জয়নাল হাজারীর অাত্মজীবনী (৮৯) :
সোনাগাজীতে ছিল বেলায়েত সাহেবের বড় ছেলে মোশাররফ। তার দক্ষতা এবং বাগ্মীতা কোনোটাই ছিল না। তবে টাকার জোর ছিল। আমরা পরিকল্পিতভাবে উভয় আসনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। উপরের স্তরের কিছু নেতা ছাড়া কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা ছিল। একদিন সোনাগাজী অঞ্চলে গণসংযোগ শেষে ফেনীতে ফেরার পথে দেখি বিএনপির সন্ত্রাসীরা ধলিয়ার রাস্তায় মিছিল করছে। ওই সময়ে আমাদের ছেলেদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। পরদিন ধলিয়ায় আমাদের জনসভা ছিল। আগের দিন গোলযোগের কারণে পরদিন জনসভার জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নেই। পুলিশের পক্ষ থেকেও বার বার বলা হলো তারা নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেবে। গোলযোগের কোনো সম্ভাবনা নেই। মুক্তিযোদ্ধা এসপি আনোয়ার হোসেনের কথা বিশ্বাস করেছিলাম। আবার মোশাররফ মিঞার সঙ্গে তার সুসম্পর্কের কথাও কানে এসেছিল। মোয়জ্জেমের সুটকেস ভরা টাকা তাকে অতটা বিভ্রান্ত করবে বুঝতে পারিনি। আমরা চারটার দিকে রওনা হলাম। কিন্তু তার দুঘন্টা আগেই বেন্ডু হাজারী কিছু কর্মী নিয়ে সেখানে পৌঁছেছিল। সভায় যাবার পথে খবর পেলাম বগাদানা থেকে আসা মিছিলে গুলি হয়েছে। সভাস্থলের চারপাশে প্রতিপক্ষ সশস্ত্রভাবে অবস্থান নিয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দূর থেকে গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। দক্ষিণ দিকের ওদের একটি অবস্থানের দিকে এসময় বেন্ডু হাজারী এগিয়ে যায়। ফলে ওদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। এক পর্যায়ে বেন্ডু হাজারী আহত হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ফেনী হাসপাতাল ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রথমদিকে বেন্ডু হাজারীর আঘাত গুরুত্বর বলে মনে হয়নি। তার মূল আঘাতটি ছিল মুখে। মুখের অপারেশন করার জন্য তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। সে নিজেই পায়ে হেঁটে সেখানে যায়। উপস্থিত লোকজনের সাথে কথাও বলে। অপারেশনের আগে তার শরীর অবশ করা হয়েছিল। এরপর তার জ্ঞান ফিরেনি। ইচ্ছকৃতভাবে কিংবা ভুল করে হোক তাকে অতিরিক্ত অবশ করার ওষুধ প্রয়োগ করার ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ফেনীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন।
সোনাগাজীতে আমরা হেরে গেলাম। সেখানে পুলিশের ভূমিকা ছিল খুব খারাপ। এই অঞ্চলে ফাজিলপুরের পেয়ার আহম্মদ ভোটের আগের রাতে কয়েকজন সাধারণ লোককে আটক করে রেখেছিল। ঘটনাটি জানাজানি হলে পুরো পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। সোনাগাজী অঞ্চলে আমাদের কর্মীদের মূল দাবি ছিল অস্ত্র। এ ব্যাপারে আমার কাছ থেকে কর্মীরা তেমন সাড়া পায়নি। ওই অঞ্চলে হেরে যাওয়ার কারণ হিসেবে পরে অস্ত্র যোগান না দেয়াকেই দায়ী করা হয়। এদিকে ফেনীর ভোটে এগিয়ে থাকলেও বাহারীপুর কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হওয়ায় ফলাফল স্থগিত রইল। সেখানে অনেক ভোটে এগিয়ে ছিলাম। তাই বাহারীপুরের ভোট শেষে আমাকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। বাহারীপুর জাসদ অধ্যুষিত এলাকা। ফলে আগের রাতে প্রচার হয় ওরা কেন্দ্রটি দখল করবে। যদিও তারা পরে সাহস করেনি। তবে চেষ্টা যে তারা করেছিল তাতে সন্দেহ নেই। শোনা যায় এ জন্য কোরেশী ভিপি জয়নালকে দুলাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ভিপি জয়নালের দাবি ছিল পাঁচ লাখ। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাচ্ছে, এমন প্রচার তখন ছিল মুখে মুখে।
সম্পাদনা / রিয়েল