ঝালকাঠিতে আবাসিক এলাকায় কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের পায়তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঝালকাঠিতে আবাসিক এলাকায় কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের পায়তারা করছে একটি অসাধু মহল। বাংলাদেশ সরকারসহ সারা বিশ্ব যখন পরিবেশ ও জলবায়ুর বিরুপ প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচার জন্য নানা রকম পরিবেশ বান্ধব পরিকল্পনা গ্রহন করছে ঠিক সেই মুহুর্তে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইটভাটা নতুনভাবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য হুমকি স্বরুপ এবং একটি অশনি সংকেত।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার ৬নং বাসন্ডা ইউনিয়নের লেস প্রতাপ গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাফিজিয়া ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, বায়তুন নূর জামে মসজিদ,জয়সি আজিজিয়া দাখিল মাদ্রাসা, চৌপালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অসংখ্য বসতবাড়ির আধা কিলোমিটার দূরত্ব মধ্যবর্তী স্থানে ফলজ, বনজ বাগান, আবাদী কৃষি জমি ও মৎস্য খামার ধ্বংস করে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু দিয়ে ভরাট করে “আরআরএস’’ নামে ইটভাটা নির্মাণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল।

পরিবেশবিদরা বলছেন, “ইটভাটার জন্য অবাধে দখল হচ্ছে- ফসলি জমি। বাসন্ডা ইউনিয়নের লেস প্রতাপ গ্রামে ফসলি জমি নষ্ট করে ইটভাটা তৈরির পাঁয়তারা করছে একটি প্রভাবশালী মহল। তাই বিস্তীর্ণ এই ফসলের ক্ষেতে হয়তো আর কখনই ফসল ফলবে না। এভাবে একের পর এক কৃষি জমি নষ্ট হতে থাকলে হুমকিতে পড়তে পারে খাদ্য নিরাপত্তা। অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা তৈরি হলে ভাটার ধোঁয়ায় বিবর্ণ হবে গোটা এলাকা। এতে জনসাধারণের জীবন পড়ে যাবে হুমকির মুখে।”

তাঁরা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের ইটভাটা সংক্রান্ত গেজেটে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, কৃষি জমি ভরাট করে ইটভাটা করা যাবে না, এক কিলোমিটারের মধ্যে স্কুল কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাট বাজার থাকলে ইটভাটা গড়ে তোলা যাবে না। কিন্তু এই আইনকে পাশ কাটিয়ে উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে ইটভাটা নির্মাণ অনুমোদনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে একটি অপশক্তি।’

অবৈধ এই ভাটা তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ করতে মুক্তিযোদ্ধা ও সুশীল সমাজের পক্ষ হতে শতাধিক লোক একত্রিত হয়ে বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর একটি লিখিত আবেদন পত্র জমা দেন। উক্ত আবেদন ও সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এরকম অপরিকল্পিত ও নিয়মনীতি বহির্ভূত একটি ভাটা নির্মাণের পায়তারা চালাচ্ছে।

এ নিয়ে এলাকাবাসী ও ইটভাটা নির্মাণকারী পক্ষের সাথে যেকোন সময় সংঘর্ষ বেধে যেতে পারে বলে আবেদন পত্রে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও গ্রামের কৃষককুল, মৎস্য চাষীরা ও স্কুল কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে এই ভয়াল কালো ধোঁয়া ও পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা এবং একটি সুস্থ সুন্দর পরিবেশে বসবাস করতে পারে তার সুব্যবস্থা বজায় রাখার কথাও আবেদনে উল্লেখ করেন এলাকাবাসী।

আবেদনকারীদের একজন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ আউয়াল মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, “এ ধরনের ইটভাটা এই এলাকায় নির্মাণ করা হলে এলাকাবাসী নানা রকম হুমকির মুখে পড়বে। ফসলী জমি ও পরিবেশ নষ্ট হবে, এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে। আবেদনে সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোরালো দাবী জানানো হয়, যাতে ইটভাটা আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠতে না পারে।”

৬ নং বাসন্ডা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন মল্লিকের নিকট এলাকাবাসী “আরআরএস” ইট ভাটার ট্রেড লাইসেন্স ও এন.ও.সি. সরকারী গেজেট লঙ্গন করে যাতে দেয়া না হয় সেই মর্মে লিখিত ও মৌখিক আবেদন করা হলেও রহস্যজনক কারনে তিনি ট্রেড লাইসেন্স ও এন.ও.সি. প্রদান করেছেন বলে একটি সূত্র জানায়।

এ ব্যাপারে ৬ নং বাসন্ডা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন মল্লিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজ্জাক নামের এক ব্যক্তিকে লেস-প্রতাব গ্রামে ইটভাটার ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জানান, ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার পরে আমার কাছে এলাকাবাসী লিখিত একটি অভিযোগ দিয়েছেন। একই অভিযোগ অন্যান্য উপরস্থ কর্মকর্তাদের কাছেও দিয়েছেন। তারা বিষয়টি দেখবেন।

এবিষয়ে কথা হয় আব্দুর রাজ্জাকের সাথে তিনি জানান, “ইটভাটা তৈরির জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে R.R.S নামক একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছি। এলাকার বেকার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরির কথা চিন্তা করে আমি ,রিয়াজ খান ও শহিদুল গাজী তিন জন শেয়ারে ইটভাটা নির্মাণ করতে চাচ্ছি। এবিষয়ে আমরা স্থানীয় লোকজনের সাথে বৈঠক করলে তারাও আমাদের সম্মতি দিয়েছেন। আশেপাশে ৯০০ মিনিটের মধ্যে লেস- প্রতাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এছাড়া বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো ১,১০০ মিটার দূরত্বে।”

ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুঠোফোনে জানান, ইটভাটা সংক্রান্ত বিষয়ে আমি কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া এবিষয়ে আমাদের কাজ থেকে কোন অনুমতি নেয়নি। সরকারি নিয়ম নীতির বাইরে কোন ইটভাটা তৈরি হতে দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো.জোহর আলী মুঠোফোনে জানান, ‘আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি । অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নতুন কোন ইটভাটা তৈরির অনুমতি দেয়া হয়নি। সরকারি আইন বহির্ভূত নতুন করে কোনো ইটভাটা তৈরি হতে দেয়া হবে না।’

বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. তোতা মিয়া জানান, এবিষয়ে আমাদের কাছে লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে দেখা যায় ওখানে ইটভাটা তৈরি করতে দেয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *