চান্দিনায় আ.লীগের মিছিলে গুলিবর্ষণ : এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আটক

কুমিল্লা:
কুমিল্লার চান্দিনায় আওয়ামী লীগ এবং এলডিপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদকে থানায় নেওয়া হয়েছে।

কুমিল্লার চান্দিনা ডিগ্রী কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় সোমবার (৯মে) দুপুর ৩টায় আওয়ামী লীগ ও এলডিপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ চলাকালে এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহম্মেদের গাড়ি সমাবেশস্থলে আসার মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী গাড়ি লক্ষ্য করে ধাওয়া করে।

এসময় গাড়িতে অবস্থানরত এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহম্মেদ গাড়ির ভেতর থেকে জানালা দিয়ে নিজের ব্যবহার করা পিস্তল থেকে ২ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হন।

ঘটনার পরপরই পুলিশ ড. রেদোয়ান আহাম্মদকে তার ব্যবহার করা পিস্তলসহ চান্দিনা থানায় পুলিশ হেফাজতে নেন।

এদিকে দু’জন গুলিবিদ্ধ ঘটনায় চান্দিনার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চান্দিনা থানার সামনে বিক্ষোভ করছে।

গুলিবিদ্ধরা হলেন, চান্দিনার নুরুল ইসলামের ছেলে নাজমুল ও চান্দিনা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে জনি সরকার।

ড. রেদোয়ান আহমদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান। তবে তিনি তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি।

প্রত্যক্ষদর্শী শরীফ জানান, চান্দিনা পৌরসভা রোডের রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২ মমতাজ আহমেদ ভবন এর ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিলো।

দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসের সামনে আসার পর কলেজ গেইটে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতারা রেদোয়ান আহমেদ এর গাড়ি থামিয়ে কথা বলে। কিছুক্ষণ পর রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি ঘুরে চলে যাওয়ার সময় স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই গাড়িতে তরমুজ দিয়ে ঢিল মারে। এসময় রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি থেকে পরপর দুইটি গুলি ছোড়ে।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সামিরুল খন্দকার রবি জানান, চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ছাত্রলীগ ঈদের পূর্ব থেকে আজ (৯ মে) ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করতে প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই মধ্যে পৌর এলডিপিও একই দিন একই স্থানে ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করে।

সোমবার দুপুর থেকে ছাত্রলীগের আয়োজনে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা যখন মমতাজ আহমেদ ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে ঠিক দুপুর আড়াইটায় দিকে রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি নিয়ে ওই ক্যাম্পাসের সামনে এসে গাড়ি থেকে ২টি গুলি করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে থানায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। রেদোয়ান আহমেদের গুলিতে জনি ও নাজমুল গুলিবিদ্ধ হয়। তাদেরকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কাজী আখলাকুর রহমান জুয়েল জানান, রেদোয়ান আহমেদ রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর অমানবিকভাবে গুলি চালায়।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমেদ জানান, আমাদের পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম ছিলো। আমাকে প্রধান অতিথি করে চিঠির মাধ্যমে পৌর এলডিপি কার্যক্রম পরিচালনা করে।

এরই মধ্যে আমাদের প্রধান ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে প্রোগ্রাম করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। আমরা ক্যাম্পাস-২ মমতাজ আহমেদ ভবনে পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম করার কথা।

দুপুরে আমি ক্যাম্পাস-২ এর সামনে গেলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের লোকজন আমার গাড়িতে হামলা করে। আমি আত্মরক্ষার্থে আমার লাইসেন্স করা সর্টগানে গুলি চালাই। কার গায়ে গুলি লেগেছে আমি বলতে পারবো না। পরে আমি থানায় এসে আশ্রয় নেই।

সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (দাউদকান্দি সার্কেল) মো. ফয়েজ ইকবাল জানান, পাবলিক রোষানলে রেদোয়ান আহমেদ থানায় আশ্রয় নিতে আসলে আমরা তাকে আটক করি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।

বিকেল পর্যন্ত উপজেলা সদরসহ থানা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এছাড়া ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *