সৈয়দ মনির, ফেনী :
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ফেনী নদী। নদীর দু’পাশে ১৫ থেকে ২০টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। যারা বিভিন্ন প্রয়োজনে নিয়মিত নদী পারাপার হন। বিশেষ করে ইউনিয়নের পুর্বঘোনা গ্রামের জনসাধারনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
গ্রামটির তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে ছোট ফেনী নদী। এই গ্রামের স্কুল-মাদ্রাসা ও কলেজগামীসহ হাজারও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন দড়ি টানা নৌকা দিয়ে পার হয়ে ফেনী সদর এলাকায় যাতায়াত করেন।
নদী পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এই নদী পার হওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। গ্রামবাসীর জন্য উপজেলা ও জেলা শহরে যাতায়াতের সহজ পথ হচ্ছে এটি। এই নদীর স্রোত বেশি হওয়ায় মাঝি দড়ি টেনে নৌকা বাইতে রাজি হয় না। ফলে ঝড়, বৃষ্টিতে এলাকাবাসীকে চরম কষ্ট পোহাতে হয়। এমনকি রাতে মাঝি না থাকায় নৌকা আরেক পাড়ে থাকে বলে পারাপারে ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রামবাসীকে। ফলে রাজাপুর বাজার হয়ে বিকল্প সড়ক দিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার ঘুরে বাড়ি যেতে হয়। এটি গ্রামবাসীর জন্য চরম কষ্টকর ও ভোগান্তির।
কিন্তু নদীতে সেতু না থাকায় নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা। সেতুর অভাবে এলাকার লোকজন আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত প্রায় । একটি মাত্র সেতু বদলে দিতে পারে দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন ও ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মানুষের জীবন এবং জীবিকা। দীর্ঘদিন স্থানীয়রা সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকার শিক্ষার্থী ও সাধারণ লোকজনের।
সরেজমিনে গিয়ে নদী পার হতে আসা ৫৫ বছর বয়সী আমেনা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ওপার থেকে কখন নৌকা আসবে সেই আশায় আধা ঘণ্টা ধরে বসে আছি। আমাদের তো অসুখ হলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালেও যাইতে পারি না। সেতুটি কবে বানাবে সরকার। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
বিরলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার জানান, বিদ্যালয়ে যাবার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে পারাপারের জন্য নদীর পাড়ে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে । বর্ষার সময় নৌকাতে প্রায় দিনই বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। ভিজে কাপড় নিয়েই ক্লাস করতে হয়েছে বলেও এ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনের আগে অনেকেই সেতুর তৈরি করে দেওয়ার কথা বলে। বিজয় হওয়ার পর আর কেউ খোঁজ রাখে না। ফসল আবাদ করে পারাপারের অভাবে সঠিক সময় শহরের হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারি না। অসুস্থ হলে দ্রুত সময়ে হাসপাতালেও নেওয়া যায় না। রাতের বেলা পড়তে হয় বড় বিপদে। হয়ে যায় বড় দুর্ঘটনাও।
এ ব্যাপারে ফেনী-৩ (দাগনভূঞা-সোনাগাজী) আসনের সংসদ সদস্য লে: জেনারেল (অব:) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, আমি সব সময় এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। বিষয়টি সম্পর্কে খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষের দুর্ভোগ লাগবে কাজ করবেন বলে জানান তিনি।