আনোয়ারুল হক আনোয়ার : পশ্চিমা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে উত্তর কোরিয়ার কট্রর কমিউনিষ্ট শাসক আবারো ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে । ক্ষেপনাস্ত্রটি জাপানের আকাশ অতিক্রম করে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়ে । এ ঘটনার পূর্বে জাপান সরকার সে দেশের জনগনকে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহনের আহবান জানান । জানা গেছে, ক্ষেপনাস্ত্রটি ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় উঠে ২৭’শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় । উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষায় কোরীয় অঞ্চলে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে । উল্লেখ্য, দক্ষিন কোরিয়া ও জাপানে আমেরিকার ১৮টি শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটি রয়েছে । এসব ঝুঁকি মাথায় রেখে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা প্রতিপক্ষ হতভম্ভ হয়েছে । অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্বে সকল পথ খোলা আছে । এর আগেও উত্তর কোরিয়া সিরিজ আকারে ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা চালায় । ক্ষেপনাস্ত্রটি জাপানী আকাশ সীমা অতিক্রম করলেও টেকিও সরকার এর প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহন করেনি ।
আয়তনে বাংলাদেশের প্রায় সমান এবং আর্থিকভাবে দূর্বল উত্তর কোরিয়া একের পর এক সামরিক শক্তি বৃদ্বি করে চলেছে । পরমানু বোমা, ক্ষেপনাস্ত্র, সাবমেরিন, গোয়েন্দা উপকরনসহ প্রায় প্রতিটি সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সাধিত হয়েছে । এক কথায় উত্তর কোরিয়ার শক্তিশালী প্রতিপক্ষ উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে । ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ায় হামলা চালানোর একাধিক পদক্ষেপ গ্রহন করলেও তার সামরিক উপদেষ্টা ও মিত্ররা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার উপর জোর দিচ্ছে । তাদের ধারণা আমেরিকা উত্তর কোরিয়ায় হামলা চালালে সবচে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে দক্ষিন কোরিয়া ও জাপান । এছাড়া জাপান ও দক্ষিন কোরিয়ায় অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোও পিয়ং ইয়ং এর টার্গেট হবে । অপরদিকে চীন ও রাশিয়ার সাথে রয়েছে জাপান ও দক্ষিন কোরিয়ার সাপে নেউলে সম্পর্ক । আমেরিকা – উত্তর কোরিয়া যুদ্ব বাঁধলে রাশিয়া ও চীন সূযোগ গ্রহন করতে চাইবে । এসব বিষয় চূলচেরা বিশ্লেষন করে জাপান ও দক্ষিন কোরিয়া হামলার বিরোধী ।
পরমানু সক্ষমতা অর্জন কিংবা মানব বিরোধী যে কোন মারনাস্ত্র অর্জন সুখকর না হলেও সাম্প্রতিককালে পরমানু ও ক্ষেপনাস্ত্রের প্রতিযোগীতা চলছে সমান গতিতে । পরমানু ও ক্ষেপনাস্ত্র শক্তিসম্পন্ন নয় – এমন দেশের আকাশে শকূনের আনাগোনা চলছে সমান গতিতে । অপরদিকে পরমানু ও ক্ষেপনাস্ত্র শক্তিসম্পন্ন দেশ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাাতিক রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসছে । তেমনিভাবে উত্তর কোরিয়াও চালকের আসনে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে । চীন ও রাশিয়ার আর্শিবাদপুষ্ট উত্তর কোরিয়া পরাশক্তি আমেরিকার প্রতি প্রতিনিযত হুংকার ছুঁড়ছে । এক্ষেত্রে মুসলিম দেশগুলো এর ধারেকাছেও নেই । অথচ বিশ্বে প্রায় ২২টি মুসলিম দেশ রয়েছে – যাদের গড় মাথাপিচু আয় ৮/৯ হাজার মার্কিন ডলারের বেশী । পক্ষান্তরে উত্তর কোরিয়ার মাথাপিছু আয় মাত্র ১৪’শ মার্কিন ডলার । উত্তর কোরিয়া পরমানু ও ক্ষেপনাস্ত্র শক্তি অর্জন না করলে এতদিনে দেশটি খন্ড বিখন্ড হয়ে যেত । এতে প্রতীয়মান হয়, বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে পরমানু বোমা ও ক্ষেপনাস্ত্র হচ্ছে ভারসাম্যের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছে ।
মুসলিম দেশ যেন পরমানু ও ক্ষেপনাস্ত্র সক্ষমতা অর্জন করতে না পারে – সে জন্য সিআইএ গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্বি করেছে । যে দেশ কিংবা মুসলিম শাসককে হুমকি মনে করেছে – সে দেশ কিংবা শাসককে সমূলে ধ্বংশ করে দেয়ার ঘটনা কারো অজানা নয় । অপরদিকে পাশ্চাত্য বিরোধী অন্য কোন দেশ যাতে পরমানু ও ক্ষেপনাস্ত্র সক্ষমতা অর্জন করতে না পারে – সেদিকেও সিআইএর গোয়েন্দা মিশন ততপর রয়েছে । কিন্তু উত্তর কোরীয় কমিউনিষ্ট শাসক সে দেশে পশ্চিমাদের প্রবেশ নিষিদ্ব করে অতি গোপনে পরমানু ও ক্ষেপনাস্ত্র সক্ষমতা অর্জন করে । দূর্ভাগ্য যে, এক্ষেত্রে মুসলিম দেশগুলো ঘুমের ঘোরে রয়েছে । অধিকাংশ মুসলিম দেশ পরমানু ও ক্ষেপনান্ত্র অর্জন করতে পারেনি বিধায় পাশ্চাত্য বারবার মুসলিম দেশে একের পর এক আঘাত হানছে । আফগানিস্থান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, তুরস্ক, ইরান, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া এর প্রকৃত উদাহরণ । ২২টি মুসলিম দেশে অর্থনৈতিকভাবে বেশ অগ্রগামী । কিন্তু এসব শাসক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাাতিক রাজনীতির মারপ্যাঁচ কিংবা পাশ্চাত্যের নীল নকসা সম্পর্কে উদাসীন । ফলে পরমানু ও ক্ষেপনাস্ত্র সক্ষমতা থেকে বহুদুর পিছিয়ে রয়েছে মুসলিম বিশ্ব । সুতরাং সংঘাতপূর্ণ বিশ্ব রাজনীতি এবং বহি:শত্রুর আগ্রাসন থেকে পরিত্রাণ লাভে পরমানু ও ক্ষেপনাস্ত্র সক্ষমতা অর্জনের বিকল্প নাই । এবিষয়টি মুসলিম শাসকদের অনুধাবন করা উচিত ।
লেখক : সিনিয়র রিপোর্টার এবং আন্তর্জাাতিক বিশ্লেষক।