দাগনভূঞায় পোলট্রি খামারের বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

নেই পরিবেশ ছাড়পত্র ও ট্রেড লাইসেন্স
ফেনী :
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে তাহসিন পোলট্রি খামারের বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তীব্র দুর্গন্ধে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নাম সর্বস্ব এই খামারের নেই পরিবেশ ছাড়পত্র এবং ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স ।
এলাকাবাসী বলেন, ২০২১ সালে সোনাপুর গ্রামে ফসিমিয়া বাড়ীর দক্ষিণ পাশে ঘনবসতিপূর্ন স্থানে তাহসিন পোলট্রি খামার নামে একটি খামার স্থাপন করে খামারী আমির হোসেন মিঠু। মিঠু ফিসমিয়া বাড়ীর আবুল খায়েরের ছেলে। এই খামারে চার হাজার মুরগি রয়েছে। এ ছাড়া এই অঞ্চলে আরো কয়েকটি খামার গড়ে উঠেছে ।
সরজমিনে দেখা গেছে, চতুর্দিকে জনবসতি । বাড়ীর পাশে একটি বড় খামার। খামারের মুরগির বিষ্ঠা কারখানার পাশে একটি উন্মুক্ত ডোবায় রাখা হয়। এতে দুর্গন্ধে আশপাশের মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। কারখানার আশপাশের রাস্তায় চলতে হয় দুর্গন্ধের মধ্য দিয়ে। ফলে ওই সব সড়কেও দুর্গন্ধের মধ্য দিয়ে চলতে হয় সাধারণ মানুষকে।
খামারের কর্মচারি বাচ্ছিন মার্মা বলেন, ওই খামারে চার হাজার মুরগি আছে। এসব মুরগির বিষ্ঠা পেছনে একটি ডোবায় রাখা হয়। সাবেক ইউপি সদস্য ও পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য মোঃ শামীম বলেন খামার ঘেঁষেই জনবসতি। বিষ্ঠার দুর্গন্ধে থাকা যায় না। রোদ উঠলে বাতাসে গন্ধ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। খামার করার পর থেকে মালিককে বারবার দুর্গন্ধ কমানোর কথা বলা হয়েছে। সে কোনভাবে গন্ধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা। তাকে সর্বশেষ ১৬মে দুমাসের সময় দেয়া হয়েছে।
খামার সংলগ্ন ওসিমিয়া বাড়ীর শামছুল আলম বলেন দুর্গন্ধে বমি আসে । দরজা জানালা খোলা যায় না। তৃপ্তি নিয়ে খাওয়াদাওয়া করা যায় না। এলাকার শিশুরা দূষণ জনিত নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তার স্ত্রী বলেন, গন্ধে ঘুমাতেও কষ্ট হয় । শিশুদের ও বয়স্কদের বেশি কষ্ট হয়। বার বার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার সম্মিলনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম নান্টু বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সরকারের আইন করেছে এবং দ্রুত সময়ে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পরিবেশ বিষয়ক বিশেষ আদালত গঠন করা হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন উদাসীন হওয়ায় পরিবেশ দুষন ঠেকানো যাচ্ছেনা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গোলাম মাওলা বলেন, পোলট্রি বর্জ্যের কণা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে ফুসফুসের রোগের কারণ হতে পারে। এর থেকে শ্বাসকষ্ট এবং হার্টের ক্ষতি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এসব খামার সংলগ্ন এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকে।
জায়লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মিলন বলেন, দুর্গন্ধে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সোনাপুরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ। আর লাভবান হচ্ছেন ফার্মের মালিক। পরিবেশ অধিদপ্তর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে। আইনের দুর্বলতার কারনে পরিষদের পক্ষ ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।
খামার মালিক আমির হোসেন তাঁর খামার থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, গন্ধ যাতে খামারের বাইরে না যায়, সে ডোবায় ক্যামিকেল ছিটানো হয়। বায়োগ্যাস প্লান্ট করার পরিকল্পনা আছে। তা হলে আর দুর্গন্ধ থাকবেনা।
ফেনী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, পরিবেশ ছাড়্পত্র ছাড়া খামার চালু করা দন্ডনীয় অপরাধ ।তাহসিন পোলট্রি খামার পরিবেশ দূষণ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশদূষণ কমাতে ছোট খামারিদের বাধ্যতামূলকভাবে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করার জন্য বলা হচ্ছে।
Related News

সোনাগাজীতে পশুর চারণভূমিতে ভূমিদস্যুদের থাবা : বিপাকে খামারীরা
ফেনী: সোনাগাজী উপজেলার উপকুলীয় এলাকায় গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে খামার মালিকগণ। একসময় উপকুলীয় অঞ্চলেRead More

১৯বছর ভিটেমাটি ছাড়া গনধর্ষনের শিকার কিশোরীর পরিবার
সোনাগাজী(ফেনী): ২০০৩ সালের ১৩ মে রাত অনুমান ২টা। স্বামী ও ২ সন্তান নিয়ে নিজ বসতRead More