দুশ্চিন্তায় জোড়া মাথার যমজের মা-বাবা

 

পাবনা প্রতিনিধি |

২০১৬ সালের ১৬ জুলাই। নতুন শিশু জন্মের অপেক্ষায় রফিকুল-তাসলিমা দম্পতি। রাত আটটার দিকে অস্ত্রোপচারকক্ষ থেকে খবর আসে, মাথা জোড়া লাগানো যমজ কন্যাশিশুর জন্ম দিয়েছেন তাসলিমা। নিমেষেই আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। দুশ্চিন্তা ভর করে পুরো পরিবারে।

জন্মের সময় কিছুটা অসুস্থ থাকলেও উন্নত চিকিৎসায় সুস্থ হয় শিশু দুটি। তাদের নাম রাখা হয় রাবেয়া ও রোকাইয়া। দেখতে দেখতে কেটে গেল প্রায় এক বছর। ফুটফুটে শিশু দুটি এখন হাসতে শিখেছে। কিন্তু দিনে দিনে দুশ্চিন্তার পাহাড় জমছে তাদের বাবা-মায়ের মনে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের সমস্যা বাড়ছে।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের আটলংকা গ্রামে রফিকুল ইসলাম-তাসলিমা খাতুন দম্পতির বাস। দুজনই পেশায় শিক্ষক। ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়েও সন্তানদের সমস্যার কোনো সমাধান পাননি তাঁরা।

গত সোমবার বিকেলে আটলংকা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, টিনশেড বাড়ি শিক্ষক রফিকুল ইসলামের। একটি কক্ষে খাটের ওপর শুয়ে হাত-পা নাড়ছে দুই যমজ। মাঝে মাঝে মিষ্টি হাসি দিচ্ছে। শরীরের পুরো অংশই তাদের আলাদা, শুধু মাথা জোড়া লাগানো। শুয়ে থাকলে খুব একটা সমস্যা না হলেও দাঁড় করানো যাচ্ছে না তাদের।

রফিকুল বলেন, জন্মের পর থেকেই দুই সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন তাঁরা। তাদের জীবন রক্ষায় কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘আমার সর্বস্ব দিয়ে হলেও আমি সন্তানদের বাঁচাতে চাই। কিন্তু কোথায়, কার কাছে গিয়ে তাদের রক্ষা করতে পারব সেটাই বুঝে পারছি না। আমি সবার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি।’ মা তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘মাঝেমধ্যে দুই বোন আলাদা হওয়ার চেষ্টা করে, তখন খুব কষ্ট হয়। ওদের যে কেমন লাগে বুঝতে পারি না। বুকটা ফেটে যেতে চায়।’

পাবনার গাইনি বিশেষজ্ঞ নার্গিস সুলতানা  বলেন, যত বড় হবে, শিশু দুটির সমস্যা তত বাড়বে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাথা আলাদা করা গেলে তাদের সুস্থ জীবনে ফিরে নিয়ে আসা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *