জাতীয় পার্টির এমপিরা সংসদে কাদের মির্জার বিচার চাইলেন

নোয়াখালী প্রতিনিধি
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো.সাইফুল ইসলাম স্বপনকে (৫৯) নির্মম নির্যাতনরে বর্ণনা তুলে ধরে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার বিচার চেয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।

বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনী দিনে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা কাদের মির্জা বিচার দাবি করেন।

তার বক্তব্য হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো, মাননীয় স্পিকার আমরা আইনের ওপর কোন কথা বলিনা। আমরা বিগত নির্বাচনে অনেক গুলো আসনে আওয়ামীলীগের সাথে আমাদের সুসস্পর্কের স্বার্থে বা সুসম্পর্ক রাখার নিমিত্তে আমরা অনেক গুলো আসনে নির্বাচন করিনি। আমাদের এ সুসম্পর্ক যেন সব সময় সঠিক থাকে এমন দৃষ্টি আমাদের সব সময় ছিল। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবিত থাকা অবস্থায় বলে ছিলেন তোমরা এ সম্পর্কটা রক্ষা কর। কিন্তু মাননীয় স্পিকার আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে,আমাদের নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক তিনি অত্যন্ত নিরীহ মানুষ। যিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন। তিনি এ আসনটি ছেড়ে দিয়ে ছিলেন আমাদের কথার ওপরে। সেখানে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেব নির্বাচন করেছেন।
রাঙ্গা বলেন, কিন্তু ৮তারিখ দুপুর আড়াইটার দিকে একটি ভবন থেকে উনাকে ৪০জন মানুষ উনার ওপর আক্রমন করেছে। উনাকে ধরে নিয়ে গেছে এবং পৌরসভার তৃতীয় তলায় উনাকে প্রচন্ড ভাবে হাঁতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে। পা থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত থেতলে দেওয়া হয়েছে, হাড় ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসাও তারা করতে দেবেনা। এ ব্যবস্থা ও তারা করে ছিল। যে ভাবেই হোক আমরা ঢাকা থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ করে তাকে উদ্ধার করে ছিলাম এবং বাসায় টিট্রমেন্টের পরে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়ে ছিল। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে উনার চিকিসার পরে ওখানেও কিছু সন্ত্রাসী ঘোরাফেরা করছে তাকে আক্রমন করে হত্যা করার পরিকল্পনা নিয়ে। তখন সেখান থেকে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সে এখনও একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে মৃত্যুও সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

তিনি আরও বলেন, সেখানে আমরা মামলা দিয়ে ছিলাম। আমাদের মামলা গ্রহণ করা হয়নি। এ কাদের মির্জা বিভিন্নভাবে সারা বাংলাদেশে বিতর্কিত। তার ভাইয়ের (ওবায়দুল কাদের) কাছে কতটুকু বিতর্কিত আমি জানি না। উনার দলের কাছে কতটুকু বিতর্কিত আমি জানি না। কিন্তু কোম্পানীগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশে তিনি অবাঞ্ছিত মানুষে পরিণত হয়েছেন। তিনি কাদের মির্জা কখন, কাকে কী বলছেন, আমি জানি না। জানি তিনি একটি দলের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রধানমন্ত্রী সেই দলের সভাপতি। আমরাও বঙ্গবন্ধুকন্যা হিসাবে তাকে সম্মান করি। তিনি সবসময় ন্যায়বিচার করেন, আমরা তা-ই মনে করি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী না থাকার কারণে আমরা আপনার (স্পিকার) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ন্যায়বিচার ও তার সুচিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান করছি।

এ ছাড়াও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর বিশেষ আইনের মেয়াদ বাড়ানোর বিলের সংশোধনীর ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কোম্পানীগঞ্জে জাপা নেতার ওপর হামলার ঘটনায় বিচারের দাবি করেন জাপার আরেক সংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

উল্লেখ্য, এর আগে গত বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জাপা নেতা সাইফুল ইসলাম স্বপনকে বসুরহাট বাজারের কালামিয়া ম্যানশনের সামনে থেকে কাদের মির্জার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা তুলে নিয়ে যায়। এরপর রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পৌরসভা ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে তাকে আটকে রেখে মধ্য যুগীয় কায়দায় নির্মম নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেন তার ছেলে মইনুল ইসলাম শাওন।

শাওন আরও অভিযোগ করেন, তার বাবার সাথে থাকা টাকা, মোটরসাইকেল, মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এমনভাবে মারধর করা হয়েছে শুধু কোন রকম জানটা রাখছে। কোম্পানীগঞ্জে রাজনীতিতে মির্জার বিরুদ্ধে যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার জন্য বাবাকে চাপ দেয় মির্জা। তার প্রতিপক্ষরা যে সকল অনিয়ম করে নাই সেগুলো করছে বলে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলে। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুল লতিফ মেম্বারকে ডেকে নিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে হস্তান্তর করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *