার পেলে ৭ লক্ষ রোহিঙ্গাও খাবার পাবে। ইতিমধ্যে তিনি বিশ্বে অনেক দেশে মানবতার সেবার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে মানবতার মা উপাধি দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের অবাধে প্রবেশ, শরনার্থী তাবু করে বসবাসের সুযোগ করে দেয়া, ত্রান বিতরণ সহ সর্বোপরি মানব সেবার জন্য জাতিসংঘ থেকে পুরস্কার গ্রহনের কথা রয়েছে।
লেখক – সভাপতি – সোনাগাজী প্রেসক্লাব।
সম্পাদক- বাংলার দর্পন ডটকম।