অন্যের দোষ দিয়ে কি লাভ ? মুসলমানরা নিজেদের সর্বনাশ করছে

 

 

আনোয়ারুল হক আনোয়ার : পৃথিবীতে একমাত্র মুসলিম জাতি ব্যতীত অন্যসব জাতি বেশ সুখ শান্তিতে অবস্থান করছে । কিন্তু মুসলিম জাতি নিজেদের মধ্যে সংঘাত, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, যুদ্ব বিগ্রহ, গ্রোত্রে গোত্রে বিরোধ এমনকি এক দেশ অন্য দেশকে ঘায়েল করতে রীতিমত কোমর বেঁধে নেমেছে । আঞ্চলিক ও আন্তর্জাাতিক রাজনীতিতেও সে ধারা অব্যহত রয়েছে । আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ভারত, জাপান কিংবা ইসরাইলের কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাদের স্বজাতি কিংবা দেশের বিরুদ্বে অবস্থান নেয়ার কোন রেকর্ড কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবেনা । কিংবা নিজ জাতিকে খাটো করার মনমানসিকতা টুকু পর্য্যন্ত তাদের মধ্যে নেই । মার্কিনীরা বিশ্বব্যাপী দাপট দেখালেও দেশ ও জাতির জাতির স্বার্থে একট্রা । তেমনিভাবে ক্ষুদ্র দেশ ইসরাইল বিশ্বে ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের স্বার্থ রক্ষায় সর্বাদা প্রস্তুত । উদীয়মান শক্তি চীন তার দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে । মিয়ানমারে সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও সহিংসতার শিকার । ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বজাতি রক্ষায় মিয়ানমারে ছুটে যান । এটাই হচ্ছে স্বজাতির প্রতি অকুরন্ত ভালবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত । কিন্তু ১৯৯১ সাল থেকে চলমান সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গাদের রক্ষায় এযাবত কোন  মুসলিম রাষ্ট্র প্রধান মিয়ানমান সফর করেছে কি ? এছাড়া আরো অনেক ঘটনা স্বল্প পরিসরে লিখা সম্ভব নয় ।

 

দুনিয়ার অধিকাংশ মুসলিম দেশ অর্থনৈতিক, সামরিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে । বিশেষ করে ভৌগলিক অবস্থান এবং খনিজ সম্পদের সূবাদে পরাশক্তির নিকট এসব দেশের গুরুত্ব রয়েছে । শিক্ষা, চিকিৎসা, বিজ্ঞান ও শিল্পায়নে মুসলিম দেশগুলো ত্রমান্বয়ে অবস্থান সূ-সংহত করছে । বিশ্বে যে পরিমাণ তেল ও গ্যাস ব্যবহার হয় – তার অন্তত ৭০% যোগান দিচ্ছে মুসলিম বিশ্ব । সারমিক শক্তিতে বেশ কয়েকটি দেশ দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে । এরমধ্যে ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আলজেরিয়া, তিউনেশিয়া, মিশর উল্লেখযোগ্য । যুদ্ব জাহাজ, যুদ্ব বিমান, সাবমেরিন, ক্ষেপনাস্ত্র থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র নির্মাণ করছে কয়েকটি মুসলিম দেশ । অপরদিকে আরব দেশগুলো ক্রমান্বয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছে । পশ্চিমা সমরাস্ত্রের সমাবেশ ঘটিয়ে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শাক্তিশালী করা ছাড়াও কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার ইউরোপের মজুত করে রেখেছে ।

 

ফিলিস্তিন ইস্যুতে কতিপয় মুসলিম দেশের নীরবতা কিংবা অসহযোগীতা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্ন চুরমার হতে বসেছে । আরব জাহানের কতিপয় মুসলিম শাসকের চক্রান্তে ইরাক, আফগান, সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেন ধ্বংশপ্রায় । তেমনিভাবে মুসলিম দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ সংকটের সূযোগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধন ও বিতাড়ন অব্যাহত রয়েছে । রোহিঙ্গা ইস্যুতে তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইরান ও ইন্দোনেশিয়াকে অগ্রভাগে দেখা গেলেও অবশিষ্ট দেশগুলো তামাশা দেখছে । আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবর দেশগুলোর অবস্থান ঈর্ষনীয় । রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরব লীগ কঠোর অবস্থান গ্রহন করলে এতদিনে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রাণে রক্ষা পেত । উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করছে । লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে উপরোন্ত প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা নরনারী বাংলাদেশে ছুটে আসছে । অপরদিকে পাশ্ববর্তী মিয়ানমার বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে উস্কানীমূলক কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে । সেক্ষেত্রে মুসলিম দেশগুলো থেকে যে পরিমাণ সহযোগীতা পাবার কথা তাও মিলছেনা । মুসলিম বিম্বের প্রায় সবগুলো দেশে মিয়ানমারের দূতাবাস রয়েছে । সংশ্লিষ্ট দেশগুলো মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে কঠোর বার্তা প্রেরণ করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যেত ।

 

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমেরিকা, চীন, রাশিয়া কিংবা ভারত নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এমনকি কোন কোন দেশ পর্দার অন্তরালে মিয়ানমার সরকারকে সহযোগীতার খবর পাওয়া গেছে।  মিয়ানমারকে কেন্দ্র করে বৃহৎ শক্তিবের্গর জুয়া খেলায় বলি হচ্ছে হাজার হাজার নীরিহ রোহিঙ্গা মুসলমান । জাতিসংঘ নামক একটি প্যাড সর্বস্ব সংগঠন শুধুমাত্র নিন্দা বিবৃতিতে সীমাবদ্ব রয়েছে । অপরদিকে ওআইসি, আরব লীগ, উপসাগরীয় সহযোগীতা পরিষদ ঘুমের ঘেরে রয়েছে । আন্তর্জাাতিক মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, ন্যাম সম্মেলন সংস্থা রোহিঙ্গা ইস্যুতে তামামা করছে । এক কথায় মুসললিম বিশ্বের দূ:র্দিনে অন্য কাউকে কখনো খুঁজে পাওয়া যাবেনা । আজ অন্তত ১০টি মুসলিম দেশে চরম অশান্তি বিরাজ করছে । অনুসন্ধান করলে জানা যাবে এসব অঘটনের সাথে কোন না কোন মুসলিম দেশ জড়িত । সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন যুদ্ব তার সূস্পষ্ট প্রমাণ । তাই সময় এসেছে মুসলিম বিশ্বে ঐক্য  প্রতিষ্ঠার । অযথা অন্যকে দোষারোপ করে লাভ নেই । নিজেদের সমস্যাবলী নিজেদের সমাধান করতে হবে । অন্যথায় আগামীতে মুসলিম জাতির জন্য আরো ভয়াবহ দূর্যোগ অপেক্ষা করছে ।

 

লেখক : সিনিয়র রিপোর্টার এবং আন্তর্জাাতিক বিশ্লেষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *