ছাত্রলীগ নেতার কান্ড :  স্কুলছাত্রী ধর্ষণ – অন্তঃসত্বা হওয়ার পর বিয়ের নাটক

 

নোয়াখালী প্রতিনিধি :

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের ৪নং চরকাঁকাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে মধ্য চরকাঁকড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। ইউনিয়ন তথ্য  সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মোঃ রিয়াদ হোসেনকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি ওই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ও ৭নং ওয়ার্ডের মোহাব্বত আলী মিয়াজী বাড়ির আবুল হোসেনের ছেলে।

 

স্কুলছাত্রীর অভিযোগ, এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার আগে ফটোকপির প্রয়োজনে ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে গেলে রিয়াদের সাথে পরিচয় হয়। পরে মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে রিয়াদ তাকে প্রায়ই ফোন দিতো এবং বিভিন্নভাবে পড়ালেখার বিষয়ে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিতো। সে আরও জানায়, রিয়াদ তার সাথে এক সময় খুব ঘনিষ্ট হয়ে যায় এবং এসএসসির পরীক্ষার পর বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরমধ্যে সে প্রাইভেট পড়তে গেলে মাঝে মাঝে রিয়াদ দুপুর বেলা নির্জন সময়ে তাকে ইউপি কার্যালয়ে যেতে বলতো। প্রথম প্রথম না গেলেও পরে গিয়ে সে তার লালসার শিকার হয়েছেন।

 

এদিকে, এভাবে ১৫-১৬ বার যাওয়ার পর একটা সময় ওই ছাত্রী বুঝতে পারে সে সন্তান সম্ভবা। বিষয়টি রিয়াদকে জানালে সে পরীক্ষার পর বিয়ে করার আশ্বাস দেন। কিন্তু পরীক্ষার পর বিয়ে না করায় সবাইকে বিষয়টি জানিয়ে দেয়ার হুমকি দিলে রিয়াদ ছাত্রীর পেটের বাচ্চা নষ্ট করার জন্য পরামর্শ দিয়ে কিছু ঔষধ পাঠায়। কিন্তু তা সেবন না করে রিয়াদকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে ওই ছাত্রীকে বসুরহাট এক বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে দিয়ে বিয়ে পড়ানোর নামে প্রতারণাও করেন।

 

সম্প্রতি ওই ছাত্রীর শরীরের আকার পরিবর্তনের সাথে সাথে সে বিয়ের জন্য চাপ দিলে রিয়াদ তার সাথে সম্পর্ক রাখতে অস্বীকার করে। অবশেষে ছাত্রী তার পরিবারকে বিষয়টি খুলে বলে। ছাত্রীর মা সাংবাদিকদের জানান, তার মেয়ে এখন আনুমানিক চার মাসের অন্তঃস্বত্তা। তিনি বলেন, এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল তার মেয়ের বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে মেয়ের যে অবস্থা তাতে রিয়াদের সাথে বিয়ে না হলে আত্মহত্যা ছাড়া উপায় থাকবে না।

 

এদিকে বিষয়টি জানাজানির পর তড়িঘড়ি করে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি শাহদাত হোসেন পিংকু ও স্থানীয় এনামুল হক মেম্বার গত ২জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় হুজুর ডেকে অনানুষ্ঠাকিভাবে ছেলে-মেয়ের বিয়ে পড়িয়ে বিষয়টিতে বাড়াবাড়ি না করার জন্য বলে যায় মেয়ের পরিবারকে। পরে মেয়েকে তার বাবার বাড়িতে রেখে সবাই চলে যায়। বিয়েতে তারা ৩ লাখ টাকা দেনমোহার ধার্য্য করে কাবিনের সিদ্ধান্ত নিলেও মেয়ের বয়স ১৮ না হওয়ায় কাজী এ বিয়ের কাবিন রেজিষ্ট্রি করতে রাজি হচ্ছে না।

 

এ ঘটনার পর থেকে মেয়ের বিয়ের নিশ্চয়তা না পেয়ে শঙ্কিত ওই স্কুলছাত্রীর পরিবার। তাদের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে একটি পক্ষ বিয়ের কথা বললেও  এ সম্পর্ক কতোটুকু থাকবে তা আদৌ তাদের কাছে বিশ্বাস হচ্ছে না। অন্যদিকে প্রভাবশালীদের ভয়ে মামলাও করতে পারছে না। পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বলেও সাংবাদিকদের কাছে উল্লেখ করেন তারা।

 

ওদিকে এ ঘটনার পরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন চরকাঁকড়া ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্ত মোঃ রিয়াদ হোসেন। সে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকায় সেই প্রভাবে ধরাকে স্বরাজ্ঞান ভাবছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। তবে বিক্ষুব্ধ জনতার দাবি, মুখোশধারী এ লম্পটের উপযুক্ত শাস্তি ও মেয়েটিকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলে নিতে তাকে বাধ্য করা হোক।

 

এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত মোঃ রিয়াদ হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি ওই ছাত্রীকে সামাজিকভাবে তিনলাখ টাকা দেন মোহরে বিয়ে করেছেন। তবে ঘনিষ্ট সম্পর্কের কথা স্বীকার করলেও তিনি ধর্ষনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

 

এ ব্যাপারে চরকাঁকড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সফি উল্যাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনিও শুনেছেন তবে তাকে কেউ অভিযোগ না করায় তিনি এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *