বাংলার দর্পন ডটকম :
বিএনপি প্রায় ২০ বছরের রাজত্বে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গেল না কেন? এর উত্তরটা তারা দেবেন না, কিন্তু আমরা দিতে পারি। ভারতের ভয়ে। বাইরে যতই ভারত বিরোধিতা করুন, ভারতকে তৈলাক্ত করতে তাদের জুড়ি নেই। যে কারণে, সুষমা স্বরাজের কাছে নালিশ করতে যান তিনবারের প্রধানমন্ত্রী! এখন তারা কার কাছে নালিশ করবেন?
ভারতের পাটকলগুলোর স্বার্থেই কি বিএনপি দেশের কয়েক লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করে এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী বন্ধ করে দেয়নি? গোটা দেশের বাজার উন্মুক্ত করে দেয়নি ভারতীয় পণ্যের জন্য? ক্ষমতার রাজনীতির স্বার্থে বিএনপি-জামায়াতের মুখে ভারত-বিদ্বেষ! ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ গোপনে বিড়লা, টাটা, আম্মানীদের মতো ভারতের বিগ বিজনেসের কাছে বিকিয়ে দেয়ার চুক্তি কি করেনি হাওয়া ভবন? আওয়ামী লীগের চাইতে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ফারাক্কা বাঁধ সমস্যা সমাধান করে ভারতের কাছ থেকে এক ফোঁটা পানি আনতে পারেনি বিএনপি সরকার।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে, দলের কিছু অংশের বিরধিতার পরও ভারত সফর করেন খালেদা এবং সেখানে ভাল সংবর্ধনাও পায়। সে সময় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এবং কংগ্রেস ও বিজেপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক করেন তিনি। খালেদার ভারত সফরের পর কৌশল পরিবর্তন করে বিএনপি ভারতের গুণগান করতে শুরু করে ।
১৯৯৭ সালে ‘ফারাক্কা পানি বন্থন’ চুক্তি এবং ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’কে বিএনপি নতজানু, দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ভারতের কাছে দেশ বিক্রি ও গোলামী চুক্তি বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। বিএনপি ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র বিরোধিতা ও মিথ্যা অপপ্রচার করতে গিয়ে এও বলেছিল ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে। যদিও এর পরে বিএনপি জামাত জোট দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে ২০০১ -২০০৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে এই ২ টি চুক্তি বাতিল তো দুরের কথা – কোন সংশোধনীর প্রস্তাবও দেয় নাই!
আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশ যতই অর্জন করুক বিএনপির প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তার একটি উদাহরণ দিই। ধরুন, ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে। এবং আওয়ামী জোট ক্ষমতায়। সবার ধারণা, পাকিস্তান আর ভারতই ফাইনালে খেলবে। কিন্তু দেখা গেল, ফাইনালে বাংলাদেশ চলে গেছে। আর গেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশে, বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তানের পতাকা বেশি উড়ছে। যেমন উড়েছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পতাকা। কী করে যেন, বাংলাদেশ পাঁচ রানে জিতে গেল। সারাদেশ মাতোয়ারা। প্রধানমন্ত্রী খেলোয়াড়দের গাড়ি-বাড়ি দেবেন বলে ঘোষণা করলেন। মির্জা ফখরুলের প্রতিক্রিয়া তখন এ রকম হবে- বাংলাদেশ জিতেছে, ভাল কথা। আমরা খুশি। তবে, আম্পায়ারিংয়ে ঘাটতি ছিল। তারা অন্যায়ভাবে পাকিস্তানের দু’জন ব্যাটসম্যানকে এলবিডব্লিউ দিয়েছে। না হলে ফল অন্যরকম হতো। আম্পায়ারিংয়ের এই ত্রুটি নির্ধারণ করতে না পারা আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা। বাংলাদেশের ব্যর্থতা।
Shafiqur Rahman Anu ভাইয়ের কাছে থেকে কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করলামঃ-
১৯. ভারতের ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেই বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে বিএনপি। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়লাভে বিএনপি দৃষ্টিকটু উচ্ছ্বাস, উল্লাস প্রকাশ করে। দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টি বিতরণ করে দলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির আচরণে মনে হয়েছে, ভারতে বিজেপি নয়, যেন ভারতীয় বিএনপি জিতেছে।
২০. বিজেপি সরকার গঠনের পর থেকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছে বিএনপি। বিজেপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের যোগাযোগের ভিত্তিতেই বিজেপি ও মোদি সরকারের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করে বিএনপি।
২১. কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা বললে বিএনপি আশাহত হয়।
২২. তাই এক সময় চরম ভারত বিরোধী দলটি এখন নতুন করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে। আর এরই অংশ হিসেবে বিএনপি নেতারা এখন ভারতের পক্ষে কথা বলতে শুরু করেছেন।
২৩. এককালের চরম ভারত বিরোধী দল বিএনপি ভারতের সংসদে ‘স্থল সীমান্ত চুক্তি’ পাস হওয়ার পর এটাকে ইতিবাচক বলে স্বাগত জানায়।
২৪. ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে এবং মোদীর সাথে সাক্ষাৎ করার তীব্র বাসনা প্রকাশ করে ভারতকে তোষণ করে এক সময় চরম ভারত বিরোধী বিএনপির নেতারা বক্তব্য দিতে থাকে ।
২৫. সম্প্রতি বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বিএনপির রাজনীতি ভারত বিরোধিতার রাজনীতি নয়। আর ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক আগেও ভাল ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ভাল থাকবে।
২৬. বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. মাহবুবুর রহমান বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ তাই সে দেশের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখতেই হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা সবসময়ই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। তবে বিভিন্ন কারণে তা হয়নি। আশা করি এখন আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। নরেন্দ্র মোদির ভারত সফরকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের মানুষের কাছে বহুল প্রত্যাশিত এ সফর।
২৭. ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘গণতন্ত্রের প্রবক্তা’ অভিহিত করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ। মোদিকে স্বাগত জানিয়ে হান্নান শাহ বলেন, মোদি তৃণমূল থেকে গণতান্ত্রিকভাবে উঠে এসে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
২৮. টানা অবরোধ কর্মসূচী চলাকালে ৭ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ খালেদাকে ফোন করেছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে ফলাও করে যে প্রচার করা হয় তাতে এ দলটির প্রতি নাখোশ হয় বিজেপি। পরবর্তীতে অমিত শাহর পক্ষ থেকে এ খবর ডাহা মিথ্যা বলে জানালে খালেদা ও বিএনপি রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়ে। খালেদা ও বিএনপির পক্ষ থেকে অমিত শাহকে নিয়ে এভাবে মিথ্যাচার করার বিষয়টিকে বিজেপি, নরেন্দ্র মোদির সরকার এবং ভারতবাসীরা ভালভাবে নেয়নি।
কিছু সত্যিকারের লাভের খতিয়ান দিচ্ছি Latiful Kabir ভাইএর কিছু মন্তব্য থেকে। দেখা যাক, উর্বর মাথার বিএনপি এসব বুঝে কি-না:-
১) ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি এক মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করেনি। অন্ততঃপক্ষে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করলে কয়েক বিলিয়ন ডলারের মতো অতিরিক্ত গার্মেণ্টস রপ্তানী হতো। এটাকে অর্থনীতির ভাষায় ‘লস্ট অপরচুনিটি’ বলে। এই গার্মেণ্টস এর অর্ডার নিশ্চয়ই ভারত পেয়েছিল। দেশে অনেক কল-কারখানা হতে পারতো। না হওয়ার কারণে কয়েক বিলিয়ন ডলারের পণ্য নিশ্চয়ই ভারত থেকে আমদানী করা হয়েছিল। তারমানে বিদ্যুত উৎপাদন না করার পুরো বেনিফিট পেয়েছিল ভারত। টাকার হিসাবে তা লক্ষ কোটির মতো।
২) ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার সময় শেখ হাসিনার সরকার খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিল। বিএনপি ক্ষমতায় এসে এক বছরের মাথায় আবার ২০ লক্ষ মে.টন ঘাটতি। সার এবং ডিজেলে সংকট সৃষ্টি করে এই ঘাটতি তৈরী করা হয়েছিল। ফলে ২০ থেকে ৩০ লক্ষ মে.টন খাদ্য ভারত থেকে আমদানী শুরু হলো। দেশে ঠিকমত সার, বিদ্যুত এবং ডিজেল না দেওয়ার বেনিফিট পেল ভারত। টাকার হিসাবে তা কয়েক লক্ষ কোটি টাকা। (এই হিসাবটি বের করা সহজ। খাদ্য আমদানীতে যে টাকা খরচ হতো সেটাই। পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত সনওয়ারি প্রতিবেদন দ্রষ্টব্য)
এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। আকলমন্দ কে লিয়ে ইশারা কাফি হায়।
বাংলাদেশে এক মেগাওয়াট কম বিদ্যুত উৎপাদনের বড় বেনিফিসিয়ারি হলো ভারত। তাহলে রামপালের বিরোধীদের/বি এন পি কে কি বলা হবে? দেশ-প্রেমিক অথব ভারতের দালাল? সখি তুমি কার :).
“”বিএনপি এখন বলছে তারা কোনদিন ভারত বিরোধিতা করেনি, এখনও করছে না, ভবিষ্যতেও করবে না।”” বিএনপি তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা মনে করছেন বিএনপির নীতিতে পরিবর্তন এসেছে। আমি মনে করি ঠেলায় পড়ে বাধ্য হচ্ছে। প্রথমত মোদির নির্বাচনের রেজাল্ট চূড়ান্তভাবে প্রকাশ হওয়ার আগে কেউ মালা হাতে দিল্লী দৌড়ে, কেউ ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের গেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফুল হাতে অপেক্ষা করেও ভগ্ন মন নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। দ্বিতীয়ত দেশাভ্যন্তরের রাজনীতিতে পেট্রোলবোমা ছুড়েও যখন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কাছে ব্যর্থ হতে হলো, তখন মোদির দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায়ইবা কি? বিএনপির এ অবস্থানেরই নাম ভারতের দালালি।
আওয়ামী লীগ তথা মুক্তিকামী বাংলাদেশের জনগণ ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ এ জন্য যে, ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আশ্রয়, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশেষ করে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ এ জন্যে যে, তিনি আমাদের সঙ্কটে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন হৃদয়ের সবটুকু উষ্ণতা নিয়ে। এরই নাম কৃতজ্ঞতা। আর বিএনপি যা করেছে তার নাম দালালি।
কৃতজ্ঞতাঃ-
জনকণ্ঠ
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী