গ্রেফতার এড়াতে কুমিল্লার মেয়র সাক্কু অাত্মগোপনে: তৎপর গোয়েন্দারা

 

এম.তানভীর আলম :

কর্পোরেশনের সদ্য নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে খুঁজে পাচ্ছে না র‌্যাব, পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এরই মধ্যে তার গ্রেফতারি পরোয়ানার কাগজ পৌঁছে গেছে কুমিল্লার কোতয়ালি মডেল থানা এবং ডিএমপির গুলশান থানা পুলিশের হাতে।

 

গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে সাক্কুর ২টি সেল ফোনের নম্বরও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, তাই তার অবস্থানের বিষয়ে এখনো অন্ধকারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। সাক্কু জামিন নিয়েছেন কিনা? আদালতে গেলে জামিন হবে তো? কখন শপথ নেবেন? গ্রেফতার হলে আদৌ জামিন হবে কিনা? কে হচ্ছেন কুসিকের প্যানেল মেয়র? নতুন করে দুদকের মামলা হচ্ছে কি না? এসব প্রশ্ন এবং গুঞ্জন এখন কুসিক নগরীতে।

 

সাক্কু কুমিল্লায় নেই এমন তথ্যের বিষয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা নিশ্চিত হলেও নিয়ম রক্ষার জন্য নগরীর সাক্কুর নানুয়াদিঘীর পাড়স্থ বাসভবনসহ সম্ভাব্য স্থানে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। আদালতে হাজির হয়ে সাক্কুর জামিন আবেদনের বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।

 

এর আগে বুধবার বিকেলে ঢাকা থেকে ডাকযোগে দুদকের দায়েরকৃত মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা কুমিল্লার কোতয়ালি মডেল থানায় পৌঁছে।

 

এ বিষয়ে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু সালাম মিয়া জানান, মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে দুদকের মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানার কাগজ বুধবার ডাকযোগে থানায় এসেছে। এখন বিধি মোতাবেক পুলিশের পক্ষ থেকে তা তামিল করার চেষ্টা চলছে।

 

এদিকে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাক্কুর ব্যক্তিগত দুটি সেল ফোন নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

 

তবে ঢাকায় অবস্থানরত সাক্কুর একাধিক ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি জানান, দুদকের যে মামলায় তার (সাক্কু) বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে এর আগে তিনি উচ্চ আদালত থেকে সেই মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন। তবুও আদালতের বিধি মেনে তিনি শিগগিরই জামিনের জন্য আদালতে যেতে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন।

 

জানা যায়, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপন করার অভিযোগে ২০০৮ সালের ৭ জানুয়ারি ঢাকার রমনা থানায় দুদকের সহকারী পরিচালক শাহিন আরা মমতাজ বাদী হয়ে কুমিল্লা পৌরসভার তৎকালীন মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলীর বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২৬ (২) ও ২৭ (১) তৎসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় ঢাকার রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন (নং- ১১)।

 

দীর্ঘ আট বছর তদন্ত শেষে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক নুরুল হুদা আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেন। তবে এ মামলার অভিযোগের দায় থেকে সাক্কুর স্ত্রীকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা।

 

গত মঙ্গলবার এ মামলায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র বিশেষ জজ কামরুল হোসেন মোল্লা মামলার চার্জশিট আমলে নিয়ে সাক্কুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এছাড়াও আদালত সাক্কুর সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দেন এবং একই সঙ্গে তার গ্রেফতার সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য আদালত আগামী ৯ মে দিন ধার্য করে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন।

 

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৭১ হাজার ৯৩৩ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাক্কু দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *