সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী খুব আন্তরিক- ফেনীতে রানা দাশ গুপ্ত

ফেনী প্রতিনিধি :
ফেনীর চারটি মন্দির ও ১৫টি দোকান পাটে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার স্থল পরিদর্শন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত ও কেন্দ্রিয় পূজা উৎযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দ।

রোববার রাতে পরিদর্শন শেষে রানা দাশ বলেন, বর্তমানে দেশের মধ্যে পকিস্তান, সরকারের মধ্যে তালেবান ও প্রশাসনের মধ্যে খন্দকার মোস্তারা রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর যা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন তা বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী খুব আন্তরিক।

কিন্ত সরেজমিনে তা বাস্তবায়নে যাদের দায়িত্বে রয়েছেন এতে তাদের ভুমিকা রহস্যজনক। তিনি বলেন ইতিমধ্যে সংখ্যালঘুদের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রির পদত্যাগের দাবী উঠেছে। আমরা কিন্তু কেন্দ্রিয়ভাবে তা এখনো সমর্থন করিনি। আগামী ২৩ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত গন অনশন কর্মসূচি পালন করে আমরা সরকারকে জানান দিতে চাই আমাদের উপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। না হলে সংখ্যালঘুরা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবে।

শনিবার রাতে ফেনীর বিভিন্ন মন্দির ও দোকালে হামলা লুটপাটের ঘটনায় মডেল থানায় রোববার রাতে দুটি মামলা হয়েছে। ফেনী মডেল থানার দুজন উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন।

একটি মামলায় ২০০ থেকে ২৫০ জন এবং অপর একটি মামলায় ১০০ থেকে ১৫০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এদিকে শনিবারের ঘটনার পর আতঙ্কে আছে ফেনী জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।

ফেনী শহরের মন্দিরগুলোতে পুলিশের পাহারা রয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহল। শহরের বড় বাজারের কালি মন্দির ও শহরতলির ফেনী-সোনাগাজী সড়কের কালীপাল গাজীগঞ্জ মহা প্রভুর আশ্রম ও দুর্গামন্দিরে পড়ে আছে ধ্বংস চিহ্ন। কালি মন্দিরের মূল ঘরে পড়ে আছে প্রতিমার ভাঙ্গা অংশ।

মহা প্রভুর আশ্রম মন্দিরে ঢোকার পথের একপাশে সদ্য আগুনে পোড়া একটি গাড়ির ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। গাড়ির পাশে গাছের কিছু ডালপালা পুড়ে গেছে। মূল মন্দিরের ফটক ভাঙার যে চেষ্টা করা হয়েছে, তা স্পষ্ট চিহ্ন বহন করছে। মন্দিরের বাইরের সিসি ক্যামেরাগুলো ভেঙে ফেলা হয়। দুটি জানালা আংশিক ভাঙা হয়। প্লাস্টিকের কিছু চেয়ার ভাঙচুর করা হয়েছে। রাত থেকেই মন্দির প্রাঙ্গণে পুলিশি পাহারা চলছে।

দুর্বৃত্তরা মন্দিরের দরজা-জানালা ও আসবাব ভাঙচুর করে এবং মন্দিরের সামনে রাখা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজনকে এগিয়ে আসতে দেখে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।

শহরের ট্রাংক রোড ও তাকিয়া রোডের মোড়ে শ্রী শ্রী কালীমন্দিরের সামনে পুলিশের পাহারা রয়েছে। ফেনীর বড় বাজারের কালীমন্দির, জগন্নতবাড়ী মন্দির, বাঁশপাড়া মন্দিরসহ সব মন্দিরের সামনেই পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে।

শহেরর গোপালপট্টির সূর্য পালের খাদ্যশস্যের আড়তে ঢুকে দুর্বৃত্তরা ক্যাশ বাক্স ভেঙ্গে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ওই আড়তের মালিক সূর্য পালের ছেলে বিশংকর পাল অভিযোগ করেন, টাকা ছাড়াও দুর্বৃত্তরা তাঁদের আড়ত থেকে একটি ওজন পরিমাপের যন্ত্র ও একটি বস্তা সেলাইয়ের যন্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে।

শহরের তাকিয়া রোডে ছয়টি হিন্দু দোকান দোকানের শাটার ভেঙ্গেপেলা হয়েছে অনেক দোকানের শাটার ভেঙে বেশ কিছু মালামাল বাইরে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। একই সাথে দোকানের ক্যাশ বাক্সে থাকা প্রায় ৫লাখ টাকা লুট করে নিয়ে ক্যাশ বাক্সটি বাইরে ফেলে দেওয়া হয়।

দোকান ঘরগুলোর সামনেই পোড়া ছাই পড়ে রয়েছে। তার পাশেই স্বদেশ পাল, রেনু চন্দ্র পাল, বিমল পাল, সঞ্জয় দাসের দোকানের শাটারও ভাঙা। এসব দোকানের কিছু মালপত্র তছনছ করা।

একই সড়কে পলাশ ট্রেডার্স, শিবাস চন্দ্র দাস, টিপু দাস, বনরাজ দাস, সৌরভ দাস, দিপন দাস, দুলাল দাস, সাধন দাস, সতীশ দাস, কৃষ্ণ লাল সাহার দোকানসহ ১০টি শুঁটকির দোকানের শাটার ভাঙচুর করা হয়।

কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে মন্দির-বসতবাড়িতে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে ফেনীতে পূজা উদ্যাপন পরিষদের প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটে।

এদিকে ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান, র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল এ এস এম ইউছুফ, পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী, ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম মিয়াজী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত,যুগ্ন সম্পাদক মন্দ্রি কুমার নাথ,কেন্দ্রিয় পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন দত্ত, সাধারন সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী। কর্মকর্তারা এসব ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওয়াত আনা হবে।

ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন বলেন, শনিবারের ঘটনায় করা দুই মামলায় প্রায় ৪০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আসামি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।

ফেনীতে মন্দিরের উপর দফায় দফায় হামলার নেতৃত্ব ও মূলপরিকল্পনা কারী ফেনী সরকারী কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র তৌসিফ মাহমুদ লাবিব (২২)কে আটক করেছে র‌্যাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *