সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে সরানো হলো গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য

 

ঢাকা : বিভিন্ন সংগঠনের দাবির মুখে অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত গ্রিক দেবী থেমেসিসের ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ভাস্কর্যটি না ভেঙে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃ স্থাপিত করা হবে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভাস্কর মৃণাল হকের নেতৃত্বে ১৩ জন কর্মীসহ মোট ২০ শ্রমিক ভাস্কর্যটির ভিত ভাঙার কাজ শুরু করেন। ভোর চারটায় এটি সরানোর কাজ শেষ হয়। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ভাস্কর্য অপসারণের সময় উপস্থিত ছিলেন এর স্থপতি মৃণাল হক। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে ২২ থেকে ২৫ জন শ্রমিক ভাস্কর্যটি অপসারণের কাজ করছেন। পাশে রাখা ছিল ছোট ট্রাক। কয়েকজন শ্রমিক হাতুড়ি, শাবল ও হ্যামার দিয়ে ভাস্কর্যের উপরের অংশ অক্ষত রেখে নিচের পিলার ভাঙছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকের বাইরে অপেক্ষমাণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের বাগানপরিচর্যাকারী আবুল কাশেম বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ দেখতে পান ট্রাকে করে শ্রমিকরা সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশ করছেন। এর কিছুক্ষণ পরই শ্রমিকরা ভাস্কর্যটি অপসারণের কাজ শুরু করেন।

উল্লেখ্য, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বিচার বিভাগের বিচারিক সেবা বৃদ্ধি ও মামলা জট কমাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে সারা দেশের বিচার অঙ্গনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও আদালত প্রাঙ্গণের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের ফুল কোর্টে আলোচনাও হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা যায়। সেখানেও ভাস্কর্য স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত আসে। এরপর ভাস্কর্যটি নির্মাণে দেশের স্বনামধন্য ভাস্কর মৃণাল হককে দায়িত্ব দেয়া হয়।

২০১৬ সালের শুরুর দিকে ভাস্কর্যটির নমুনা সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে দেখান ভাস্কর মৃণাল হক। সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি দেখে অনুমোদন দেয়ার পর গত ১৮ ডিসেম্বর কোর্টে মূল ভবনের সামনে ফোয়ারার মধ্যে এটি স্থাপন করা হয়। গত ২৪ ডিসেম্বর বিচার বিভাগীয় সম্মেলন ২০১৬ এর সাজসজ্জায় স্থান পায় ভাস্কর্যটি। মূল মঞ্চের দু’পাশে দুটি ভাস্কর্য বসানো হয়।

প্রধান বিচারপতির নির্দেশে ভাস্কর্য অপসারণ’

সুপ্রিম কোর্টের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতির উপস্থিতিতে ‘ফুলকোর্ট’ সভা হয়। সেখানে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন বিষয়ক একটি বিধি অনুমোদনের পাশাপাশি ভাস্কর্য অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়।

বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নির্দেশে ভাস্কর্যটি সরানো হয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা খাস কামরায় আমাকে ডেকেছিলেন। এসময় ড. কামাল হোসেন, খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ সুপ্রিম কোর্টের বারের বর্তমান ও সাবেক দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে আমি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা চাই না। এটি সরিয়ে নেয়া হোক এবং এমন জায়গায় স্থাপন করা হোক যেন প্রশ্ন না ওঠে। ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমরা প্রধান বিচারপতিকে বলেছি এবং ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়ার পক্ষে সবাই মত দিই।”

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। হেফাজতের এই দাবির নিন্দা জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী এক বিবৃতিতে বলেন, সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সামনে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন বাংলাদেশের গণমানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আদর্শিক চেতনার একেবারেই বিপরীত। অবিলম্বে এটি অপসারণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় ইমান, আকিদা ও ঐতিহ্য রক্ষায় লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।

রোজা শুরুর আগে এই ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল ইসলামী সংগঠনগুলো।

গত ১১ এপ্রিল হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী নেতৃত্বাধীন এক দল ওলামার সঙ্গে গণভবনে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাস্কর্যটি সরাতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা এখানে থাকা উচিত নয়। আমি আপনাদের বলব, আপনারা ধৈর্য ধরেন। এটা নিয়ে কোনো হইচই নয়। একটা কিছু যখন করে ফেলেছে, সেটাকে আমাদের সরাতে হবে। সেটার জন্য আপনারা একটুকু ভরসা অন্তত রাখবেন যে এ বিষয়ে যা যা করার আমি তা করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *