ফেনী প্রতিনিধি:
কালিদাস পাহালিয়া নদীর সোনাগাজী অংশে বালু উত্তোলনের ফলে নবাবপুরের নদী সংলগ্ন স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হতে পারে, এমন আতঙ্কে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে নবাবপুর এলাকাবাসি।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকালে সরেজমিন পরিদর্শন এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন) রোমেন শর্মা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনজুর আহসান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিগ্যান চাকমা। অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তাঁরা। পরিদর্শনকালে ইউপি চেয়ারমানের সাথে স্থানীয়দের বাকবিতন্ডা ও চরম উত্তেজনা দেখা দেয়।
জানাগেছে, কালিদাস পাহালিয়া নদীর উপর নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা খাজা আহম্মদ সেতুর গার্ডার ধসে যাওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে সেতুটি। সেতু রক্ষায় নদী সোজা করে গার্ডারের স্থানে জিও ব্যাগ দেয়ার জন্য ১৫লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয় ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রনালয়। কাজের সুবিধার্থে নদীর জেগে উঠা চরের অংশ খনন করে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। জেগে উঠা চর না কেটে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালূ উত্তোলন ও বানিজ্যিক কাজে বিক্রির অভিযোগে ফুঁসে উঠে এলাকাবাসি। স্থানীয়দের পক্ষে ২৫ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন নবাবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ভূঞা।
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সামনে বাক-বিতন্ডায় জড়ায় দুটি পক্ষ। এতে সাময়িক উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয়রা চেয়ারম্যান জহিরকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর, ভূয়া- ভূয়া’, ‘বালু উত্তোলন বন্ধ কর, করতে হবে’, ‘সব শালাররা বাটপার, আর্মি হবে ঠিকাদার’, এসব শ্লোগান দেয়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবাইকে নিভৃত করেন।

অভিযোগকারি জহির উদ্দিন বলেন, নদীর মুল অংশে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বানিজ্যিক কাজে বিক্রি করছেন নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম ও ফরহাদনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা বেলায়েত হোসেন বাচ্চু। এখানকার বালু ব্যবহার করে প্রবাসি সালাউদ্দিন ও মাঈন উদ্দিনসহ আশপাশের অনেকের পুকুর, ডোবা, বাড়ীর আঙ্গীনা এবং নিচু জমি ভরাট করেছেন। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ- লক্ষ টাকার বালু বিক্রি করছেন এই দুই চেয়ারম্যান।
সাইদুর রহমান নামে এক যুবক বলেন, নদী সোজা করনের নামে যেভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে, এতে দুপাশে রাস্তাঘাট, বাড়ি-ঘর ও সেতু নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। আতঙ্কে আছে দুপাড়ের বাসিন্দারা। তাই সেতু রক্ষার কাজটি সেনাবাহিনীকে দেয়ার দাবি জানায় এলাকাবাসি।
নবাবপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জহিরুল আলম বলেন, সেতু রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলার জন্য ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৩৪ হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করার অনুমতি দিলেও নদী ড্রেজিংয়ের জন্য কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি। শুধু স্থানীয় চেয়ারমান হিসেবে জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মত বালু উত্তোলন করে নিদিষ্ট স্থানে ডাম্পিং করছি। বানিজ্যিক কাজে এক ফুটও বিক্রি করা হয়নি। রাজনৈতিক বিরোধের কারনে একটি পক্ষ অভিযোগ দিয়েছেন।
ফরহাদনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বাচ্চু বলেন, আমি বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, বোট ও ড্রেজার ভাড়া দিয়েছি। বেচা-বিক্রির ব্যপারে কিছুই জানিনা।
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন) রোমেন শর্মা বলেন, নদী সোজাকরণ ও জিও ব্যাগ ভরাটের জন্য বালূ তোলার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। কোন অনিয়ম হলে অবশ্যই বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।