সিলেট জুড়ে ডেঙ্গু মশার আতংক

আবুল কাশেম রুমন,সিলেট:
সিলেট জুড়ে ডেঙ্গু মশার আতংক দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন সিলেটের বিভিন্ন সরকারি- বেসকারি ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। গত কয়েক দিনে বেশ ডেঙ্গু মশার আক্রমনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, নগরীর বিভিন্ন স্থানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া নতুন নয়। প্রতি বছরই এমন লার্ভা পাওয়া গেছে। তবে স্থানীয় ভাবে সিলেটে ডেঙ্গু ছড়ানোর নজির খুব একটা নেই। গেল বছরও সিলেটের প্রথম শনাক্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ঢাকা থেকে অসুস্থ হয়ে সিলেটে এসেছিলেন। ফলে চলতি বছরেও দূরপাল্লার যানবাহনে যাতায়াতকারীরা ডেঙ্গু আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরো ৬৫ ডেঙ্গু রোগী। এ নিয়ে সারাদেশে মোট ৩২২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মঙ্গলবার (২ আগষ্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে নতুন আক্রান্ত ৬৫ জনের মধ্যে ৫১ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬ জন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন। এ নিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৩২২ জন ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৪৭ টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৪৬ জন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৭৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরীর ২৫ ও ২৬নং ওয়ার্ডে কিছু দোকানেই প্রতি বছর ডেঙ্গু মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এবারও তাই হয়েছে। সিসিকের ঐ দুটি ওয়ার্ডের ভার্থখলা, রেলওয়ে স্টেশন ও বাসস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় অনেক গুলো টায়াওেংষধস দোকান রয়েছেন। গত রোববার রুটিন অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম এসব এলাকার ডেঙ্গ জীবাণু শনাক্তের লক্ষ্যে কয়েকটি টায়ার ও স্যানেটারী দোকান থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে পরীক্ষায় এডিস মশার জীবাণু শনাক্ত হয়। গত কয়েক বছর টায়ার টিউবের দোকানে এডিসের লার্ভা মিললেও এবার এর ব্যতিক্রম হয়েছে। এবছর অধিকাংশ টায়ার টিউবের দোকানে লার্ভা পাওয়া যায়নি। তবে টানা ৩ বছর ধরে পাওয়ার পর এবারও স্যানেটারী টাইলসের কয়েকটি দোকানে এডিস মশার লার্ভা মিলেছে। মঙ্গলবার ভার্থখলা এলাকার কয়েকটি স্যানেটারী ও টাইলসের দোকানে অভিযান চালিয়ে ৩টি দোকানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। সে সব লার্ভা ধ্বংস করা হয়েছে। সকল দোকানদেরকে বাইরে রাখা স্যানিটারী জিনিস ঘরের ভিতরে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তথ্য সূত্রে জানাযায়, সিলেটে ২০১৯ সালে প্লাস্টিক ড্রামে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, সেখানে ২০২২ সালে মৌসুম পূর্ব জরিপে লার্ভার পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জলমগ্ন ফ্লোরে লার্ভা বেড়ে ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, প্লাস্টিক বালতিতে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ এবং পানির ট্যাংকে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালে চেয়ে এবার ডেঙ্গ প্রকোপ বেশি হওয়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছিল ২০১৯ সালে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *