ফেনী থেকে মফিজূর রহমান :
ফেনীর সোনাগাজীতে চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে বাতিল হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর সই মোহর নকল আনতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকদের হাতে হামলার শিকার হলেন রাশেদ ভূঞা নামে এক আইনজীবী এবং আবদুর রহিম রুবেল নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক। পৃথক ঘটনায় ওই প্রার্থীর মালিকীয় পোল্ট্রি খামার ও বাড়ি-ঘরে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রিটার্নিং ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এবং বিকাল ৩টায় মতিগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলত কান্দি গ্রামে সাবেক চেয়ারম্যান আমিন উদ্দিন দোলনের বাড়ি ও পোল্ট্রি খামারে পৃথক দুটি হামলার ঘটনা ঘটে। তবে হামলা জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান, ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতিকে মনোনীত প্রার্থী রবিউজ্জামান বাবু।
রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ ও দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী জানায়, আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় মতিগঞ্জ ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক চেয়ারম্যান আমিন উদ্দিন দোলন। ২৯ নভেম্বর যাচাই-বাছাইয়ের নির্ধারিত তারিখে তাঁর মনোনয়ন পত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং ও নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাইনুল হক। বাতিলের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন প্রার্থী আমিন উদ্দিন দোলনের বিরুদ্ধে একটি মামলায় ফেনী জেলা ও দায়ারা জজ কর্তৃক গ্রেফতারী পরোয়ানা, মালামাল ক্রোকের আদেশ রয়েছে। তাঁর প্রস্তাবকারী শেখ সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে।
এছাড়া প্রার্থীর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার অভিযোগও করা হয়। যাচাই-বাছাইয়ের সময় প্রার্থী ও তাঁর প্রস্তাবকারী সমর্থনকারী বা মনোনীত কোন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেননা। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাতিলকৃত মনোনয়ন পত্রের সই মোহর নকল আনার জন্য জেলা সদরে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক নিয়ে প্রার্থীর মনোনীত ফেনী জজ কোর্টের আইনজীবী রাশেদ ভূঞা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি আবেদন পত্র নিয়ে যান। রিটার্নিং কর্মকর্তার সাথে বসে কথা বলার সময় ক্ষমতাসীন দলের ১৫-২০জন নেতাকর্মী ওই আইনজীবীর উপর হামলা করে আবেদনপত্রটি ছিঁড়ে ফেলেন। তাঁকে মারতে মারতে টেনে হিঁছড়ে দ্বিতীয় তলার অফিস কক্ষ থেকে নীচে নামিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে।
এসময় আইনজীবীর উপর হামলার ছবি তোলার সময় দৈনিক আলোকিত দেশ পত্রিকার সোনাগাজী প্রতিনিধি আবদুর রহিম রুবেলকে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। এসময় তাঁর মুঠোফোনটি চিনিয়ে নেয়। অবশ্যই পরে ফোনে ধারণকৃত ভিডিও এবং ছবি ডিলিট করে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি ফেরৎ দেয়া হয়েছে।
বিকাল তিনটার দিকে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী রবিউজ্জামান বাবুর ২০-২৫জন কর্মী লাঠিসোঠা নিয়ে সাবেক ওই চেয়ারম্যানের দৌলতকান্দি গ্রামের বসতবাড়িতে এবং তাঁর মালিকীয় পোল্ট্রি খামারে ব্যপক হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। এতে তাঁর প্রাথমিকভাবে ২৫-৩০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করেছেন। উপজেলা নির্বাচন ও রির্টানিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাইনুল হক বলেন, বিধি মোতাবেক স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়েছে। তাঁর মনোনীত একজন আইনজীবী সই মোহর নকল কপির জন্য অফিসে এলে একদল দুর্বৃত্ত অতর্কিত হামলা করে। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনার জন্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নথি তলব করায় তিনি নথি নিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে রয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত চেয়ারম্যান আমিন উদ্দিন দোলন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ফেনীর পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি তিনি অবহিত করেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত আপীল শুনানীর নোটিস তিনি হাতে পেয়েছেন। আশা করছেন আপীল নিষ্পত্তির মাধ্যমে তিনি তাঁর প্রার্থীতা ফিরে পাবেন।
বর্তমান চেয়ারম্যান, উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি ও আ.লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী রবিউজ্জামান ও তাঁর সমর্থকেরা ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কাউকে পাননি। এসব বিয়য়ে লিখিত অভিযোগও পাননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্ধী, ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি প্রার্থী হলেও মঙ্গলবার সকালে তিনি মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
সোমবার ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতিকের প্রার্থী মো. আবদুল হকের প্রস্তাবকারীর বয়স ২৫ বছরের কম হওয়ায় মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়। আপীল নিষ্পত্তিতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিন উদ্দিন দোলনের মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘোষণা না হলে রবিউজ্জামান বাবু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।