সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী:
ফেনীর সাথে পাশ্ববর্তি দেশ ভারতের প্রায় ১৩১কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। দুপারের বাসিন্দাদের মধ্যেও নিবিড় যোগাযোগ আছে দীর্ঘদিনের। রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও সংখ্যতা আছে। এই সীমান্তের প্রায় ৪০টি পয়েন্ট দিয়ে ফেনীতে আসছে মাদক, পোশাক সামগ্রী, প্রসাধনি পন্য, গরু, ঔষধ ও ইলেক্টনিক্স সামগ্রী । এতে প্রতি বছর গড়ে ফেনী সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হচ্ছে শতকোটি ডলার। চোরাচালান ও মুদ্রা পাচার বন্ধে দ্রুত সীমান্ত সুরক্ষার দাবি স্থানীয়দের।
সরজমিনে জানা যায়, ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের জের কাছাড়, ধর্মপুর ইউনিয়নের জোয়ার কাছাড়, টিভি হাসাপাতাল মোড়, আমতলি, ফুলগাজী সদরের পূর্ব দেবপুর, গাবতলা, মনতলা, মুন্সিরহাট ইউনিয়নের পৈথারা, শ্রীপুর, কামাল্লা, জামমুড়া, আমজাদহাট ইউনিয়নের ফেনা পুষ্করনি, রিশ্বমূখ, পরশুরাম পৌর এলাকার বিলোনিয়া, রাশপদুয়া, মজুমদার হাট, মির্জানগর ইউনিয়নের আশ্রাফনগর, বীরচন্দ্র নগর, পশ্চিম সাহেব নগর, মেলাঘর, মহিষ পুস্করনি, মধুগ্রাম, রাঙামাটিয়া, বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের উত্তর কেতরাঙা, উত্তর গুথুমা, বটতলা, ছাগলনাইয়া পৌর এলাকার পুর্ব ছাগলনাইয়া, বাঁশপাড়া, শুভপুর ইউনিয়নের চম্পকনগর, ছয় ঘরিয়া, জগন্নাথ সোনাপুর, দারোগার হাট, মাহামায়া ইউনিয়নের জয়ন্তিনগর, সত্যনগর, রাধানগর ইউনিয়নের বর্ডর বাজার মোকামিয়া, ঘোপাল ইউনিয়নের পশ্চিম জয়পুর, দক্ষিণ মন্দিয়া ও দক্ষিণ কহুমাসহ ৪০টি সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত চোরাচালান আসছে।
এসব অঞ্চলের স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের একিমপুর সোনামুড়া গোবিন্দপুর হরিপুর শ্রীপুর দুর্গাপুর বিলোনিয়া এবং মতাই এলাকার চোরাকারবারীদের সাথে সংখ্যা গড়ে উঠেছে অনেক আগেই।
পরশুরামের ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন জানান, জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতায় চোরাকারবারীরা স্থানীয় নিম্মবিত্ত পরিবারের লোকদের সাহায্যে খুব সহজেই পাচার করে মাদক, পোশাক সামগ্রী, প্রসাধনি পন্য, গরু, ঔষধ ও ইলেক্টনিক্স সামগ্রী। বিজিবিসহ স্থানীয় প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে নির্ভিগ্নে মালামাল পাচার করছে। বিনিময়ে চোরাকারবারীরা ভারতে নগদ ডলার, রুপি ও টাকা পাচার করছে। ফেনী সীমান্ত দিয়ে আসা মাদকসহ অন্যান্য মালামাল নোয়াখালী, লক্ষীপুর ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা সরবরাহ হচ্ছে। তিনি আরো বলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দূর্বলতা রয়েছে যার কারনে এখানে চোরাচালান বন্ধ হচ্ছেনা।
ফুলগাজীর স্থানীয় সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম জানান, চোরাচালানের কারনে দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশ। মাদকের কারনে যুবসমাজ ধংস হচ্ছে ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে প্রতিবছর গড়ে শতকোটি ডলার মুদ্রা পাচার হচ্ছে। এখনি পুরো সীমান্ত সুরক্ষিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সৎ, দেশপ্রেমিক ও দায়ীত্বশীল হতে হবে।
সীমান্তবর্তি পরশুরাম থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, পরশুরামের তিন দিকেই ভারতের সীমান্ত। চোরাচালান এখানকার স্থানীয়দের সামাজিক ব্যাধিতে রুপ নিয়েছে। গত এক বছরে প্রায় তিনকোটি টাকার মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান জব্দ করা হয়েছে।
ছাগলনাইয়া থানার ওসি শহীদুল ইসলাম জানান, সীমান্তের সাথে ছাগলনাইয়ার প্রায় বিশটি গ্রাম । আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে সীমান্ত চোরাচালান ঠেকানো। গত ছয় মাসে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের চোরাচালান জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মাদক, পোশাক ও প্রসাধনি সামগ্রী । এসব উদ্ধারের ঘটনায় ৮৯টি মামলা হয়েছে এবং ১৩২জন চোরাকারবারি আটক হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় জনগন ও জনপ্রতিনিধিরা সচেতন হলে সহজেই চোরাচালান ঠেকানো সম্ভব।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান শরীফ বলেন, দপ্তরের নিজস্ব জনবল দিয়েই নিয়মিত অভিযান ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে কাজ করছি। আমরা সীমিত সক্ষমতার মধ্যেই কাজ করছি। আমাদের সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন দিতে হবে। লজিষ্টিক সাপোর্ট যেমন অস্ত্র, যানবাহন, প্রযুক্তিগত সরঞ্জামাধি দিতে হবে এবং জনবল বৃদ্ধি করতে হবে।
বিজিবি ৪ ব্যটালিয়ন ফেনীর সিও একেএম আরিফুল ইসলাম বলেন, ভারতের সাথে ফেনীর প্রায় ১৩১ কিঃমিঃ সীমান্ত রয়েছে। পুরো সীমান্তে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০৩কিঃমিঃ বিজিবি ৪ব্যটালিয়ন ফেনী ও ২৮কিঃমিঃ বিজিবি ১০ব্যটালিয়ন কুমিল্লার দায়ীত্বে রয়েছে। বিজিবির ৪ব্যটালিয়ন ১৭টি ও ১০ব্যটালিয়ন ৬টি ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জনবল দিয়েই সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করছে। মুদ্রা ও চোরাচালান বন্ধে বিজিবি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে। ১জানুয়ারী থেকে ৩১মে পর্যন্ত বিজিবি ৪ব্যটালিয়ন প্রায় তিন কোটি ১৩লক্ষ টাকা চোরাচালান জব্দ করেছে । এসব ঘটনায় ২৫৬টি মামলা হয়েছে। ৩৭জন চোরাকারবারি গ্রেপ্তার হয়েছে এবং ১৬জন আসামী পলাতক আছে। তিনি আরো বলেন, সীমান্তে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ পেশাদারীত্বের সাথে কাজ করছে বিজিবি।