দাউদকান্দিতে আশা জাগিয়েছে পুলিশের ফ্রি অক্সিজেন সেবা

দাউদকান্দি(কুমিল্লা)প্রতিনিধি
কুমিল্লার দাউদকান্দিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে ডাক্তার ও রোগীর স্বজনরা হিমশিম খাচ্ছেন।

করোনা চিকিৎসায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন শয্যা ১৭ থেকে ৩২ বেড করেও আক্রান্তদের জায়গা দিতে পারছে না। আসন সংকুলানে রোগী ভর্তি হতে না পেরে বাসা-বাড়িতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।

সেই সঙ্কট মূহুর্তে দাউদকান্দির করোনা আক্রান্ত অসহায় মানুষকে বাঁচাতে অক্সিজেন ব্যাংক খুলে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা ও ওষুধ সরবরাহ কার্যক্রম করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নিরাপদ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্টাতা সহকারী পুলিশ সুপার (দাউদকান্দি সার্কেল) জুয়েল রানার “এএসপি অক্সিজেন ব্যাংক” এবং “গৌরীপুর পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংক”।

ফেসবুকে কিংবা হটলাইনে অক্সিজেন সঙ্কটের খবর আসলেই দায়িত্ব পালনকারী স্বেচ্ছাসেবকরা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন করোনা আক্রান্তদের বাসা-বাড়িতে। শুধু অক্সিজেন সেবা নয়, চিকিৎসা পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় ওষুধসামগ্রী, মাস্ক বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। করোনার দুর্দিনে পুলিশের এই সেবা কার্যক্রম জেলাব্যাপী প্রশংশা কুড়িয়েছে। বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা কার্যক্রমে খুশি রোগীর স্বজন ও জেলা প্রশাসন।

গৌরীপুর বøাড ডোনার্স ক্লাব এর সদস্যদের পরিচালনায় ৮টি সিলিন্ডার নিয়ে শুরু করে ফ্রি পুলিশ অক্সিজেন সার্ভিসটি। “এএসপি অক্সিজেন ব্যাংক” এবং “গৌরীপুর পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংক” ৩৫টি সিলিন্ডারের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক করোনা রোগী ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিস পেয়ে সুস্থ্য হয়েছেন। তাদের মধ্যে উপজেলার কালাডুমুর এলাকার করোনা আক্রান্ত মোসাঃ রয়মান বেগম(৪৫) হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে বাড়ীতেই কোয়রেন্টাইনে ছিলেন। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তার ছেলে শরীফ হোসেন ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিসের হটলাইনে ফোন করেন। স্বেচ্ছাসেবকরা তার বাড়ীতে সিলিন্ডার পৌছে দেন। তিনি বলেন, আমার মায়ের শ^াসকষ্ট বেড়ে গেলে গৌরীপুরের এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সার্কেল এএসপি স্যারের ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিসের নাম্বারে ফোন করি। রাত ১১টার সময় মোটর সাইকেল দিয়ে দুইজন লোক আমার বাড়ীতে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে আমার মা এখন সুস্থ্য।

তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের আমজাদ হোসেনের মেয়ে সূচনা(২২), দাউদকান্দি উপজেলার মালিগাও ইউনিয়নের তালেছেও গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মাধ্যমে তার আত্মীয় ফ্রি অক্সিজেন সেবা পেয়েছেন। গত দশ দিনে প্রায় অর্ধশতাধিক লোকজন ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিস পেয়েছেন বলেন বøাড ডোনার্স ক্লাব গৌরীপুর এর সদস্য মোঃ এখলাস মুন্সি জানান। তিনি বলেন, সার্কেল স্যারের উদ্যোগে ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিসে আমাদের সংগঠনের ৪জন সদস্যসহ ৬জনকর্মী স্বেচ্ছাশ্রমে ২৪ঘন্টা এ সার্ভিসটি দিয়ে আসছি।

দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম শোভন বলেন, ঈদের পর এখানে আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছিলো। সরকারী হাসপাতলে বেড বাড়িয়েও জায়গা দিতে পারছিলাম না।

আসন সঙ্কটে বাধ্য হয়ে অনেকে বাসা-বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ঠিক সেই সঙ্কট মুহুর্তে পুলিশের ফ্রি অক্সিজেন ব্যাংক সেবা কার্যক্রমটি একটি মাইলফলক উদ্যোগ। এখন অবশ্য আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা কমেছে।

দাউদকান্দি নাগরিক ফোরামের আহবায়ক পরিবেশবিদ অধ্যাপক মতিন সৈকত বলেন, যে কোন দূর্যোগ দূঃসময়- দূঃসংবাদে সাধারণ মানুষের ভরসার কেন্দ্র পুলিশ।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি করোনার অতিমারিতে তারা পজিটিভ ভূমিকা রেখে জনগণকে সচেতনতার পাশাপাশি ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিস দিয়ে সত্যিকার অর্থে মানবতার কল্যাণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পুলিশ বিপদের বন্ধু এবং জনগনের প্রকৃত সেবক সেটা করোনা মহামারীতে আবারো প্রমান করলেন।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(দাউদকান্দি সার্কেল) মোঃ জুয়েল রানা বলেন, দ্রুততম সময়ে অক্সিজেন পৌছে দিতে আমাদের এই উদ্যোগ।

আমরা স্বেচ্ছাসেবীরা চাই আমাদের এলাকায় অক্সিজেন এর অভাবে কোন করোনা আক্রান্ত মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আমার আকুল আবেদন এই মহামারীতে তারা যেন গরীব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *